প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস গোটা বিশ্বে তাণ্ডব চালাচ্ছে। এ ভাইরাসের বিরামহীন তাণ্ডবে ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ও ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্র।
বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বাড়ছে। তবে এর চরম পরিস্থিতি বাংলাদেশে এখনো আসেনি বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণা সাময়িকী ‘দ্য ল্যানসেট’।
ল্যানসেটের প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়, একদিকে বর্ষা, অন্যদিকে ডেঙ্গু; এর ভেতর আবার করোনা ভাইরাস। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশজুড়ে লাগামহীনভাবে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে।
বাংলাদেশের কয়েকজন বিশেষজ্ঞের কথা উল্লেখ করে অস্ট্রেলিয়ার পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখিকা সোফি কাজিন্স তার প্রতিবেদনে বলেছেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বাজে অবস্থা এখনো আসেনি।
করোনা পরীক্ষার জন্য সরকার যে ফি নির্ধারণ করেছে, এ প্রতিবেদনে তার সমালোচনাও করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ফি নির্ধারণের পর পরীক্ষার হার কমে প্রতিদিন এক হাজার মানুষে ০ দশমিক ৮ জনে দাঁড়িয়েছে। আগস্টে প্রতি এক হাজার মানুষে ০ দশমিক ৬ হারে টেস্ট হয়েছে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এমিনেন্সের প্রধান শামীম তালুকদার দ্য ল্যানসেটকে বলেন, এ মহামারি বাংলাদেশের ‘অনৈতিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে’ উন্মোচিত করেছে।
‘একদম শুরু থেকেই সরকার কোভিড-১৯ পরীক্ষা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছে,’ দাবি করে তিনি বলেন, ‘শুরুতে বেসরকারি খাতকে টেস্ট করতে দেওয়া হয়নি। এখন আবার ফি নেওয়া হচ্ছে। এতে দরিদ্ররা বাদ পড়ছেন। ’
তালুকদার ঢাকার কয়েকটি কবরস্থান ঘুরে সেখানকার কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। কবরস্থান পরিচালনাকারীরা তাকে বলেছেন, সরকারি হিসাবের চেয়ে দেশে চারগুণ বেশি মৃত্যু হচ্ছে। অনেকে উপসর্গ নিয়ে মারা যাচ্ছেন, কিন্তু করোনা পরীক্ষা হয়নি।
বাংলাদেশের আইইডিসিআরের সাবেক পরিচালক মাহমুদুর রহমানও টেস্টের জন্য ফি নির্ধারণ করার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন, ‘মানুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়া সত্যি সমস্যা সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে গরীবদের জন্য টেস্ট করানো এখন কষ্টকর। ’
‘মহামারির সময় মানুষের কাজ নেই। টাকা নেই। এমন অবস্থায় সরকারের টাকা নেওয়া উচিত হচ্ছে না। ’
ঢাকার আরেকজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের দেশে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১৫ হাজার পরীক্ষা হচ্ছে, এটি আসলে কিছুই না। ’
ওই চিকিৎসকের আশঙ্কা, ‘করোনা মহামারি আরও অনেক দিন থাকবে। আমি ভয় পাচ্ছি শীত আসলে কী হবে। মানুষও ভয় পাচ্ছে। ’
শামীম তালুকদার বলছেন, ‘সরকারের নজর এখন অর্থনীতির দিকে। কিন্তু কোভিড-১৯ গ্রাম থেকে গ্রামে ছড়িয়ে পড়বে। মারা যাবে আরও অনেক মানুষ। ’
অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধক ব্যবস্থার ওপর প্রতিবেদন করে ২০১৯ সালে মেডিক্যাল জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন থেকে পুরস্কার জেতা সোফির সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২০
নিউজ ডেস্ক