মঙ্গলবার (৭ জুলাই) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরে।
বিবিসি জানায়, ভারতে গুরুতর করোনা রোগীদের ক্ষেত্রে ‘জীবন রক্ষাকারী’ ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত রেমডেসিভির ও টকিলিজুমাব ওষুধের সরবরাহ কম।
খবরে বলা হয়, ভারতে সাধারণত এক ভায়াল রেমডিসিভির ওষুধের দাম ৫ হাজার ৪০০ রুপি। অথচ কালোবাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৩০ হাজার রুপিরও বেশি দামে। মৃত্যুশয্যায় থাকা স্বজনদের বাঁচানোর চেষ্টায় মানুষ যে কোনো মূল্যে এসব ওষুধ সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। অনেক গরীব মানুষই সর্বস্ব বিকিয়ে সংগ্রহ করছেন এসব ওষুধ। যদিও করোনার চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত অব্যর্থ কোনো ওষুধ আসেনি।
সম্প্রতি মৃত্যুশয্যায় থাকা চাচার জন্য দিল্লির কালোবাজার থেকে চড়া দামে রেমডিসিভির সংগ্রহ করেন অভিনব শর্মা নামে এক ব্যক্তি। বিবিসিকে তিনি বলেন, উচ্চ মাত্রার জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে দিল্লির একটি হাসপাতালে ভর্তি তার চাচা।
চাচার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় শেষ চেষ্টা হিসেবে চিকিৎসকরা আমাদের রেমডিসিভির সংগ্রহ করতে বলেন। কিন্তু বাজারে এ ওষুধ পাইনি। ঘণ্টায় ঘণ্টায় চাচার অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। আমি যে কোনোভাবেই এ ওষুধ সংগ্রহ করতে মরিয়া হয়ে বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করতে থাকি। হয়তো ওষুধটা পেলে চাচাকে বাঁচানো যেতে পারে।
অনেক যোগাযোগের পর ওষুধের সন্ধান পাই কালোবাজারিদের কাছে। নিয়মিত দামের ৭ গুণ বেশি দাম দিয়ে আমাকে সেটা কিনতে হয়। যে কোনো মূল্যেই আমি সেটা কিনতে চাইচ্ছিলাম, কিন্তু যারা এতো দাম দিয়ে ওষুধটা কিনতে পারবে না, তাদের জন্য আমার মনতা কষ্টে ভেঙে পড়ে।
অভিনব শর্মার মতোই দিল্লির আরও অনেকে পরিবারেরই এখন এই অবস্থা।
ভারতে বর্তমানে রেমডেসিভির করোনা চিকিৎসায় কতোটা কার্যকর তা জানতে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। সরকার গুরুতর রোগীদের ক্ষেত্রে পরীক্ষামূলকভাবে এ ওষুধের ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছে। এর ফলেই ভারত জুড়ে এখন এ ধরনের ওষুধের চাহিদা বেড়ে গেছে। কিন্তু মার্কেটে তা পাওয়াই দুষ্কর। কেননা কম সরবরাহ থাকা এসব ওষুধের দখল নিয়েছে কালবাজারিরা।
ভারতে বর্তমানে হেটেরো নামে একটিই মাত্র ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি এ ওষুধ বানাচ্ছে। তারা এ ধরনের কালোবাজারির ঘটনায় উদ্বিগ্ন। কর্তৃপক্ষ জানায়, কীভাবে এসব ওষুধ কালোবাজারিদের হাতে যাচ্ছে তারা তা জানে না। তারা সরাসরি হাসপাতালগুলোকে এ ওষুধ দিচ্ছে, তারপরও কালোবাজারির ঘটনা দুঃখজনক।
আগামী সপ্তাহ থেকে তারা রেমডিসিভিরের উৎপাদন আরও বাড়াবে, সে ক্ষেত্রে ওষুধের সংকট কমবে বলে জানায় তারা।
এদিকে ওষুধ বিক্রির ছোট ছোট ফার্মাসিগুলো জানাচ্ছে, তারাও করোনার জরুরি এসব ওষুধ কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত নয়। তাহলে কী করে এসব ওষুধ কালোবাজারে যাচ্ছে তা এক অমীমাংসিত প্রশ্ন।
মানুষ দ্রুত এই চক্রকে ধরার ব্যাপারে সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৭, ২০২০
এইচজে