ঢাকা, সোমবার, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

বন্ধুত্বেও প্রয়োজন মধ্যপন্থা অবলম্বন

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৪
বন্ধুত্বেও প্রয়োজন মধ্যপন্থা অবলম্বন

কিছু সম্পর্ক জন্মগত। যেমন- বাবা-মা, ভাই-বোন ও রক্ত-সম্পর্কীয় আত্মীয়তার সম্পর্ক।

আর কিছু সম্পর্ক তৈরি হয় নিজ চাহিদায়, জীবন চলার পথ মসৃণ করতে। এমন সম্পর্কের সুন্দরতম একটি দিক হচ্ছে- বন্ধুত্ব।

বন্ধুত্বের সম্পর্ক যেহেতু আগে থেকে নির্ধারিত নয় এবং স্থায়ীত্বও নিশ্চিত করে বলা মুশকিল, তাই এ সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন হয় আলাদা যত্নের। সেই সঙ্গে মাঝে-মধ্যে ভালোবাসা প্রকাশের।

মানসিকতার প্রভেদে বন্ধুত্বের বহিঃপ্রকাশ হয় ভিন্নরকম। কেউ মনে করেন, প্রয়োজনে পাশে থাকা কিংবা বিপদে সাহায্য করার নাম বন্ধুত্ব। এর জন্য আলাদা প্রকাশের কোনো প্রয়োজন নাই। কেউ মনে করেন, বন্ধুর সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর না রাখলে কি আর বন্ধুত্ব হয়!
এ কারণে বন্ধুত্বের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কখনও মনে হয়, তার প্রতি কোনো ভালোবাসা নেই। আর এটা ভেবে মনের ভেতরে কষ্ট পুষে রাখেন। আবার কখনও কারও কাছে বন্ধুত্ব হয়ে দাঁড়ায় অপ্রকাশ্য যন্ত্রণা।

কেউ ভাবেন, বন্ধু মানে খোলা খাতা। এ সম্পর্কে কোনো গোপনীয়তা নেই। নিজের সবটাই ভাগাভাগি করে নেওয়াই বন্ধুত্ব। আবার তারাই দু’দিন পর বলেন, বন্ধুত্ব মানে প্রতারণা, দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সুবিধা আদায় করা। কেউবা নিজের গোপনীয়তা বজায় না রাখায় নিজেকেই দোষারোপ করেন।

এবার আসুন, দেখি- ইসলাম বন্ধুত্বের সম্পর্কের ব্যাপারে কি বলেছে। বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে কতটুকু সীমারেখা টেনে দিতে বলেছে।  

ইসলামে অন্য সবকিছুর মতো এখানেও রয়েছে সুন্দর নির্দেশনা। এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘সবচেয়ে উত্তম হলো- প্রতি বিষয়ে মধ্যপন্থা। ’ –বায়হাকি, শোয়াবুল ঈমান ৬৬৫১

এ হাদিসে মূলনীতি বলে দেওয়া হয়েছে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই মধ্যপন্থা উত্তম। বাড়াবাড়ি বা ছাড়াছাড়ি- কোনোটাই ইসলামের আদর্শিক পথ নয়। ঠিক তেমনি বন্ধুত্বও মধ্যপন্থার সীমারেখায় আবদ্ধ একটি সম্পর্ক।

এতো গেলো মূলনীতি। কিন্তু বন্ধুত্ব বা ভালোবাসার ক্ষেত্রে কেমন হওয়া উচিত, সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনাও রয়েছে হাদিসে নববীতে।

ইরশাদ হয়েছে, ‘বন্ধুর সঙ্গে মধ্যপন্থি ভালোবাসা রাখো, হতে পারে সে একদিন তোমার শত্রুতে পরিণত হবে। তেমনি শত্রুর সঙ্গেও মধ্যপন্থি শত্রুতা রাখো, হতে পারে সে একদিন তোমার বন্ধুতে পরিণত হবে। ’ –সুনানে তিরমিজি ২০৬৫

যদি কখনও বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যায়, তখনও ওই সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও পূর্ণ আমানতদার থাকার শিক্ষা দেয় ইসলাম। বন্ধুত্ব ভেঙে গেলে কোনো অযাচিত বিষয় প্রকাশ ও বিদ্বেষ পোষণ ইসলামে নিষিদ্ধ। আমানতের খেয়ানত যেমন মুনাফিকের লক্ষণ, তেমনি বিদ্বেষভাব মন্দ চরিত্রের লক্ষণ। উপরন্তু কোনোভাবে যদি বন্ধুর কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করা হয়, তাহলে জানা থাকা উচিত হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে কারও ক্ষতি করবে, আল্লাহ তার ক্ষতি করবেন। আর যে কারও প্রতি কষ্ট পৌঁছাবে আল্লাহ তার প্রতি কষ্ট পৌঁছাবেন। ’ –সুনানে তিরমিজি ২০০৫

সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিজেকে এতটা উজাড় না করা চাই, যেন পরে তা অস্ত্র হয়ে দাঁড়ায়। আবার এতটা অন্তর্মুখী হওয়াও বন্ধুত্বের জন্যে ক্ষতিকর, যা দূরত্ব তৈরি করে। মাঝে-মধ্যে প্রকাশ প্রয়োজন- যেন সম্পর্কটা সুন্দর হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৪
এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।