ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

তাওবা করার সঠিক নিয়ম

ইসলাম ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২৪
তাওবা করার সঠিক নিয়ম

ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল ও পরিভাষা হলো তাওবা। তাওবা বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তার শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি ও প্রতিনিধি মানুষের জন্য বড় নেয়ামত, করুণা ও দয়া।

এর মাধ্যমে মানুষ পাপ ও পঙ্কিলতা মোচন করে।

মুসলিমসমাজে তাওবা ব্যাপক পরিচিত বিষয় হলেও তাওবা কেন অপরিহার্য, কী এর গুরুত্ব ও কীভাবে তাওবা করতে হয় সেই সম্পর্কে অনেকের স্পষ্ট ও সঠিক ধারণা নেই। তাওবা শব্দের আক্ষরিক অর্থ ফিরে আসা ও প্রত্যাবর্তন করা।

পারিভাষিক অর্থে তাওবা হলো, শরিয়ত বহির্ভূত নিষিদ্ধ কাজ ত্যাগ করে ইসলাম নির্দেশিত কাজ করার মাধ্যমে আল্লাহর পথে ফিরে আসা এবং আল্লাহর বিধানের ওপর অটল-অবিচল থাকা। আল্লাহ তাআলা মুসলিম ও অমুসলিম সবাইকে তাওবা করার আদেশ দিয়ে আহ্বান করেছেন।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমার সকলেই আল্লাহর কাছে তাওবা করো; যাতে তোমরা সফল হতে পারো। ’ (সুরা আননূর, আয়াত: ৩১)

আল্লাহ তাআলা আরও ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা করো; খাঁটি তাওবা। ’ (সুরা আত-তাহরিম, আয়াত:০৮)

রাসুল (সা.) বলেন, ‘ইয়া আইয়্যুহান নাসু তুবু ইলাল্লাহি’ অর্থাৎ হে মানবজাতি! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা করো— এর অর্থ হলো- আল্লাহর নিকট ফিরে আসো, প্রত্যাবর্তন করো। ’ (মুসলিম, হাদিস নং: ৭০৩৪)

বিশেষজ্ঞ আলেমরা সর্বসম্মতিক্রমে বলেন, সর্বদা তাওবা করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ওয়াজিব।

ইমাম কুরতুবি (রহ.) ও ইমাম নববি (রহ.) এই ঐক্যমতের কথা তাদের কিতাবে উল্লেখ করেছেন।

তাওবা জান্নাত প্রাপ্তি ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং আল্লাহর ক্ষমা ও ভালোবাসা লাভের একটি বড় সুযোগ ও উপায়।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ বেশি বেশি তাওবাকারীকে ভালোবাসেন। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২২২)

আল্লাহর ভালোবাসার পাথেয় হলো তাওবা। আর এই তাওবা হতে হবে শুধু আল্লাহর জন্য। আমরা জানি যে, কর্মের ফলাফল নির্ভর করে নিয়তের ওপর। সুতরাং তাওবা আল্লাহর জন্য হলে আমরা তাওবার কাঙ্ক্ষিত ফজিলত লাভ করতো পারবো।

তাওবা কীভাবে করতে হয়? মহান আল্লাহর হক বা অধিকার সম্পর্কিত হলে তিনটি শর্ত বাস্তবায়ন করলেই তাওবা হয়ে যাবে।

শর্ত গুলো— 

এক. পাপ পুরোপুরিভাবে ছেড়ে দিতে হবে।

দুই. পাপের জন্য অনুশোচনা করতে হবে, লজ্জিত ও অনুতপ্ত হতে হবে।

তিন. ঐ পাপ দ্বিতীয়বার না করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে, দৃঢ় সংকল্প করতে হবে এবং এর ওপর অটল ও অবিচল থাকতে হবে। আর মানুষের হক বা অধিকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হলে আরেকটি শর্ত যুক্ত হবে, তাহলো সেই ব্যক্তি মানুষের কাছে মাফ চেয়ে নিতে হবে অথবা তার পাওনা-প্রাপ্তি, হক ফিরিয়ে দিতে হবে।

এই শর্তগুলো পূরণ করলেই তাওবা শুদ্ধ হবে। অন্যথায় তাওবা বিশুদ্ধ হবে না।  

তাওবা করার নিয়ম-পদ্ধতি

তাওবা করার সুন্দর একটি পদ্ধতি হলো, তাওবা করার জন্য প্রথমে সুন্দর করে অজু করা চাই। এরপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করে আল্লাহ তাআলার কাছে মাগফিরাত ও ক্ষমা চাইতে হবে।

গত জীবনের সব পাপ এবং আদেশ অমান্য করার অপরাধ থেকে মার্জনা চাইতে হবে। তবে এই নফল নামাজ তাওবার জন্য জরুরি নয়। তাওবার সময়-সীমা হলো, মৃত্যুর নিদর্শন প্রকাশ পাওয়ার আগ পর্যন্ত।

এ  সম্পর্কে নবী (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তার বান্দার তাওবা কবুল করেন, যতক্ষণ না সে (মৃত্যু যন্ত্রণায়) গরগর করে। ’ (তিরমিজি, হাদিস নং: ৩৫৩৭)

খেয়াল রাখা জরুরি— তাওবা মানে এই নয় যে, আমরা সেই শেষ সময়ের প্রতীক্ষা করবো আর মৃত্যুর সময় কাছাকাছি এলে তাওবা করে নেবো।

প্রকৃত ব্যাপার হলো আমরা কেউ জানি না ঠিক কখন আমাদের মৃত্যুসময় এসে পড়বে। তাই পাপে মগ্ন থাকার সুযোগ নেই। সর্বোচ্চ এই সময় সীমা মানুষের জন্য, আল্লাহর বান্দাদের জন্য বিশেষ ইহসান। আমরা যদি হাদিসের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই রাসুল (সা.) বলেন, ‘হে মানবজাতি! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা করো; কেননা আমি প্রতিদিনে  শতবার তাঁর নিকট তাওবা করি। ’ (মুসলিম, হাদিস নং ৭০৩৪)।

সুতরাং মুহাম্মাদ (সা.)-এর সুন্নত অনুযায়ী আমাদের প্রতিনিয়ত ও সার্বক্ষণিক তাওবার ওপর থাকা চাই। তাওবা ব্যক্তির একান্ত অনুভূতি, মন ও অন্তরের বিষয়। আমাদের সমাজে দেখা যায় তাওবা পড়ানোর রীতি প্রচলিত। কোনো একজন মানুষ খুবই মুমূর্ষ অবস্থায় আছে, বেঁচে থাকার আশা নেই— তখন মসজিদের ইমাম বা কোনো হুজুর ডেকে এনে তাওবা পড়ানো হয়। অথচ তাওবা কাউকে ডেকে এনে করানো বা পড়ানোর বিষয় নয় বরং তাওবা হলো ব্যক্তি মানুষের একান্ত হৃদয়-মনের ব্যাপার; ব্যক্তি নিজেই স্বয়ং আল্লাহর কাছে তাওবা করবে। আর অপ্রিয় হলেও সত্য যে, এ রকম তাওবার কোনো দৃষ্টান্ত কোরআন-হাদিসে নেই। কোনো সাহাবি ও তাবেয়িদের জীবনে কিংবা মুসলিম উম্মাহর প্রাথমিক যুগের কোনো আল্লাহওয়ালা প্রাজ্ঞ ব্যক্তির কিতাবপত্র বা আমলেও নেই।

তাই আসুন, উপর্যুক্ত তাওবার শর্তগুলো পূর্ণ করার মাধ্যমে সুন্নতসম্মত তাওবা করে আল্লাহর ভালোবাসা হাসিল করি। আর সুযোগ পেলে মন দিয়ে ও অর্থের প্রতি খেয়াল রেখে এই দোয়া পড়ি— ‘আসতাগফিরুল্লাহ ওয়া আতু-বু ইলাইহি’। অর্থ: ‘আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইছি ও তার নিকট তাওবা করছি। ’ আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২৪
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।