মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার হু পরিচালক ডক্টর পুনাম ক্ষেত্রপাল সিং এসব কথা বলেন। বুধবার (১৮ মার্চ) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
হু জানিয়েছে, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও উত্তর কোরিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১১টি দেশের প্রায় সবগুলোতেই করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় খুব দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে এসব দেশের সরকারগুলোকে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের হু পরিচালক বলেন, এ অঞ্চলে দিন দিন আরও বেশি করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। আমাদের এ ভাইরাস মোকাবিলায় আরও জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে, এবং তা করতে হবে দ্রুত।
হু জানায়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ‘কিছু কিছু দেশ সামাজিক মেলামেশার মাধ্যমে বড় মাত্রায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণের দিকে এগিয়ে চলেছে’।
লাগাতার করোনা ভাইরাস আক্রান্ত নিশ্চিত হতে পরীক্ষা, আক্রান্তকে চিহ্নিত করা, চিকিৎসা প্রদান, কোয়ারেন্টাইন করা ও তারা কাদের সঙ্গে মিশেছে তা খুঁজে বের করার কাজ চালিয়ে যেতে হবে বলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে জোর পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
ক্ষেত্রপাল সিং বলেন, মানুষের মধ্যে সামাজিক মেলামেশা বন্ধ করতে হবে। এই ব্যাপারে আরও জোর দিতে হবে। এটি করতে পারলেই করোনার সংক্রমণ বহু মাত্রায় কমানো সম্ভব। আমাদের এই মুহূর্তেই কাজ শুরু করতে হবে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ অনেকগুলো দেশই অনেকদিন ধরে করোনা ভাইরাস ঠেকাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ বাস্তবায়নে গড়িমসি করে আসছিল। কিন্তু সম্প্রতি এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার হার বেড়ে চলায় তারা কিছু কিছু কঠোর পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে।
এ অঞ্চলে এখন পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় সবচেয়ে বেশি মাত্রায় করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে। কিন্তু বেশ অনেক মানুষ আক্রান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত তারা সামাজিক বিচ্ছিন্নতার ব্যাপারটিতে গা করেনি। এ দেশটিতে করোনা ছড়িয়ে পড়ার জায়গাটি ছিল এক তাবলীগ জামাত। ওই জামাতে প্রায় ১৬ হাজার মানুষ জমায়েত হয়েছিল। আর সেখান থেকেই করোনা ছড়িয়ে পড়ে।
এতদিনে এসে মালয়েশিয়া সীমান্ত বন্ধ ও সব ধরনের পর্যটক প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। বন্ধ করেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
ইন্দোনেশিয়াতেও করোনা ভাইরাস ছড়াচ্ছে। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ১৭২। সম্প্রতি দেশটির প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো এ ভাইরাস নিয়ে যাতে আতঙ্ক না ছড়ায় তাই হালনাগাদ তথ্য চাপা দিয়ে রাখার কথা স্বীকার করেছেন।
এদিকে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফেব্রুয়ারি মাসে করোনা ভাইরাসকে ‘চড় মারবেন’ বলে দায়িত্বজ্ঞানহীন মশকরাও করেন। কিন্তু এখন এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় সুদূরপ্রসারী কোয়ারেন্টাইনের মুখোমুখি দেশটি।
এদিকে মিয়ানমার ও লাওসে এখন পর্যন্ত কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়নি বলে জানানো হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা এ ধরনের দাবিকে সন্দেহ করছে।
সব মিলিয়ে সার্বিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে করোনা প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ায় আর গড়িমসি করার সুযোগ নেই। সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতি করোনায় সবেচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী দেশগুলোর মতো হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কেননা এ অঞ্চলটি অধিক মাত্রায় ঘনবসতিপূর্ণ ও দরিদ্র। উন্নত দেশগুলোর মতো এসব দেশের সার্বিক সক্ষমতাও অনেক কম।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩১ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২০
এইচজে