ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

চীনে গির্জার ক্রস-যিশুর ছবি ধ্বংসের অভিযোগ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১২ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০২০
চীনে গির্জার ক্রস-যিশুর ছবি ধ্বংসের অভিযোগ চীনে গির্জার ক্রস-যিশুর ছবি ধ্বংসের অভিযোগ। ছবি- সংগৃহীত

চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে সংখ্যালঘু খ্রিস্টানদের গির্জার ক্রস ধ্বংস ও বাসাবাড়ি থেকে যিশুর ছবি নামিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।  

মার্কিন সংবাদমাধ্যম রেডিও ফ্রি এশিয়ার বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।



খবরে বলা হয়, সম্প্রতি চীনের আনহুই, জিয়াংসু, হেবেই ও ঝেজিয়াংসহ বেশ কিছু প্রদেশে জোরপূর্বক ধর্মীয় বিভিন্ন প্রতীক ধ্বংস করে কর্তৃপক্ষ।  

ধর্মীয় স্বাধীনতায় বিশ্বাসী চীনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘বিটার উইন্টার’ জানায়, শুধু তাই নয়, সানশি অঞ্চলে দারিদ্র্যপীড়িত বিভিন্ন খ্রিস্টান পরিবারকে যিশুর ছবি নামিয়ে কম্যুনিস্ট নেতাদের ছবি টাঙাতে বলা হয়েছে।    

চীনে দীর্ঘ দীন ধরে সংখ্যালঘু মুসলিম উইগুরদের ওপর নিপীড়ন চলে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে। জিনজিয়াং প্রদেশের ১০ লাখের বেশি উইগুরকে বিভিন্ন ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়েছে। এরই মাঝে খ্রিস্টানদের ওপর নিপীড়নের এসব অভিযোগ উঠছে।    

এদিকে রেডিও ফ্রি এশিয়া জানায়, গত ১৮ ও ১৯ জুলাই পূর্বাঞ্চলীয় আনহুই প্রদেশের হুয়াইনান অঞ্চলে শিওয়ান ক্রাইস্ট চার্চের ক্রস নামিয়ে ফেলে কর্তৃপক্ষ। সে সময় বেশ কিছু ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টান তাতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।  

এর আগে গত ৭ জুলাই ঝেজিয়াং প্রদেশের ইয়োংজিয়া অঞ্চলেও একই ধরনের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সরকার আও'দিও ক্রাইস্ট চার্চ ও ইনচাং ক্রাইস্ট চার্চের ক্রস গুড়িয়ে দিতে ক্রেনসহ প্রায় ১০০ শ্রমিক পাঠায়।  

স্থানীয় খ্রিস্টানরা জানান, সরকারি কর্মচারীরা জোর করে চার্চে প্রবেশ করে মূল্যবান নানা জিনিস গুড়িয়ে দেয় ও ক্রিস্টানদের মারধর করে। তাদের ঠেকাতে গেলে ৮০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধাও মারধরের শিকার হন।  

এদিকে বিটার উইন্টার আরো জানায়, সানশি প্রদেশের লিনফেন অঞ্চলে স্থানীয় সরকার সব গ্রামের নেতাদের ডেকে ধর্মীয় কার্যক্রমের ব্যাপারে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের নির্দেশ দেন।  

তাদের খ্রিস্টানদের ঘরবাড়ি থেকে ক্রস, ধর্মীয় প্রতীক ও ছবি সরিয়ে ফেলার ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।  

স্থানীয় সরকারের পক্ষ থেকে দারিদ্র্যপীড়িত অধিবাসী, যারা বিভিন্ন সামাজিক অনুদান পেয়ে থাকেন, তাদের চিহ্নিত করে ধর্মীয় ছবির বদলে চীনা কম্যুনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান মাও সে তুং ও প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের প্রতিকৃতি টাঙাতে নির্দেশনা দেওয়ার কথা বলা হয়।  

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের ক্ষমতাসীন কম্যুনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধে ধর্মবিশ্বাসীদের শক্ত হাতে দমন চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এসবের মধ্যে খ্রিস্টানদের চার্চ ও মুসলমানদের মসজিদ ধ্বংস, বৌদ্ধ ধর্ম বিষয়ক শিক্ষা নেওয়া থেকে তিব্বতি শিশুদের বিরত রাখা, তথাকথিত ‘পুনঃশিক্ষা’ শিবিরের নামে ১০ লাখেরও বেশি মুসলিম উইগুরকে অবরুদ্ধ রাখাসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।  

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং নির্দেশ দিয়েছেন, সব ধর্মকে চীনা সংস্কৃতির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ হয়ে উঠতে হবে এবং নাস্তিক্যবাদী চীনা কম্যুনিস্ট পার্টির প্রতি অনুগতও থাকতে হবে।  

গত বছর শেষের দিকে চীনের কেন্দ্রীয় সরকার অনুবাদকৃত সব ধর্মীয় প্রাচীন ও পবিত্র বইপত্র পুনঃপর্যালোচনা করে সম্পাদনার নির্দেশ দেয়, যাতে করে সেগুলোতে সমাজতন্ত্রের মূলনীতি প্রতিফলিত হয়।  

দেশটির ধর্ম বিষয়ক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশ মতে, ধর্মীয় বইপত্রের নতুন সংস্করণে কম্যুনিস্ট পার্টির বিশ্বাসের বিরুদ্ধে যায় এমন কথাবার্তা থাকা চলবে না। সেন্সর কমিটির কাছে যে সব অংশ ভুল বলে বিবেচিত হবে, সেগুলো সংশোধন বা নতুন করে অনুবাদ করা হবে বলে জানায় তারা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০২০ 
এইচজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।