ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

জাদুঘরে কোথা থেকে এলো ১৬৩ শিশুর মমি?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০২২
জাদুঘরে কোথা থেকে এলো ১৬৩ শিশুর মমি? ছবি: সংগৃহীত।

ইতালির উত্তর সিসিলিতে ভূগর্ভস্থ কবরখানায় রয়েছে হাজার হাজার মমি ও কঙ্কাল। কথা ছিল ওই কবরখানায় প্রাপ্তবয়স্কদের কবর দেওয়া ও মমি করে রাখার।

কিন্ত এতে পাওয়া গেছে ১৬৩টি শিশুর মমি।

প্রশ্ন হলো, ওই শিশুদের দেহ কেন সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছিল? এই রহস্যের সমাধান করতে চান গবেষকেরা। ইতোমধ্যে সিসিলির রাজধানী শহর পালেরমোয় কাপুচিন কাতাকোম্বস মঠের কবরখানাটি বিশ্বের বহু গবেষকের মনে কৌতূহল সৃষ্টি করেছে।

জানা গেছে, মোট এক হাজার ২৮৪টি মমি ও কঙ্কাল রয়েছে ওই কবরখানায়। এর মধ্যে ষোড়শ শতকের শেষ দিকে সংরক্ষণ করা হয় অনেক মমি। কিছু আবার বিংশ শতকের গোড়ার দিকের। তবে ইউরোপের পাশাপাশি একে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মমির সংগ্রহও বলে মনে করা হয়।

মূলত স্থানীয় ধর্মযাজকদের দেহ কবর দেওয়ার জন্য গড়া হয় কবরখানাটি। তবে ১৫৯৭ সাল নাগাদ কবর দেওয়ার জায়গা দিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারছিল না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফলে মঠের ভেতর আরও একটি ভূগর্ভস্থ কবরখানা গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মূল কবরখানার পেছনে আরও কিছুটা জায়গা নিয়ে তা গড়ে উঠেছিল।

এর মধ্যে সবচেয়ে পুরনো অংশে রাখা হয় ধর্মযাজকদের দেহ। একটি হলঘরে পুরোহিতদের কবর দেওয়া হত। আর নারীদের কারুকাজ করা পোশাক ও গয়না পরিয়ে কবর দেওয়া হতো করিডোরে। অবশ্য পুরুষদের জন্য বরাদ্দ করা করিডোরে পালেরমোর অভিজাত পরিবারের সদস্যদের দেহ রাখা হয়েছিল। এছাড়া একটি অংশ বরাদ্দ ছিল শিশুদের জন্য।

স্ট্যাফোর্ডশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈব প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কার্স্টি স্কুইরেসের নেতৃত্বে একদল ব্রিটিশ গবেষক সিসিলির ওই কবরখানার শিশুদের মমি পরীক্ষা করবেন।

অধ্যাপক কার্স্টি স্কুইরেস জানিয়েছেন, এক্স-রে পদ্ধতির মাধ্যমে বছর দুয়েক ধরে মমিগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে।

মঠের কবরখানায় শিশুদের দেহ কেন সংরক্ষণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কাছে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। গবেষণায় এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হবে।

জানা গেছে, সিসিলির ওই মঠে একটি নতুন কবরখানা গড়ে তোলার চেষ্টা চলছিল। তখন পুরনো কবর থেকে ৪৫টি মমি উদ্ধার হয়, যেগুলো সংরক্ষণ করা হয়েছিল প্রাকৃতিক উপায়ে। তবে দীর্ঘ দিনের পুরনো হলেও মমিগুলো পুরোপুরি অক্ষত অবস্থায় ছিল। এমনকি দেহগুলোতে পচন পর্যন্ত ধরেনি।

সেই মমিগুলো নিয়ে একটি প্রদর্শনী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মঠের ধর্মযাজকেরা। ওই প্রদর্শনীর জন্য নতুন কবরখানায় বেশ কয়েকটি করিডোর তৈরি করা হয়। এর মধ্যে যাওয়া যেত একটি সংগ্রহশালায়। ধীরে ধীরে সে সংগ্রহশালার বেশ নামডাক হয়। ‘মৃতদের জাদুঘর’ হিসেবেই পরিচিতি পায় সংগ্রহশালাটি।

গবেষকরা জানিয়েছেন, ১৭৮৭ সাল থেকে মঠের কবরখানায় শিশুদের কবর দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।

অধ্যাপক স্কুইরেস বলেন, কবরখানায় রাখা প্রাপ্তবয়স্কদের মমি ও কঙ্কাল নিয়ে প্রচুর গবেষণা হয়েছে। তবে শিশুদের মমি নিয়ে কেউ মাথায় ঘামায়নি। তাই এবারের গবেষণায় শিশুদের বিষয়টিই জানতে চান তিনি। যদিও তার ধারণা, ওই শিশুরা অভিজাত পরিবারের সদস্য।

অধ্যাপক স্কুইরেস বলেন, ময়নাতদন্ত বা কাটাছেঁড়া নয়। অন্যভাবে মমিগুলোর দেহ বিশ্লেষণ করা হবে। মোট ৫৭৪টি রেডিয়োগ্রাফের মাধ্যমে প্রতিটি মমির পায়ের আঙুল থেকে মাথা পর্যন্ত ডিজিটাল ইমেজ তোলা হবে। সবমিলিয়ে ১৬৩টি মমির মধ্যে ৪১টি শিশুর মমির পরীক্ষা করবে তার গবেষক দল।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০২১
এনএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।