ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

সুইফটের বিকল্প রাশিয়ার ‘মির’, যোগ দিচ্ছে ইরান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২২
সুইফটের বিকল্প রাশিয়ার ‘মির’, যোগ দিচ্ছে ইরান

ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরুর পর রাশিয়ার ওপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো ‘সুইফট’ থেকে রাশিয়াকে বাদ দেওয়া।

 

আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে বার্তা আদানপ্রদানকারী আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সুইফট থেকে রাশিয়াকে নিধিদ্ধ করায় বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবছে দেশটি। তাদের এই বিকল্প ব্যবস্থায় যোগ দিতে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরান।  

রুশ সিস্টেম ‘মির’ (এমআইআর) ব্যবহার করে অর্থ লেনদেনের কথা ভাবছে ইরান ও রাশিয়া। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে দুই পক্ষ আলোচনা শুরু করেছে।  

রাশিয়ায় নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত কাজেম জালালি বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন। খবর পার্স টুডের।

কাজেম জালালি বলেন, ‘বিষয়টি এজেন্ডায় রয়েছে। এ নিয়ে রাশিয়ার মিত্রদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করছি’।

তিনি আরও বলেন, সুইফট সিস্টেম বাদ দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আলাদা একটি ফাইনান্সিয়াল মেসেজিং সিস্টেম চালু করার চিন্তা করছে রাশিয়া ও ইরান।

২০১৭ সালের ১ মে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশটির একটি আইনের আওতায় এই মির সিস্টেম চালুর বিষয়টি অনুমোদন দেয়। এর মাধ্যমে সুইফট সিস্টেমের মতো অর্থ লেনদেন করা যায়। এটি সম্পূর্ণভাবে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মালিকানাধীন একটি ব্যবস্থা এবং রাশিয়ান ন্যাশনাল কার্ড পেমেন্ট সিস্টেম এই ব্যবস্থা পরিচালনা করে।

রাশিয়ার নাগরিকদের অর্ধেকেরও বেশি এই মির ব্যাংক কার্ড ব্যবহার করেন এবং রাশিয়ার অর্থনৈতিক লেনদেনের শতকরা ২৫ ভাগের বেশি এই ব্যবস্থার আওতায় পরিচালিত হয়।

ইউক্রেনে রাশিয়া সামরিক অভিযান শুরু করে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি। এক মাস ধরে চলছে সেই যুদ্ধ। যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের পশ্চিমা মিত্ররা মস্কোর ওপর দফায় দফায় হাজারো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর অংশ হিসেবে তারা রাশিয়াকে সুইফট সিস্টেম থেকে বাদ দিয়েছে।  

ইরান ও রাশিয়ার ওপর এমন অনেক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোকে এড়িয়ে তারা স্বাধীনভাবে আলাদা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালুর চিন্তা করছে।

সুইফট কী, কীভাবে কাজ করে? 
১৯৭৩ সালে তৈরি হওয়া এই প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয় বেলজিয়ামে। বিশ্বের ১১ হাজার আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লেনদেনের বিষয়ে বার্তা আদানপ্রদানের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে এই সুইফট।

সুইফট এর পূর্ণরূপ সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল টেলিকম্যুনিকেশন। বিশ্বব্যাপী ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আর্থিক লেনদেন করতে এই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হয়। আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে তথ্য আদান প্রদানের জন্য সুইফটকে একটি নিরাপদ নেটওয়ার্ক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

প্রতিষ্ঠানটি মূলত একটি তাৎক্ষণিক মেসেজিং ব্যবস্থা, যা কোনো লেনদেনের ব্যাপারে গ্রাহককে তৎক্ষণিক জানিয়ে দেয়। বিশ্বের অধিকাংশ ব্যাংক নিজেদের মধ্যকার বার্তা আদান প্রদানের কাজে সুইফট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে।

সুইফট নেটওয়ার্ক দিয়ে সরাসরি অর্থ প্রেরণ করা যায় না, এটা শুধু অনলাইনে পেমেন্ট অর্ডার প্রেরণ করে। একটি ব্যাংক তাদের সুইফট নেটওয়ার্কে সংযুক্ত অন্য একটি ব্যাংককে অর্থ পরিশোধের অনুরোধ পাঠায় এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক সেই আদেশ গ্রহণ করে সে অনুযায়ী কাজ করে।

বিশ্বব্যাপী খুবই গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ভূমিকা রাখলেও কোনো দেশের ওপর অবরোধ আরোপের আইনি ক্ষমতা নেই এই প্রতিষ্ঠানটির।  

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন বলেছেন, রাশিয়া যাতে তার যুদ্ধকালীন অর্থ ভাণ্ডার ব্যবহার করতে না পারে, পশ্চিমা মিত্র দেশগুলো সে বিষয়ে কাজ করছে। রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক যাতে কোনো সম্পদ বিক্রি করতে না পারে, সেজন্য এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সুইফট নিয়ন্ত্রণ করে কারা?
সুইফট তৈরি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয়ান ব্যাংকসমূহের উদ্যোগে, যারা চাননি একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান কোনো একক সিস্টেম তৈরি করে কাজ করবে এবং নিজেদের একচেটিয়া ব্যবস্থার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক লেনদেন পরিচালনা করবে।

যৌথভাবে এই নেটওয়ার্কের মালিক বিশ্বের দুই হাজার ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ এবং ব্যাংক অব ইংল্যান্ডসহ বিশ্বের বড় বড় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে মিলে বেলজিয়ামের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ন্যাশনাল ব্যাংক অব বেলজিয়াম সুইফটের কাজকর্ম দেখাশোনা করে থাকে।

এই নেটওয়ার্কের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে পরিচালিত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিশ্চিত হয় সুইফটের মাধ্যমে। কোনো বিরোধের ক্ষেত্রে পক্ষ অবলম্বন করার কথা নয় প্রতিষ্ঠানটির।  

তবে ২০১২ সালে পরমাণু কর্মসূচির কারণে ইরানের ওপর সুইফটের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। এতে করে দেশটির তেল রপ্তানি থেকে আয় অর্ধেক কমে গিয়েছিল এবং বৈদেশিক বাণিজ্যের ৩০ শতাংশ হারিয়েছিল।  

সুইফট বলছে, কারও ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার বিষয়ে তাদের কোনো প্রভাব থাকে না। বরং নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নির্ভর করে কোনো দেশের সরকারের ওপর।

বাংলাদেশ সময়: ১০১৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২২
জেএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।