দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে তীব্র বিরোধপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে ভিয়েতনাম ও চীন। এ বিরোধে ভিয়েতনামকে সমর্থন দিতে একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
সাগরে ভিয়েতনামের জেলেদের মাছ ধরার অধিকার প্রতিষ্ঠা ও দেশটির আইন প্রয়োগের ক্ষমতা জোরদার করার লক্ষ্যে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন ভিয়েতনামে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যানিয়েল জে ক্রিটেনব্রিংক ও ভিয়েতনামের মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ত্রান দিন লুয়ান। চুক্তিতে তৃতীয় কোন পক্ষের কথা উল্লেখ করা হয়নি। ভিএন এক্সপ্রেস ইন্টারন্যাশনাল এ খবর জানিয়েছে।
ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ক্রিটেনব্রিংক বলেন, সাগরে মৎস্য ব্যবস্থাপনা ও আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রচুর অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা ভিয়েতনামের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে আমরা আনন্দিত।
তিনি বলেন, আমরা ভিয়েতনামের সঙ্গে তাদের মৎস্য শিকার ব্যবস্থাপনা জোরদার করতে এবং জেলেদের অবৈধভাবে ভয় দেখানোর বিরুদ্ধে সমর্থন জোগাতে একত্রে কাজ করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।
এপ্রিল থেকে দক্ষিণ চীন সাগরে ভিয়েতনাম-চীন বিরোধ:
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের জন্য বিশ্বব্যাপী চীনের ভূমিকা যখন প্রশ্নবিদ্ধ সেই সময়ে দক্ষিণ চীন সাগর অঞ্চলের উপর নিজেদের দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠায় আক্রমণাত্মক অবস্থান নেয় চীন। যার বিরোধিত করে আসছে ভিয়েতনাম।
বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ব্যতিব্যস্ত। এমন সময়ে বেইজিং দক্ষিণ চীন সাগরের দ্বীপে দুটি প্রশাসনিক ইউনিট স্থাপন করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।
এমন পদক্ষেপের পক্ষে সাফাই গেয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গেং শুয়াং এক বিবৃতিতে বলেন, রাজ্য কাউন্সিলের অনুমোদনের পরে হাইনান প্রদেশের সানশা সিটি দ্বীপে জিশা ও নানশা নামে দুটি জেলা প্রতিষ্ঠা করেছে।
তিনি বলেন, চীন তার সার্বভৌম অঞ্চলের মধ্যে প্রশাসনিক বিভাগ সমন্বয় করছে। সানশা সিটির প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার উন্নতি ও নগরীর অর্থনৈতিক বিকাশ ও পরিবেশ সুরক্ষার জন্য এটি উপযুক্ত পদক্ষেপ।
সামুদ্রিক ব্যবস্থাপনার উন্নতির জন্য আমরা আইন অনুসারে এটি নিয়মিত করি, যাকে আন্তর্জাতিক আইনও অনুমোদন দেয় বলে দাবি করেন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই মুখপাত্র।
তবে দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের এসব পদক্ষেপের ব্যাপারে ভিয়েতনামের আপত্তির প্রসঙ্গ উড়িয়ে দিয়ে গেং শুয়াং বলেন, দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের সার্বভৌমত্ব, অধিকার ও স্বার্থকে ক্ষুন্ন করতে ভিয়েতনামের কাজকর্মের তীব্র বিরোধিতা করে চীন। একইসাথে নিজেদের সার্বভৌমত্ব, অধিকার ও স্বার্থকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত রাখবে।
দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের এমন পদক্ষেপের বিষয়ে ভিয়েতনাম আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানানোর এমন মন্তব্য করেন চীনের মুখপাত্র।
ভিয়েতনামের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লে থি থু হ্যাং এক বিবৃতিতে বলেন, ভিয়েতনাম বারবার দৃভাবে বলেছে প্যারাসেল ও স্প্রিটলি দ্বীপপুঞ্জের উপর ভিয়েতনামের সার্বভৌমত্ব দাবি করার যথেষ্ট ঐতিহাসিক প্রমাণ ও আইনি ভিত্তি রয়েছে।
তিনি বলেন, চীনকে ভিয়েতনামের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে, ভুল সিদ্ধান্ত বাতিল করতে এবং ভবিষ্যতে সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের মতো কাজ না করার আহ্বান জানাচ্ছে।
দক্ষিণ চীন সাগর বিরোধ:
কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস (সিএফআর) এর মতে দক্ষিণ চীন সাগর বিরোধের কারণ— এর নিচে থাকা ১১ বিলিয়ন ব্যারেল তেল ও ১৯০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে উদ্ভূত হয়েছে। প্রাকৃতিক এই সম্পদের দাবিদার এই অঞ্চলের দেশ ব্রুনাই, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, তাইওয়ান ও ভিয়েতনাম, যা চীন অস্বীকার করছে।
বছরে দক্ষিণ চীন সাগরের মধ্য দিয়ে আনুমানিক ৩.৩৭ ট্রিলিয়ন ডলার বৈশ্বিক বাণিজ্য হয়, যা বৈশ্বিক সামুদ্রিক বাণিজ্যের এক তৃতীয়াংশ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০২০
এমজেএফ