দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে চীনের বিরোধ নতুন কোনো ঘটনা নয়। আধিপত্য বিস্তারের উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ চীন সাগরে অত্যধিক মাত্রায় তৎপরতার কারণে চীনের দিকে ধেয়ে আসছে সমালোচনার তীর।
ওয়াশিংটনভিত্তিক ওই থিংক ট্যাঙ্কের বরাত দিয়ে বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়, চীন দক্ষিণ চীন সাগরকে গ্রাস করে নেওয়ার পদক্ষেপ নিয়েই শুধু ক্ষান্ত নয় তারা যে এটির দাবিদার সে সম্পর্কে বিশ্বের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে নানাভাবে।
ভিয়েতনামের ইস্ট সি ইনস্টিটিউট অব ডিপ্ল্যোমেটিক অ্যাকাডেমিতে গবেষণা সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন নগুয়েন থুই আন। এশিয়া ম্যারিটাইম ট্রান্সপারেন্সি ইনিশিয়েটিভে এ বিষয়ে তার একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে তিনি বলেন, দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে চীনের দাবিকে প্রতিনিধিত্ব করে নাইন ড্যাশ লাইন। তবে, এ দাবি সম্পর্কে চীন কোনো সরকারি ব্যাখ্যা দেয়নি।
রিপোর্টে আন উল্লেখ করেন, ‘চীনের দাবি ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স এবং যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। একইসঙ্গে এ দাবির সমালোচনা করছেন বিশ্বের অসংখ্য পণ্ডিত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ২০১৬ সালে এ সংক্রান্ত একটি সালিশে চীনের দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে যে দাবি তা খারিজ করে দেওয়া হয়েছিল। যদিও একে থোড়াই কেয়ার করছে চীন। তাদের দাবির বিষয়ে এখনো তারা অনড়। ’
রিপোর্টে বলা হয়, নাইন ড্যাশ লাইন নিজেদের প্রশাসনিক অঞ্চলের অংশ এমন ‘গল্প ফাঁদছে’ চীন। পাসপোর্টে প্রদর্শন, ম্যাপসে অন্তর্ভুক্ত করা, চলচ্চিত্রে দেখানো, বইতে উল্লেখ করা, অনলাইন গেমে যোগ করা, ট্যুরিস্ট লিফলেট, বুকলেট ও টিভি শোসহ নানা মাধ্যমে দেশটি এ অঞ্চলকে নিজেদের বলে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।
এর কিছু নমুনা তুলে ধরা হয় রিপোর্টে।
২০১৯ সালের অক্টোবরে অ্যাবোমিনেবল নামের একটি অ্যানিমেটেড মুভি মুক্তি পায়। যা চীনভিত্তিক পিয়ারল স্টুডিও ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ড্রিমওয়ার্কস অ্যানিমেশন যৌথভাবে প্রযোজনা করে। সে মুভিতে নাইন ড্যাশ ম্যাপ প্রদর্শিত হয়।
এবার আরেকটু পেছনে যাওয়া যাক। ২০১৮ সালে চীনা পর্যটকদের একটি দল ভিয়েতনামে আসে নাইন ড্যাশ লাইন আঁকা টি-শার্ট পরিধান করে। তারও কয়বছর আগে ২০১৫ সালে গুগল ম্যাপসের কিছু ছবি উন্মুক্ত করেন চীনা পর্যবেক্ষকরা যেখানে নাইন ড্যাশ লাইনকে হাইলাইট করা হয়েছিল।
এই সেদিনও নাইন ড্যাশ লাইন বিষয়ে তেমন একটা উচ্চবাচ্য হতো না। ২০০৯ সালের আগেও বৈজ্ঞানিক আর্টিকেলে নাইন ড্যাশ লাইন সম্পর্কে আলোচনার দেখা মিলত কদাচিৎ। তবে পরিস্থিতি দ্রুতই বদলেছে। ২০১০ সাল থেকে এ নাইন ড্যাশ লাইন নিয়ে প্রকাশিত নিবন্ধের সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। যা এখনো অব্যাহত।
এটাকে কোনোভাবেই অপরিকল্পিত বলা যাবে না। কারণ হলো, এই নিবন্ধগুলোর লেখক বা সহযোগী লেখকদের অধিকাংশই চীনা। এসব নিবন্ধে নাইন ড্যাশ লাইন সম্পর্কে তথ্য যোগ করা হয় চীনা সরকারের চাওয়ার ভিত্তিতেই।
যদিও চীনের এ উদ্যোগ বড় কোনো পরিবর্তন আনতে সক্ষম নয়। তবুও বিষয়টি সম্পর্কে জানেন না এমন শিক্ষার্থী, গবেষক ও বিজ্ঞানীরা এসব জার্নাল পড়লে তাদের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে রিপোর্টে।
বাংলাদেশ সময়: ২২০২ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০২০
এইচএডি/