ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ মে ২০২৪, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

আন্তর্জাতিক

হাত-পা বেঁধে ‘কাতুকুতু’ দিয়ে নির্যাতন-হত্যা! 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০২ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২২
হাত-পা বেঁধে ‘কাতুকুতু’ দিয়ে নির্যাতন-হত্যা! 

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বন্দির হাত-পা বেঁধে কোনো ধরনের মারধর না করেও যুগ যুগ ধরে কাতুকুতু দিয়ে নির্যাতন করা হতো অনেক দেশে। এই নির্যাতনের কোনো চিহ্ন শরীরে থাকত না।

তবে এতে মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। বন্দিদের ওপর অত্যাচারে নির্বিচারে ব্যবহার করা হয়েছে এই চীনা দাওয়াই।  

শারীরিক হয়রানি বা অপমান করা অথবা দমিয়ে রাখার জন্যও এককালে অভিজাতরা কাতুকুতুর দাওয়াই দিয়েছেন তাদের প্রজাদের। চীনের হান বংশের রাজস্তব কালে এই পন্থা নেওয়া হলেও কালে কালে তা ছড়িয়ে পড়েছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, জার্মানিসহ অনেক দেশে।  

মার্কিন লেখক ক্যারোলিন হাস্ক লিখেছিলেন, কাতুকুতু মোটেও হাসির বিষয় নয়। যথার্থই বলেছেন ক্যারোলিন। অত্যাচারের পর্যায়ে পৌঁছে গেলে কাতুকুতু মোটেও হাসি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে না। জোর করে কাতুকুতু দেওয়া হলে বমি করা বা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়তে পারেন অনেকে। নাৎসি জার্মানিতে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে কাতুকুতুর অত্যাচারে বন্দিমৃত্যুও হয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে।

২০৬ খ্রিস্টপূর্বে চীনের হান সাম্রাজ্যে কাতুকুতুকে হাতিয়ার করেই প্রজাদের ওপর অত্যাচার করতেন অভিজাতরা। কারণ, এ অত্যাচারের চিহ্ন ধরা পড়ে না প্রজাদের দেহে। অন্যদিকে, অত্যাচারের পর সহজেই তার প্রভাবমুক্ত হতে পারতেন বন্দিরা।

চীনের গণ্ডি পেরিয়ে এই দাওয়াই কীভাবে অন্য দেশে পৌঁছাল, তা স্পষ্ট জানা যায় না। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তার ফায়দা তুলেছিলেন নাৎসিরা। সমকামী হওয়ার ‘অপরাধে’ জোসেফ কহোয়াট নামের এক অস্ট্রিয়ানকে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে বন্দি করেছিলেন তারা।

জোসেফের দাবি, ফ্লোসেনবার্গের শিবিরে থাকাকালীন তিনি দেখেছিলেন কীভাবে বন্দিদের ওপর কাতুকুতুর অত্যাচার চালাতেন রক্ষীরা। ১৯৭২ সালে প্রকাশিত বই ‘দ্য মেন উইথ দ্য পিঙ্ক ট্রায়াঙ্গল’-এ জোসেফের কাহিনী তুলে ধরেছিলেন হান্স নিউম্যান। হাইঞ্জ হেগার নামে ছদ্মনামে লেখা ওই বইয়েও জোসেফের ওপর অত্যাচারের বর্ণনা ধরা পড়েছে।

ইউরোপের অনেক দেশও এই চীনা দাওয়াই ব্যবহার হয়েছে। ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে তার খুঁটিনাটি তথ্য পাওয়া যায়। ইতালিতে জেলবন্দিদের হাত-পা বেঁধে তাদের পায়ে লবণ-পানি মাখিয়ে দিতেন কর্মকর্তারা। এরপর বন্দিদের উল্টো করে শুইয়ে তাদের সামনে ছেড়ে দেওয়া হতো একটি ছাগলকে।

বন্দিদের পায়ে মাখানো সেই লবণ-পানি ছাগল চেটে খেতে শুরু করলে প্রথমে কাতুকুতুর অনুভূতি হতো। তবে ক্রমাগত পা চাটতে থাকায় এক সময় সেই পা শুকিয়ে উঠত। তার পর বন্দিদের পায়ে ফের এক প্রস্থ লবণ-পানি মাখানো হতো। তখনই অস্বস্তিতে পড়তেন বন্দিরা। বারবার এই পদ্ধতিতে বন্দিদের ওপর অত্যাচার চলত।

১৫০২ সালে ফ্রানসিসকাস ব্রুনাস দি সান সেভেরিনো নামের এক ইতালীয় জুরি তথা সন্ন্যাসীর বইয়ে এই পদ্ধতির বর্ণনা রয়েছে। যদিও বাস্তবেই এভাবে অত্যাচার চলত নাকি তা ব্রুনাসের কল্পনাপ্রসূত, তা নিয়ে তর্ক রয়েছে। অনেকের দাবি, অত্যাচারের ভুক্তভোগী খোদ ব্রুনাস।

প্রাচীন জাপানেও পৌঁছে গিয়েছিল চীনের ওই দাওয়াই। ‘শিকেই’ নামের ওই দাওয়াইয়ের অঙ্গ হিসেবে অপরাধীদের নির্দয়ভাবে কাতুকুতু দেওয়া হতো।

রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের অঙ্গ হিসেবে এই দাওয়াই ব্যবহার করা হয়েছে কি না, তার প্রমাণ মেলে না। তবে প্রাচীন ইংল্যান্ডে এবং বিংশ শতকে যুক্তরাষ্ট্রে কাতুকুতুর অত্যাচারের কয়েকটি ঘটনা জানা গেছে।  

সূত্র: আনন্দবাজার

বাংলাদেশ সময়: ১৬০১ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২২
জেএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।