৪৫ দিন ক্ষমতায় থাকার পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন লিজ ট্রাস। বিতর্কিত মিনি-বাজেটের খড়্গই তার গদি হারানোর মূল কারণ।
এক নজরে দেখে আসা যাক কারা তারা
লিজ ট্রাসের গদিতে বসতে মুখিয়ে আছেন হাউস অব কমন্সের নেত্রী ও প্রিভি কাউন্সিলের লর্ড প্রেসিডেন্ট পেনি মর্ডান্ট। বরিস জনসন প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করার পর নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রতিযোগিতায় পেনি নিজেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। জোরালো সমর্থন আদায় করেছিলেন সহকর্মী এমপিদের কাছ থেকে। কিন্তু শেষ দিকে সমর্থনের অভাবে বাদ পড়েন। বর্তমানে নতুন রাজার অ্যাকসেসন কাউন্সিলের সভাপতিত্ব করছেন তিনি।
২০১৯ সালে সালে যুক্তরাজ্যের প্রথম নারী প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন পেনি মর্ডান্ট, যা ইতিহাসে রূপ নেয়। অর্থাৎ এ পদে আগে কোনো নারী দায়িত্ব পালন করেননি। প্রধানমন্ত্রী পদ পেতে এমপিদের মধ্যে জন ল্যামন্ট, মারিয়া মিলার, বব সিলি এবং ড্যামিয়ান কলিন্সের কাছ থেকে সমর্থন পেয়েছেন পেনি।
উল্লেখ্য, ব্রিটেনের পার্লামেন্টে এক জরুরি প্রশ্নে লিজ ট্রাসকে সমর্থন দিয়েছিলেন পেনি। যার বদৌলতে সপ্তাহের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বাদ পেয়েছিলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে আছেন ব্রিটেনের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্র্যাভারম্যানও। গত বুধবার তিনি নিজের পদত্যাগ পত্র লিজ ট্রাসকে বুঝিয়ে দেন। এমনটি লিজ যাতে পদত্যাগ করেন, সে চাপও সৃষ্টি করেছিলেন সুয়েলা।
বিবিসি বলছে, ব্রিটিশ মন্ত্রিসভা থেকে সুয়েলার পদত্যাগ সরকারি নিয়মের প্রযুক্তিগত লঙ্ঘন। তার পদত্যাগটি হয় ক্ষোভের কারণ থেকে। যার পেছনে রয়েছে অভিবাসন নিয়ে মতবিরোধ। তিনি তার পদত্যাগপত্রে ‘একটি ভুল করা ও তা স্বীকার করার কথা’ উল্লেখ করেন।
লিজ ট্রাসের সরকারে থাকা অবস্থায় নির্বাচনী ইস্তেহারে থাকা অধিকাংশ প্রতিশ্রুতিই পূরণ করতে পারছে না বলেও দাবি তুলেছিলেন তিনি।
সুয়েলা ব্রেক্সিট সমর্থক হিসেবে বেশ পরিচিত। কারণ, তিনি তখন বরিসকে সমর্থন করেছিলেন। তৎকালীন সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন। বরিসের পদত্যাগের পর প্রধানমন্ত্রী হতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেন সুয়েলা। কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ডের ভোটে বাদ পড়েন।
লিজ ট্রাসের গদি নেওয়ার দাবিদার তৃতীয় নারী কেমি ব্যাডেনোচ। তাকে ব্রিটেনের কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, বরিসের পদত্যাগের পর প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচনে তিনিও লড়েছেন। বাদ পড়ে গেলেও নিজের প্রোফাইলকে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন তিনি।
কেমি ব্যাডেনোচ একজন কণিষ্ঠ মন্ত্রী। তিনি সিনিয়র কনজারভেটিভ মাইকেল গভের সমর্থন পেয়েছিলেন। তথাকথিত ‘উইক’ সংস্কৃতির ওপর তার আক্রমনাত্বক কথাবার্তা অন্যান্যদের মধ্যে আলোচনার রসদ জোগায়।
কেমি ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভাগে দায়িত্ব পালন করছেন।
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে আছেন ঋষি সুনাক ও বেন ওয়ালেস। বরিস জনসনও আরও একবার এ পদে নিজের নাম লেখাতে চাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, বসিরের পদত্যাগের পর তার আসনে বসতে চাইছিলেন ঋষি সুনাক। তিনি কনজারভেটিভ পার্টির নতুন নেতা ও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রতিযোগিতায় অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু ভোটের দ্বিতীয় রাউন্ডে টোরি নেতারা লিজকে পছন্দ করেন।
লিজ ট্রাসের ট্যাক্স পরিকল্পনা অর্থনীতির ক্ষতি করবে বলেও সতর্ক করেছিলেন ঋষি। কিন্তু তারপরও ২১ হাজার ভোটে লিজের বিপরীতে হেরে যান তিনি।
২০১৫ সালে রিচমন্ডের নর্থ ইয়র্কশায়ার থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন এ ভারতীয় বংশোদ্ভুত। ২০২০ সালে ফেব্রুয়ারিতে তিনি অর্থমন্ত্রী নিযুক্ত হন।
কনজারভেটিভ এমপি অ্যাঞ্জেলা রিচার্ডসন ঋষিকে সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেসও হতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী। কারণ, ব্রিটিশ এমপিরা তার নেতৃত্ব নিরাপদ মনে করেন। সে হিসেবে অনেকটা এগিয়ে থাকবেন বেন।
এখানে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে টোরি এমপিদের নতুন নেতা নিয়ে বিভক্তির বিষয়টি।
ওয়েলস আলোচনায় আসেন ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বলে। তার অধীনে কিয়েভকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যুক্তরাজ্য।
বেন বিরোধিতা করতেন ব্রেক্সিটের। কিন্তু তারপরও বরিসের একজন প্রধান সমর্থক ছিলেন তিনি। যে কারণে ২০১৯ সালে মন্ত্রিসভায় আসন পান তিনি।
রাজনীতিবিদ হওয়ার আগে ইউরোপের কয়েকটি দেশে সেনা সদস্য হিসেবে কাজ করেন বেন। জার্মানি, সাইপ্রাস, বেলিজ এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডে ব্রিটিশ সৈন্যদের বিরুদ্ধে বোমা হামলা চালাতে শত্রুপক্ষের চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেন তিনি।
সর্বশেষ নির্বাচনেও তাকে নিয়ে আলোচনা চলছিল। কিন্তু তিনি লিজ ট্রাসকে সমর্থন দেন। ট্রাস ক্ষমতায় এলে মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন হয়। কিন্তু বেন ওয়ালেস স্বপদেই থেকে যান।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০২২
এমজে