দক্ষিণ চীন সাগরে বিস্তৃত জলসীমার ওপর চীনের দাবি প্রত্যাখান করেছে মালয়েশিয়া। ওই অঞ্চল কেন্দ্র করে বেইজিংয়ের দাবি আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়িয়েছে।
মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিশামুদ্দিন হুসেইন সংসদে দেশটির বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদারকে নিয়ে বলেন, ‘ওই জলসীমায় চীনের ঐতিহাসিক অধিকারের দাবির বিরোধিতা করে মালয়েশিয়া। মালয়েশিয়ার সরকারও মনে করে, আন্তর্জাতিক আইনেও দক্ষিণ চীন সাগরের ওপর চীনের দাবির কোনো ভিত্তি নেই। ’
মালয়েশিয়ার কাছ থেকে এ মন্তব্য অপ্রত্যাশিত কেননা বাণিজ্যিক সম্পর্ক রক্ষার খাতিরে অতীতে সরাসরি চীনের বিরুদ্ধে মন্তব্য এড়িয়ে গেছে দেশটি।
সম্প্রতি মালয়েশিয়া সরকারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মালয়েশিয়ার একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলে চীনা জাহাজের অনুপ্রবেশ ঘটেছে ২০১৬ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ৮৯ বার। অন্যদিকে, চলতি বছরের এপ্রিল মাসের মধ্যে চীনা জাহাজগুলো মালয়েশিয়ার জলসীমায় প্রবেশ করেছে শতাধিক বার।
চীনের একটি সরকারি জরিপ জাহাজ হাইয়াং দিঝি-৮ একটি চীনা উপকূলরক্ষী জাহাজের সঙ্গে মালয়েশিয়ার একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলে (ইইজেড) প্রবেশ করে এবং মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রীয় তেল সংস্থা পেট্রোনাসের চুক্তির আওতাধীন একটি ড্রিলশিপের কাছাকাছি জরিপ শুরু করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রবল কূটনৈতিক প্রচেষ্টা’ শেষে চীনা উপকূলরক্ষী এবং ফিশিং মিলিশিয়ারা মে মাসে ওই অর্থনৈতিক অঞ্চল থেকে সরে পড়ে।
দক্ষিণ চীন সাগরে বেইজিংয়ের দাবির বিরোধিতাকারী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার চারটি রাষ্ট্রের মধ্যে মালয়েশিয়া এবং ব্রুনেই রয়েছে। তবে ভিয়েতনাম এবং ফিলিপাইন এ বিষয়ে প্রকাশ্যে তেমন কোনো বিবৃতি দেয়নি।
এমনকি বেইজিং তার দাবি জোরদার করতে সম্পদ সমৃদ্ধ ওই অঞ্চলে কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করেছে এবং উপকূলরক্ষী ও গবেষণাকারী জাহাজ পাঠানোর পরও তারা নিশ্চুপ।
গত বছরের ১২ ডিসেম্বর মালয়েশিয়া দক্ষিণ চীন সাগরের বিতর্কিত অঞ্চলের উত্তরাঞ্চলে জলসীমা প্রতিষ্ঠা করার জন্য জাতিসংঘে একটি আবেদন জমা দেয়। সমুদ্র আইন বিষয়ে জাতিসংঘের কনভেনশন অনুযায়ী, যে কোনো দেশ তাদের তীররেখা থেকে দুশ’ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত এলাকা একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে দাবি করতে পারে।
তবে দক্ষিণ চীন সাগরের অধিকাংশ অঞ্চলই নিজের বলে দাবি করে চীন। বেইজিংয়ের অভিযোগ, মালয়েশিয়া এ আবেদন করায় চীনের সার্বভৌম অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে।
এদিকে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, উত্তেজনা এড়াতে মালয়েশিয়া নিজের দাবি রক্ষায় সতর্ক থাকবে।
দক্ষিণ চীন সাগর তিনটি দ্বীপপুঞ্জে বিভক্ত। এর মধ্যে রয়েছে প্যারাসেল দ্বীপপুঞ্জ এবং স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জ। চীন প্রায় সমগ্র দক্ষিণ চীন সাগর তাদের সার্বভৌম অঞ্চল বলে দাবি করে এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তারা এ দাবি সহিংসতার সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে।
প্যারাসেল দ্বীপপুঞ্জের মালিকানা দাবি করে চীন, তাইওয়ান এবং ভিয়েতনাম। তবে চীন এ অঞ্চল দখল করে রেখেছে।
অন্যদিকে স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জের মালিকানা দাবি করে চীন, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন এবং ব্রুনেই।
সূত্র: এএনআই
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০২০
এফএম