ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

৯/১১ হামলা: ২১ বছর পরেও হয়নি বিচার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২২
৯/১১ হামলা: ২১ বছর পরেও হয়নি বিচার

১ মার্চ, ২০০৩। যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দিল ৯/১১ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে তাদের সবচেয়ে বড় বিজয়ের।

ওইদিন পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি থেকে গ্রেফতার হন খালিদ শেখ মোহাম্মদ। ১৮ মাস চেষ্টার পর আল-কায়েদার তৃতীয় সর্বোচ্চ এই নেতাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এখনও আইনিভাবে তার বিচার করতে পারেনি তারা।  

বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের’ অন্যতম ব্যর্থতাই হলো তার বিচার করতে না পারা।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, টুইন টাওয়ারে হামলার ২১ বছর পূর্তি হলো রোববার। আর সেই হামলার আসামি খালিদ শেখসহ আরও চারজন অভিযুক্ত এখনও কুখ্যাত গুয়ানতানামো বে কারাগারে বন্দি রয়েছে। অসংখ্যবার পিছিয়েছে তাদের বিচার কার্যক্রম। সর্বশেষ গত মাসে অনুষ্ঠিতব্য শুনানিও পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে হতাশা প্রকাশ করেছেন হামলার শিকার প্রায় তিন হাজার মানুষের স্বজনরা। এখনও তারা ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন।  

২০০১ সালে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের ওই হামলায় নিজের ২৫ বছর বয়সি মেয়েকে হারিয়েছিলেন গর্ডন হাবেরম্যান নামে এক মার্কিনি। বিচারকার্যের দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমি জানি না কি হবে।

উইসকনসিনে নিজের বাড়ি থেকে চার বার গুয়ানতানামো বে গেছেন তিনি শুধু ন্যায়বিচার দেখার জন্য। কিন্তু বারবারই হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হয়েছে তার। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে এক দিন এটা নিয়ে সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। এটি আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।  আমি ব্যক্তিগতভাবে তার সাক্ষী হতে চাই।

 ৯/১১ হামলার অন্যতম অভিযুক্ত শেখ মোহাম্মদ। বিচারে দোষী স্যব্যস্ত হলে তার মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। তবে শেখ মোহাম্মদের আইনজীবী জেমস কনওয়েল বলেন, ‘বিচার পূর্ববর্তী আপসে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে দুই পক্ষ। এতে করে বিচারে তাদের সাজা কম হতে পারে। তারপরও অনেক দিনের শাস্তি হবে নিশ্চিত। ’ 

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ মোহাম্মদ ও গুয়ানতানামোর অন্যান্য বন্দিদের আগে গোপন কারাগারে রাখা হয়েছিল। এ সময় তাদের ওপর ব্যাপক নিপীড়নের অভিযোগও রয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, শেখ মোহাম্মদকে জিজ্ঞাসবাদের কারণে ১৮৩ বার পানিতে চুবানো হয়েছিল।

পরে সিনেটের একটি তদন্তে বলা হয়, সেই নিপীড়নে কোনো মূল্যবান তথ্য পাওয়া যায়নি। বরং বিচার কার্যক্রমকে আরও ধীরগতির করে ফেলেছে। সেই নিপীড়নের কারণে বেসামরিক আদালতেও তার বিচারকার্য চালাতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। ২০০৯ মালে ওবামা প্রশাসন শেখ মোহাম্মদের বিচারকে নিউইয়র্ক আদালতে আনতে চায়। ম্যানহাটনের ফেডারেল আদালতে তার বিচার হওয়ার কথা ছিল। ওবামা বলেছিলেন, ‘ব্যর্থতার কোনো সুযোগ নেই। ’

কিন্তু নিরাপত্তার অজুহাতে সেই মামলা আর নিউইয়র্কে আসেনি এবং সামরিক আদালতেই তার বিচার চলছে। সেই ঘটনারও ১২ বছর পেরিয়ে গেছে।

সন্ত্রাসবাদ নিয়ে কাজ করা আইনজীবী কেলি বলেন, এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। বিচারকার্যও তাই এখন অনেক কঠিন। অনেক আলামত দুর্বল হয়ে পড়েছে, স্বাক্ষীদের পুরোপুরি হয়তো সব কথা মনেও নেই।  

গুয়ানতানামো বে মামলায় মার্কিন বিচার বিভাগের আইনি পরামর্শক কেভিন পাওয়ার্স বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার যেভাবে গুয়ানতানামো বে পরিচালনা করে আর সেনাবাহিনী যেভাবে অপরাধ আদালত চালায়, পুরো প্রক্রিয়াটিতেই জটিলতা তৈরি হয়েছে। আর এতে ভুক্তভোগী হচ্ছে হতাহতদের স্বজনরা।

সূত্র: আল জাজিরা

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা,সেপ্টেম্বর১১, ২০২২  
ইআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।