ইসলাম শান্তি ও মানবতার ধর্ম। এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই।
কোনো মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপদগ্রস্ত হলে তাদের পাশে দাঁড়ানো ইসলামের শিক্ষা। মহানবী (সা.)-এর আদর্শ। নামাজ, রোজার মতো শ্রেষ্ঠতম ইবাদত। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন- ‘মুমিনদের উদাহরণ তাদের পারস্পরিক ভালোবাসা, দয়া ও সহানুভূতির দিক দিয়ে একটি মানবদেহের মতো, যখন একটি অঙ্গ আক্রান্ত হয়, তখন তার পুরো দেহ আক্রান্ত, তখন তার পুরো দেহ ডেকে আনে তাপ ও অনিদ্রা। ’ (সহিহ মুসলিম)। যাদের যে পরিমাণ সামর্থ্য রয়েছে সে অনুযায়ী অসহায়, দুর্গত মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য মহানবী (সা.) নির্দেশ প্রদান করেছেন। নির্দেশ প্রদান করেছেন আপন আপন সাধ্যানুযায়ী জুলুম-অত্যাচার প্রতিহত করার প্রতি। তিনি ফরমান, ‘তোমাদের মধ্যে যে অন্যায় দেখবে সে যেন তার হাত দিয়ে বাধা দেয়, আর যদি হাত দিয়ে বাধা দিতে না পারে তবে যেন মুখ দিয়ে বাধা দেয়, আর যদি মুখ দিয়ে বাধা দিতে না পারে তবে যেন অন্তরে বাধা দেয় (বা পরিকল্পনা গ্রহণ করে)’। আর এটি হলো দুর্বল ইমানের পরিচয়। ’ (সহিহ মুসলিম)। মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘তোমরা বের হয়ে পড় স্বল্প সম্বল নিয়ে অথবা প্রচুর জিনিসের সঙ্গে এবং প্রচেষ্টা কর আল্লাহর পথে নিজেদের জানমাল নিয়ে, এটি তোমাদের জন্য অতি উত্তম, যদি তোমরা বুঝতে পার। ’ (সুরা-আত তাওবাহ-৪১)। মানুষ এবং হিংস্র প্রাণীর মধ্যে মৌলিক পার্থক্য হলো- হিংস্র প্রাণী একে অপরকে খেয়ে বাঁচে। মানুষ পরস্পরের সহযোগিতা করে আনন্দ পায়। মানুষ সামাজিক জীব। তারা হিংস্র প্রাণী নয়। তাই মানুষ মানেই মিলেমিশে থাকবে। পরস্পর কল্যাণকামী হবে। কারও ওপর অন্যায় আচরণ, জুলুম-অত্যাচার, মানবতাবিরোধী কোনো কাজ তারা করবে না। ক্ষমতার দাপটে, টাকার প্রাচুর্যে এবং জাতিগত অহমিকায় কোনো মানুষ অসহায়-দুর্বলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে না। আল্লাহতায়ালা অত্যাচারীকে পছন্দ করেন না। অত্যাচারীদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়ানোর জন্য তিনি মানবসমাজকে প্রত্যাদেশ দিয়েছেন। তিনি ঘোষণা করেন, ‘আর তোমাদের কী হলো যে তোমরা লড়াই কর না আল্লাহর পথে এবং অসহায় নর-নারী ও শিশুদের পক্ষে যারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের এ জনপদ যার অধিকারী অত্যাচারী, তা থেকে নিষ্কৃতি দান করুন। আর আপনার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য অভিভাবক ঠিক করে দিন এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দিন। ’ (সুরা আন-নিসা-৭৫)।
অত্যাচারী আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত। জান্নাত থেকে বিতাড়িত। অত্যাচারীর বিরুদ্ধে আল্লাহর বিধান এবং তাঁর অবস্থান অনেক কঠোর। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, ‘তোমরা অত্যাচারীদের মোকাবিলার জন্য যথাসাধ্য শক্তি সংগ্রহ এবং অশ্ববাহিনী প্রস্তুত রাখবে, যেন আল্লাহর শত্রুদের ওপর এবং তোমাদের শত্রুদের ওপর প্রভাব পড়ে। ’ (সুরা আল আনফাল-৬০)।
বর্তমান সমাজে বিরাজমান অশান্তি ও অস্থিরতার মূল কারণ হলো- জুলুম, অত্যাচার। ইসলামী পরিভাষায় অত্যাচারী হলো সীমা লঙ্ঘনকারী। সীমা লঙ্ঘনের অপরাধে আল্লাহতায়ালা এ পৃথিবীর প্রতাপশালী ও পরাশক্তি কাউকে ছেড়ে দেননি। ভবিষ্যতেও কেউ রেহাই পাবে না। অতএব আমাদের জন্য জুলুম-অত্যাচার পরিহার করা এবং যাবতীয় অপরাধ প্রতিহত করার দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ করা বর্তমান সময়ের দাবি। মানবিক ও ইমানি দায়িত্ব।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০২৩
জেএইচ
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।