মধুপুর (টাঙ্গাইল): ১৭ বছরের জঞ্জাল দূর করে সুবিধা বঞ্চিত পৌর নাগরিকদের পরামর্শে মধুপুর পৌরসভাকে একটা উন্নত সেবা প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে চাই। এজন্য যা যা করা দরকার আমি তা-ই করবো।
রোববার (৩ জানুয়ারি) রাতে বাংলানিউজের সঙ্গে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এমন স্বপ্নের কথা শোনালেন ৩০ ডিসেম্বর (বুধবার) অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে বিপুল ভোটে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত টাঙ্গাইলের মধুপুর পৌরসভার মেয়র মাসুদ পারভেজ। সুবক্তা ও তরুণ এ নেতা মধুপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
আওয়ামী লীগের মনোনীত এ তরুণ মেয়র ২২ হাজার ২৯৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মনোনীত প্রার্থী তিনবারের নির্বাচিত (সাবেক মেয়র) সরকার শহিদুল ইসলাম শহীদ পেয়েছেন ৪ হাজার ৬৫৩ ভোট।
আলাপকালে নব নির্বাচিত মেয়র মাসুদ পারভেজ বলেন, ১৯৯৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয়ে বিশ বছর পার করেছে আমাদের এ পৌরসভা। শুরু থেকে তিন বছর সরকারি প্রশাসক এ পৌরসভার দায়িত্ব পালন করেন।
পরে নির্বাচনের মাধ্যমে তিন মেয়াদে ১৭ বছর (ওয়ান ইলেভেনে দুই বছরসহ) একই ব্যক্তি এ পৌরসভায় মেয়র থেকেও কোনো কাজ করেননি। নাগরিকদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সুখ দুঃখের কথা শোনা তো দূরের কথা মেয়র সাহেবের সঙ্গে দেখা করার বিষয়টিও ছিল অনেকটা ভাগ্যের ব্যাপার।
কোনো নাগরিক জটিল সমস্যা নিয়ে তার কাছ থেকে সমাধান পেয়েছেন এমন উদাহরণ পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ এতোদিন ধরে পৌরসভার নাগরিকরা নানাদিক দিয়ে বঞ্চিত ছিলেন। এ বঞ্চনার হাত থেকে আমি তাদের রক্ষা করতে চাই।
দীর্ঘদিন অন্ধকারে থাকা পৌরসভাকে আলোকিত করতে চাই। নাগরিক সুবিধা সম্পন্ন উন্নত-আধুনিক পৌরসভা গঠনের লক্ষ্যে কাজ করাই আমার একমাত্র লক্ষ্য হবে। শুধু পৌরসভা নয় গোটা মধুপুরের চেহারা পাল্টে যাচ্ছে এবং যাবে।
অনেকটা জোর নিয়ে এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করার কারণ বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সংসদে আমাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন। উপজেলায় আছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের অভিভাবক। আমি পৌরসভার দায়িত্ব পেয়েছি। ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরাও আমাদের দলের। এখন প্ল্যান মাফিক শুধু এগিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ।
মাসুদ পারভেজ ছাত্র জীবনেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন। অবিরাম যুক্তি নির্ভর কথার গাথুনির বক্তা হিসেবে অনেকের সুদৃষ্টিতে পড়েন তিনি। ধাপে ধাপে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পথ বেয়ে একই সঙ্গে তিনি এখন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক।
তার সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় উঠে আসে প্রাসঙ্গিক অতীত। তিনি তখন উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। ১৯৯৯ সালে এ পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী দেওয়া হয় ছাত্রলীগের সভাপতি প্রভাবশালী সরকার শহিদকে। প্রার্থী হন মাসুদ পারভেজও।
দলের বিপরীতে নেতা আর কর্মীহীন বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুদ পারভেজ পরাজিত হন। পরাজিত হয়েও নির্বাচনী মাঠ ছাড়েননি তিনি। দলে থেকেই ঘুরে বেড়িয়েছেন পৌর এলাকার পথে প্রান্তরে। ওদিকে নির্বাচিত হয়ে প্রথম মেয়র (তখন ছিল পৌর চেয়ারম্যান) ছাত্রলীগ সভাপতি সরকার শহিদ দলবদল করে বিএনপিতে যোগ দেন। সময় গড়িয়ে যায়।
২০০৫ সালের দ্বিতীয় নির্বাচনে মাঠ গুছিয়েও দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে দলের প্রার্থী বিএনপি থেকে সদ্য আওয়ামী লীগে যোগদান করা খন্দকার আব্দুল গফুর মন্টুর পক্ষে কাজ করে তার পাশে থাকেন মাসুদ পারভেজ।
এবারও বিএনপির সরকার শহিদের কাছে দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ে মাসুদ পারভেজের পরাজয় হয়। ২০১০ সালের তৃতীয় নির্বাচনে মনোনয়নপত্র কিনেও জমা দেননি মাসুদ পারভেজ। কারণ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছরোয়ার আলম খান আবু দলীয় প্রার্থী হয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট এ প্রার্থীও বিএনপির প্রার্থী সরকার শহিদের কাছে পরাজিত হয়েছেন। টানা তিনবার দায়িত্ব পালন করেন সরকার শহিদ। অন্যদিকে মাঠে ময়দানে থেকে ১৭টি বছর পার করে ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন মাসুদ পারভেজ।
এবার দল তাকে মনোনীত করায় দলের সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞ তিনি। বিশেষ করে প্রথমবারের মতো দলের প্রতীক নৌকায় স্থানীয় নির্বাচন করার সুযোগ পেয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
সংসদ সদস্য ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড.আব্দুর রাজ্জাকের উন্নয়নমুখী কর্মকাণ্ডে উপজেলা চেয়ারম্যান ও নিজেকে নিয়ামক হিসেবে কাজ করার আশা ব্যক্ত করে মাসুদ পারভেজ বলেন, স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে আমরা জনগণের কাছাকাছি থেকে সমস্যা ও সমাধানে কাজ করার সুযোগ পাব বেশি, যে সুযোগ এমপি মন্ত্রীর বেলায় নেই। এ সুযোগ কাজে লাগাতে চাই।
২৫.৬২ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ পৌরসভার ৫৬ হাজারের অধিক অধিবাসীর ৩৭ হাজার ৯৫ জন ভোটারের উদ্দেশ্যে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, আমার এ বিজয় জনগণের প্রত্যাশার ফল, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিজয় এবং জরাগ্রস্ত ২০ বছরের এ পৌরসভা উন্নয়নের পথে এক ধাপ এগোনো।
এ পৌর শহরকে উন্নত করার প্রথম প্রতিশ্রুতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, জন্মের পর বিগত দিনে পৌরসভার উন্নতি যতটুকু না হয়েছে আগামী ৫ বছরে তার তুলনামূলক চিত্র সবাই দেখতে পারবে ইনশাআল্লাহ।
জীবনের শেষদিন পর্যন্ত মানুষের পাশে থেকে তাদের জন্য কাজ করে যাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০১৬
আরএ