জনগণ ভ্রমণ অব্যাহত রাখলে এবং স্বাস্থ্য পরামর্শগুলোকে অবহেলা করলে ইরানে লাখ লাখ মানুষ মারা যেতে পারে বলে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এমনটাই জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরা।
তেহরানের নাম করা শরিফ টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণার বরাত দিয়ে মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সাংবাদিক ডা. আফরুজ এসলামি এ সর্তক বার্তা দেন। আফরুজ এসলামি একজন চিকিৎসকও।
গবেষণার উদ্বৃতি দিয়ে ডা. আফরুজ ইরানের করোনা ভাইরাস সংক্রমণের তিন ধরনের পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেন।
আফরুজ এসলামি বলেন, যদি জনগণ এখনই ভালভাবে সহযোগিতা শুরু করে তবে এই প্রার্দুভাব শেষে ১ লাখ ২০ হাজার করোনা ভাইরাস আক্রান্ত এবং ১২ হাজারের মত মানুষকে মারা যেতে দেখবে ইরান। যদি মোটামুটি সহযোগিতা করে তবে আক্রান্তের সংখ্যা হবে ৩ লাখ এবং ১ লাখ ১০ হাজারের মতো মারা যাবে।
আফরুজ বলেন, কিন্তু জনগণ যদি কোন ধরনের নির্দেশনা অনুসরণ করতে ব্যর্থ হয় তবে এটি ইরানের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করে দেবে। ইতোমধ্যে ইরানের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চাপের মধ্যে আছে। যদি পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা না থাকে আক্রান্তের সংখ্যা ৪ মিলিয়ন (৪০ লাখ) ছাড়িয়ে যাবে এবং সাড়ে ৩ মিলিয়ন বা ৩৫ লাখ মানুষ মারা যাবে।
গবেষণার পদ্ধতি সম্পর্কে ব্যাখ্যা করেননি ডা. আফরুজ এসলামি। কিন্তু কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের কর্মকর্তারা এতদিন সংকটের তীব্রতা অস্বীকার করলেও এই প্রাণহানির আশঙ্কার কথা জানান তিনি।
এ পর্যন্ত কমপক্ষে ইরানের বর্তমান ও সাবেক ১২ জন রাজনৈতিক, উর্ধ্বতন কর্মকর্তা করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আরও অন্তত ১৩ জন কোয়ারেন্টাইনে অথবা চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ১ হাজার ১৭৮ জনসহ দেশটিতে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ১৬ হাজার।
মঙ্গলবার ইরানে ১৩৫ জনসহ করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ হাজারের মতো।
পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণের ওপর ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন।
দেশটির সুরক্ষা বাহিনীর পক্ষ থেকে বারবার সতর্কতা এবং আবেদনের বিষয়টি জনগণ উপেক্ষা করার পরে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ইরান সরকারের পক্ষ থেকে দেশটির জনগণকে ঘরে থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু অনেকে এই আহ্বান উপেক্ষা করেছে।
গত সোমবার (১৬ মার্চ) রাতে বিক্ষুব্ধ জনতা মাশহাদের ইমাম রেজা এবং কওম’র ফাতিমা মাসুমেহ মাজারের উঠোনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সেখানে লোকজন সপ্তাহে সাতদিন ২৪ ঘণ্টা মাজার স্পর্শ ও চুমু খেয়ে প্রার্থনা করে। উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা কয়েক সপ্তাহ ধরে এটি বন্ধ করতে শিয়া ধর্মগুরুদের নির্দেশ দিয়ে আসছিলেন।
সোমবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে মাজারগুলো বন্ধ রাখার ঘোষণা দিলে বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়।
পুলিশ পরে জড়ো হওয়া মানুষদের ছত্রভঙ্গ করে বলে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে জানানো হয়।
বিক্ষোভকে মাজারের ‘অপমান’ বলে অভিহিত করে ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ এবং কওমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো একটি বিবৃতি দেয়। সবাইকে জ্ঞান ও ধৈর্যের উপর নির্ভর করার আহ্বান জানান তারা।
মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে ইরানের মাজারগুলোতে আসা তীর্থযাত্রীরা এই অঞ্চলজুড়ে ভাইরাসের সংক্রমণে ভূমিকা রাখছে। এর আগে সৌদি আরবে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ভয়ে ইসলামের পবিত্রতম স্থান বন্ধ করে দিয়েছে।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসেবে পার্সিয়ান নতুন বছর উপলক্ষে ইরান পুলিশ দেশটির ঐতিহ্যবাহী অগ্নি উৎসব নিষিদ্ধ করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৬০৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২০
এমইউএম/ইউবি