ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ঘরে-বাইরে শত্রু নিয়ে কাঁপছে ইউক্রেন, যুদ্ধ ঠেকাবে কে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২২
ঘরে-বাইরে শত্রু নিয়ে কাঁপছে ইউক্রেন, যুদ্ধ ঠেকাবে কে?

সীমান্তে রাশিয়ার দেড় লাখের বেশি সেনা মোতায়েনের পর ইউক্রেন নিয়ে চরম উত্তেজনা চলছে। এরই মধ্যে দেশটির পূর্বাঞ্চলের রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা নতুন করে সামরিক কার্যক্রম শুরু করেছেন।

তারা যুদ্ধের জন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকতেই বলেছেন।

‘যেকোনো দিন’ রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে—এমন আশঙ্কার কথা বারবার বলে আসছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা। তবে ক্রেমলিন প্রথম থেকেই সেই দাবি অস্বীকার করে আসছে। ধোঁয়াশা এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধ ঠেকানোর উদ্যোগ আসলে কে নেবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।  

এমন পরিস্থিতিতে শনিবার জার্মানির মিউনিখে নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন বিশ্বনেতারা। এখন দেখার বিষয়, তাদের উদ্যোগ কতটা কার্যকরী হয়।

সীমান্তে রুশ সেনা মোতায়েন নিয়ে চরম উত্তেজনার মধ্যেই ইউক্রেনের ভেতরের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ে নতুন উৎকণ্ঠায় দেশটি। ভেতরের ও বাইরের শত্রু দেশটি কীভাবে মোকাবিলা করবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

তাই উত্তেজনা কমাতে এখনই রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিতে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন’র সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ আহ্বান জানান।

যুদ্ধ শুরুর পর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কোনো লাভ নেই জানিয়ে ভলোদিমির জেলনস্কি বলেন, আমাদের দেশে বোমা হামলা শুরু হলে এবং গুলি চালানোর পর আমাদের কোনো সীমানা থাকবে না বা আমাদের কোনো অর্থনীতিও থাকবে না...। তাহলে এসব নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আমরা কী করব?

সামরিক বিশ্লেষকরা একমত যে, ইউক্রেন সীমান্তের কাছে প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার সৈন্য জড়ো করেছে রাশিয়া। ইউক্রেন সীমান্তের দিকে সেনারা এগিয়ে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে পশ্চিমারা একের পর এক হুঁশিয়ারি দিয়ে যাচ্ছে। ইউক্রেনে হামলা করলে রাশিয়াকে চরম মূল্য দিতে হবে বলেও জানিয়েছে তারা।  

চলমান পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের স্বঘোষিত প্রজাতন্ত্র দোনেৎস্ক ও লুহানস্কে রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।  

২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া অঞ্চল রাশিয়ার দখলে চলে যায়। এরপর ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা মাথা চাড়া দেয়। তারা ওই অঞ্চল দুটিকে স্বঘোষিত প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করেছে।  

দোনেৎস্ক ও লুহানস্কে এখন প্রায় ৩৫ লাখ বাসিন্দা। ওই ঘটনার পর সেখানকার ৭ লাখ ২০ হাজার রাশিয়ার নাগরিকত্ব পেয়েছেন বলে জানিয়েছে রুশ গণমাধ্যমগুলো।  

বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মতে, কয়েক দিন ধরে হামলা ও গোলাগুলির মধ্যে অন্তত ৬ হাজার ৫০০ জন নাগরিককে দোনেৎস্ক থেকে সরিয়ে নিয়েছে রাশিয়া।  

বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত দোনেৎস্ক থেকে কিছু লোক চলে যাচ্ছেন বলে বিবিসিকে নিশ্চিত করেছেন সেখানকার এক বাসিন্দা। তিনি বলেন, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এই অঞ্চল শেষ পর্যন্ত রাশিয়া বা ইউক্রেন দখলে নেবে।  

ইউক্রেনের ড্রোন ভূপাতিত
দোনবাস এলাকায় ইউক্রেনের একটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে রুশ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। রাশিয়ার সরকারি টিভি ‘চ্যানেল-টু’ জানিয়েছে, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের পরিস্থিতি সংকটাপন্ন হয়ে উঠেছে।

পার্স টুডে জানায়, দোনবাসের রুশ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ইউক্রেনের একটি ড্রোনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তা ভূপাতিত করেছে। সেখানকার একজন কর্মকর্তা বলেছেন, লুগানস্ক অঞ্চলে প্রবেশের পর ড্রোনটির নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হন তারা।

বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে পড়ার আগে ড্রোনটি দোনবাস এলাকায় প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করেছে। ড্রোনটি দেড় মিটার লম্বা বলে জানা গেছে।

রুশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা দোনবাসের শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। এ লক্ষ্যে সীমান্তে ৯২টি অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে।  

ইউক্রেনের দুই সেনা নিহত
রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলায় শনিবার ইউক্রেনে দুই সেনা নিহত ও চারজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। রয়টার্স জানায়, চলতি সপ্তাহে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়েছে। এতে ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযান শুরুর শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ভারী কামান ব্যবহার করছে। তারা সীমানা বিভাজনকারী রেখার পাশে থাকা ৩০টির বেশি বসতিতে গোলা বর্ষণ করেছে। যদিও দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত নিয়ন্ত্রণে সব পক্ষকে নিয়ে চুক্তিতে অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

বিস্ফোরণ থেকে ‘বেঁচে গেলেন’ ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
চলমান পরিস্থিতিতে শনিবার ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল সীমান্তে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেনিস মোনাস্টিরস্কি। তার সঙ্গে ছিলেন মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএস’র একটি দল ও অন্য সাংবাদিকরা।

তারা সীমান্তের কাছে পৌঁছালে মর্টার শেল বিস্ফোরণ হতে থাকে। সেখানে কয়েক’শ মিটারের মধ্যে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটে। এ ঘটনায় ‘অল্পের জন্য বেঁচে যান’ তারা। বিস্ফোরণে কেউ আহত হননি।  

ওই এলাকা ছাড়ার আগে সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দেনিস মোনাস্টিরস্কি বলেন, রুশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা ইউক্রেন সীমান্তের দিকে আগ্রসর হচ্ছেন। সেখানে আমাদের সৈন্যদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা যেকোনো পরিসিস্থিতির জন্য প্রস্তুত রয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের চরম হুঁশিয়ারি 
ইউক্রেন ইস্যুতে জার্মানির মিউনিখে চলা নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দিয়ে শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বলেন, ইউক্রেইনে আগ্রাসন হলে মস্কো ‘মারাত্মক’ পরিণতি ভোগ করবে।  

কমলা হ্যারিস বলেন, আমরা সবাই এ বিষয়ে অবগত, ইউক্রেইনকে ঘিরে চলমান উত্তেজনায় ইউরোপীয় নিরাপত্তার ভিত সরাসরি হুমকির মুখে পড়েছে। ইউক্রেনে হামলা হলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে আমরা প্রস্তুত। হামলা চালালে রাশিয়াকে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২২
জেএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।