ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

সহজ আমলেও মেলে জান্নাত

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৪
সহজ আমলেও মেলে জান্নাত

মুমিন তথা বিশ্বাসী ব্যক্তির পরম আকাঙ্ক্ষা জান্নাত। জান্নাতের জন্যই সে দুনিয়া বিক্রি করে দেয়।

প্রচন্ড শীতের রাতে নামাজের জন্য বিছানা ছাড়ে। আবার তীব্র দাবদাহে নামাজের জন্য মসজিদে ছোটে। ওই জান্নাতের আশা লোভ দমিয়ে রাখে। সংযত করে কাম। আজ বলব জান্নাত পাওয়ার সহজ আমল সম্পর্কে। হাদিস শরিফে রসুল (সা.) এমন কিছু আমলের কথা বলেছেন যেগুলো আমাদের চোখে খুবই হালকা মনে হতে পারে, কিন্তু মিজানের পাল্লায় তা হালকা নয়। যেমন রাস্তা থেকে কাঁটা বা পথচারীদের কষ্ট হতে পারে এমন কোনো বস্তু সরিয়ে দেওয়া (বুখারি ও মুসলিম)।

দুটি বিশুদ্ধ হাদিস গ্রন্থেই এসেছে, রসুল (সা.) বলেছেন, এক ব্যক্তি রাস্তা থেকে কাঁটাযুক্ত ডাল সরিয়ে দিয়েছে এ নিয়তে যে, মানুষের চলাচল সহজ হবে। বিনিময়ে আল্লাহতায়ালা তাকে ক্ষমা করে জান্নাত দিয়ে দিয়েছেন।  
মুসলিম শরিফের অন্য বর্ণনায় এসেছে, এক ব্যক্তি রাস্তায় কাঁটা দেখে বলল, আমি এটা সরিয়ে দেব এ নিয়তে যে, আমার অন্য মুসলমান ভাই যেন কষ্ট না পায়। তার এ কাজে আল্লাহ খুশি হলেন এবং তাকে জান্নাত দিয়ে দিলেন।

হজরত আবুজার (রা.) বলেন, রসুল (সা.) বলেছেন, আমার কাছে উম্মতের আলমনামা পেশ করা হয়। ছোট-বড় সব আমলই আমি দেখতে পাই। এমনকি তোমাদের কেউ যদি রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক কোনো বস্তু সরিয়ে দেয় সেটাও আমি দেখতে পাই’ (মুসলিম)।

বলছিলাম, জান্নাত পাওয়ার অনেক সহজ আমলের কথা। রসুল (সা.) বলেছেন, কিন্তু আমাদের চোখে সেগুলো তেমন গুরুত্ব পায় না। যদি পেত তাহলে আমাদের সড়কগুলো এত নোংরা-কষ্টদায়ক বস্তুতে পূর্ণ থাকত না। আমরা যে শহরে বাস করি, আমাদের বাড়ির আঙিনা, আমাদের চলার পথ এত নোংরা যে, কোনো সভ্য মানুষ দেখলে আমাদের মানুষ নয়, বনের পশু মনে করবে। যদি সত্যিই আমরা রসুলের কথা গুরুত্বের সঙ্গে নিতাম তাহলে নগরীর পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা রাস্তায় ময়লা খুঁজে পেত না পরিষ্কারের জন্য। কেননা জান্নাতের লোভে সবাই সড়ক পরিষ্কার করে ঝকঝক তকতক করে রাখত। জান্নাত পাওয়া যে কত সহজ হাদিসের পাতা থেকে আরও কয়েকটি বর্ণনা তুলে ধরছি পাঠকের সামনে।

হজরত আবুজার (রা.) বলেন, আমি রসুলকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসুল! আমাকে বলুন, বান্দার কোন আমল জান্নাতে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট?

জবাবে রসুল (সা.) বললেন, আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা।

সাহাবি জিজ্ঞেস করলেন, ঈমানের সঙ্গে আর কী আমল করবে?

রসুল (সা.) বললেন, আল্লাহর পথে ব্যয় করবে।

যদি সে ফকির হয়? ব্যয় করার সামার্থ্য না থাকে?

তাহলে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করবে।

যদি সে দুর্বল হয়, তার কথা কেউ না শোনে, কিংবা কাউকে কিছু বলবে এমন প্রভাব না থাকে তাহলে কী করবে?

কাজ জানে না এমন কাউকে কোনো কাজ শিখিয়ে দেবে।

সে নিজেই যদি কোনো কাজ না জানে তাহলে?

নির্যাতিত-নিপীড়িতকে সাহায্য করবে।

সে যদি শক্তিহীন কিংবা নিজেই নিপীড়িত হয়?

এবার রসুল (সা.) বললেন, তুমি তো দেখছি তোমার ভাইদের জন্য কল্যাণের কোনো পথই খোলা রাখবে না। সে যদি কিছুই করতে না পারে অন্তত অন্য কাউকে যেন কষ্ট না দেয়।

আবুজার (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রসুল! যদি কেবল শেষ কথাটির ওপর কেউ আমল করে তাহলে কি সে জান্নাতে যাবে?

রসুল (সা.) বললেন, ঈমান গ্রহণের পর কোনো মুমিন যদি ওপরের কোনো একটি কাজও করে তাহলে তাকে হাতে ধরে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে (বায়হাকি)।

কাউকে কষ্ট না দেওয়া হলো সবচেয়ে পরিশ্রমহীন ইবাদত। জান্নাতে যাওয়ার সবচেয়ে সহজ আমলের একটি। তবে বিপরীত বিষয়টাও মাথায় রাখতে হবে। কাউকে কষ্ট দেওয়ার মাধ্যমে সহজেই আমাদের নেক আমল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আমরা হতে পারি জাহান্নামের বাসিন্দা।  

যদিও আমাদের কথাবার্তা, চালচলন, আচর-আচরণে অন্যকে আমরা কষ্টই দিয়ে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত। জান্নাতে যাওয়ার জন্য যে কেবল মানুষের উপকার করতে হবে কিংবা মানুষের পাশে থাকতে হবে তা নয়, বরং একটি কুকুর কিংবা তার চেয়েও ছোট কোনো প্রাণীকে একটু পানি পান করিয়েও জান্নাত নিশ্চিত করা যায়।  

একবার রসুল (সা.) এক ব্যক্তির কথা বলেন, যে তৃষ্ণার্ত কুকুর দেখে মনে মনে দুঃখবোধ করেছিল, সে নিজের মোজা খুলে কুয়াতে ফেলে পানি তুলে তারপর কুকুরকে পান করতে দেয়। এ আমল আল্লাহর কাছে এত ভালো লেগেছে যে, মৃত্যুর পর আল্লাহ তাকে জান্নাত দিয়ে দেন।  

এ ঘটনা শুনে সাহাবিরা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন, জীবজন্তুর সেবার মধ্যেও নেকি পাওয়া যায়?

জবাবে রসুল (সা.) বলেন, প্রাণ আছে যার মধ্যে তার সেবা করলেই তোমরা নেকি পাবে (বুখারি)।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৪
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।