ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ফিন্যান্সিয়াল পোস্টের প্রতিবেদন

মার্কিন ডলারের আধিপত্য কমাচ্ছে কানাডিয়ান ডলার?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ২, ২০২২
মার্কিন ডলারের আধিপত্য কমাচ্ছে কানাডিয়ান ডলার?

১৯৪৪ সাল থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে ক্ষমতা টিকিয়ে রেখেছে মার্কিন ডলার। বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণ ও লেনদেনে এ মুদ্রার আধিপত্য একচেটিয়া।

‘রিজার্ভ মুদ্রা’ হিসেবেও এর প্রভাব অনেক বেশি। কিন্তু দিন দিন এ অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র হলেও ইসরায়েল প্রথমবারের মতো নিজেদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রিজার্ভ হিসেবে চীনা মুদ্রা (রেনমিনবি) যোগ করেছে। কৌশল হিসেবে অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার মুদ্রা (ডলার) ও জাপানি ইয়েনের কার্যভারও বাড়িয়েছে

ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ইমেরিটাস অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ ডেভিড লেডলার মার্কিন ডলারের সুবিধা সম্পর্কে নিজের মত প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, নিজেদের মুদ্রা থেকে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক সুবিধা পায় যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্ববাজারে প্রভাবের কারণেই এ সুযোগ পাচ্ছে দেশটি। অন্যান্য দেশগুলো যখন তাদের মুদ্রার হোল্ডিং বাড়ায়, তখন যুক্তরাষ্ট্র ‘ফেড প্রিন্ট’ কাগজের বিনিময়ে আসল পণ্য ও পরিসেবা পায়।

মন্ট্রিল-ভিত্তিক ডসন কলেজের অর্থনীতির অধ্যাপক ওয়ার্কু আবেরার মতে, যুক্তরাষ্ট্রের উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল প্রতিবেশী দেশ কানাডা। কিন্তু এর প্রভাবটা জটিল। ডলারের বৈদেশিক রিজার্ভ কমে যাওয়ায় কানাডীয় মুদ্রার মান বাড়বে। এতে কিছু সবিধা পাওয়া যাবে।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতি হওয়া মানে, সেসব দেশের জন্য লাভ যারা কানাডাসহ যেসব দেশের মুদ্রা রিজার্ভ হিসেবে সংরক্ষণ করে রাখছে।

১৯৪৪ সালের ব্রেটন উডস কনফারেন্স ৪৪টি দেশ অংশগ্রহণ করে। বিভিন্ন দেশ এ সময় রিজার্ভ হিসেবে মার্কিন ডলার জমা করার অনুমতি চায়। কনফারেন্স থেকে অনুমতি দেওয়া হলে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রার প্রভাব বাড়তে থাকে।

যেসব দেশ বিভিন্ন কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবহার করে থাকে, তারা শুধু তরল মুদ্রা রাখা বা প্রতিযোগিতামূলক রফতানির জন্য এ অর্থ ব্যবহার করে না। তাদের মূল লক্ষ্য রিজার্ভ থেকে উন্নত রাষ্ট্র থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ বা বৈচিত্র্যপূর্ণ পোর্টফোলিও থেকে মুনাফা অর্জন।

মার্কিন ডলার এখনও বেশ প্রভাবশালী। কিন্তু সম্প্রতি এর অবনমন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এতে করে ডলারের আধিপত্য ধরে রাখা বাস্তব নাও হতে পারে।

পূর্বে অপ্রচলিত হিসেবে বিবেচিত মুদ্রার উত্থান মার্কিন ডলারের অবনমনের জন্য কিছুটা দায়ী। কারণ অপ্রচলিত এসব মুদ্রা সম্মানসূচক কারেন্সি কম্পোজিশন অব অফিসিয়াল ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ (সিওএইআর) মর্যাদা অর্জন করেছে।

বৈদেশিক রিজার্ভ হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ২৮৭ বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার রয়েছে বলে জানা গেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের জরিপকৃত ২০২২ সালের প্রথম ত্রৈমাসিক ডেটা থেকে এ তথ্য জানা যায়। আবেরা বলেন, এটি বিশ্বের মোট রিজার্ভের তুলনায় একটি ছোট ভগ্নাংশ মাত্র। কিন্তু আন্তর্জাতিক রিজার্ভ হোল্ডিংয়ের গঠন পরিবর্তনে এটি অবশ্যই উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি।

বৈদেশিক রিজার্ভের বিন্যাস মার্কিন ডলার, ব্রিটিশ পাউন্ড, জাপানি ইয়েন ও ইউরো ব্যাহত করছে। ১৯৯৯ সালে বৈদেশিক রিজার্ভের ৯৮ শতাংশ ও ২০২১ সালের হিসাবে ৯২ শতাংশে এ চারটি বৈদেশিক রিজার্ভের আধিপত্য বেড়ে যায়।

কানাডা ছাড়াও অস্ট্রেলিয়ান মুদ্রার প্রভাব বাড়ছে। ২০২২ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকের হিসাব অনুযায়ী, বিভিন্ন দেশের কাছে প্রায় ২২৫ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার রয়েছে।

জুনের শেষ দিকে রাশিয়া ও ব্রিকসের অন্যান্য সদস্য দেশ (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা) একটি নতুন আন্তর্জাতিক রিজার্ভ মুদ্রার প্রচলন করতে যাচ্ছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সৌদি আরব ও ন্যাটো-সদস্য তুরস্কসহ আরও অন্যান্য দেশও ব্রিকসে যোগ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

দেশগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যদি মার্কিন ডলারের মান কমেই যায়, দেশটির জন্য এটি হবে বিরাট ক্ষতি। এদিকে, মার্কিন প্রশাসনও নিজেদের ব্যাপারে স্বার্থপর। সে ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী অর্থ লেনদেনের প্রক্রিয়াও বিরাট ক্ষতির মুখ দেখবেন বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

সূত্র: ফিন্যান্সিয়াল পোস্ট

বাংলাদেশ সময় : ১৬৩৮ ঘণ্টা, ২ আগস্ট, ২০২২
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।