ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ইউক্রেন সংকট

বৈঠকের পরই বাইডেন-পুতিনের পরস্পরকে হুমকি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০২১
বৈঠকের পরই বাইডেন-পুতিনের পরস্পরকে হুমকি

ইউক্রেন সংকট নিয়ে ভার্চ্যুয়াল বৈঠকের একদিন পরেই পরস্পরকে হুমকি দিয়েছে আমেরিকা ও রাশিয়া। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, রাশিয়া যদি ইউক্রেনে হামলা করে, তাহলে কঠোর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে।

অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, নিজের দেশকে রক্ষা করার অধিকার রাশিয়ার আছে।

বৃহস্পতিবার (০৯ ডিসেম্বর) জার্মান সংবাদ মাধ্যম ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।

এর আগে মঙ্গলবার (০৭ ডিসেম্বর) ক্রেমলিন থেকে একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছিল। তাতে দেখা গেছে, বাইডেন ও পুতিন একে অপরকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে ভার্চ্যুয়াল বৈঠক হচ্ছে। কিন্তু বুধবার হোয়াইট হাউসে মুখ খুললেন বাইডেন।

তিনি বলেছেন, আমি খুব নম্রভাবে একটি বিষয় পরিস্কার করে দিয়েছি। যদি তিনি (পুতিন) ইউক্রেনে হামলা করেন, তাহলে তার পরিণতি ভয়ংকর হবে। তখন এমন আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে, যা এর আগে কেউ দেখেনি। আমি আত্মবিশ্বাসী যে তিনি বার্তাটি বুঝতে পেরেছেন।

ভার্চ্যুয়াল বৈঠক নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, আলোচনা গঠনমূলক হয়েছে। দুই দেশই আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছে। কিন্তু তিনি এটাও জানিয়েছেন, রাশিয়া শান্তিপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে চলে। নিজেকে রক্ষা করার অধিকারও রাশিয়ার আছে।

পুতিন আরও বলেন, প্রতিটি দেশেরই নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু এটা এমনভাবে করা দরকার, যাতে অন্য দেশের অধিকার লঙ্ঘিত না হয়।

বুধবার শপথ নিয়েছেন নতুন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস। তারপরই তিনি বলেছেন, রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করলে তার প্রভাব নর্ড স্ট্রিম ২ পাইপ লাইনে পড়তে বাধ্য। তার মতে, প্রতিটি দেশের সীমান্ত অলঙ্ঘনীয়। কেউ যদি তা লঙ্ঘন করে, তাহলে তার প্রতিফল তাকে পেতে হবে।

অন্যদিকে ফ্রান্সের বক্তব্য, রাশিয়াকে যথেষ্ট কড়া বার্তা পাঠানো হয়েছে। তাদের বলে দেওয়া হয়েছে, ইউক্রেনে হামলা করলে তার প্রতিক্রিয়া মারাত্মক হতে পারে। ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, যুক্তরাজ্য এবং আমেরিকা ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব বজায় রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, বাইডেন যে শান্তি বজায় রাখার জন্য উদ্যোগী হয়েছেন, তাতে তিনি খুশি।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও পুতিন তাদের সর্বশেষ মুখোমুখি বৈঠকটি করেছিলেন চলতি বছরের জুন মাসে, জেনেভাতে। রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, দুই প্রেসিডেন্ট সর্বশেষ টেলিফোনে কথা বলেছেন ৯ জুলাই।

রাশিয়া ইউক্রেনে বড় ধরনের হামলা চালাতে যাচ্ছে বলে আমেরিকার হাতে প্রমাণ আছে—মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি ব্লিঙ্কেনের এমন বক্তব্যের পরই এই ভার্চ্যুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো। তবে রাশিয়া এমন কোনো ইচ্ছা পোষণের কথা অস্বীকার করেছে। বরং ইউক্রেনের বিরুদ্ধে নিজস্ব বাহিনী গড়ে তোলার অভিযোগ তুলেছে দেশটি।

ইউক্রেন জানিয়েছে, রাশিয়া সাঁজোয়া যান ও ইলেকট্রনিক যুদ্ধ সরঞ্জামসহ ৯৪ হাজার সৈন্য সমাবেশ করেছে তাদের সীমান্তে। ২০১৪ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রাইমিয়া দখল করে নেওয়ার পর দেশটির সীমান্তে এটাই রাশিয়ার সর্ববৃহৎ সৈন্য সমাবেশের ঘটনা।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেকসি রেযনিকভ বলেছিলেন, জানুয়ারির শেষ দিকে হয়তো একটি আক্রমণের পরিকল্পনা করছে মস্কো। রাশিয়ার এই সৈন্য সমাবেশ নিয়ে এরমধ্যে রুশ-মার্কিন সম্পর্কে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। গত শুক্রবার প্রেসিডেন্ট বাইডেন সতর্ক করে বলেছিলেন, পুতিন যা করবেন বলে মানুষ আশঙ্কা করছেন, তা খুব কঠিন করে তুলবেন তিনি।

জানা গেছে, রাশিয়া যদি আগ্রাসী আক্রমণে যায় তাহলে দেশটির ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ করার ব্যাপারে আলোচনা সেরে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ইউরোপীয় মিত্ররা। ইউক্রেন নেটো সদস্য না হলেও এর সদস্যদের সঙ্গে দেশটির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। দেশটি পশ্চিমা যুদ্ধ সরঞ্জামও পেয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে মার্কিন জ্যাভলিন অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক ক্ষেপণাস্ত্র।

প্রসঙ্গত, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে উত্তেজনা নতুন কিছু নয়। ২০১৪ সালে রাশিয়া ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রাইমিয়া উপত্যকা দখল করে নেয়। এর পরপরই ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহীদের একটি দলকে সমর্থন দিতে শুরু করে রুশ কর্তৃপক্ষ।

সম্প্রতি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি পুতিনের একজন ক্ষমতাধর বন্ধুর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন এবং দেশটিতে তিনটি রুশপন্থী টিভি স্টেশনের সম্প্রচার বন্ধ করে দেন।

আরও পড়ুন: বাইডেন-পুতিনের ভার্চ্যুয়াল বৈঠক মঙ্গলবার

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০২১
এনএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।