একজন মুসলমানের প্রতি অপর মুসলমানের দায়িত্ব-কর্তব্য (হক) সম্পর্কে যে কয়েকটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে, সেগুলোর প্রত্যেকটিতে ‘রোগীর পরিচর্যা’র বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত আছে। এ ছাড়াও কিয়ামতের ময়দানে রুগ্ন ব্যক্তির পক্ষে মহান আল্লাহ নিজেই ফরিয়াদি হয়ে আদম সন্তানকে জিজ্ঞেস করবেন, ‘হে আদম সন্তান! আমি রুগ্ন ছিলাম তুমি পরিচর্যা করোনি।
’ -মুসলিম
অসুস্থ কোনো মুসলমান ভাইয়ের সেবায় নিয়োজিত হতে পারাকে নিজের জন্য সৌভাগ্যের বিষয় মনে করতে হবে। রুগ্ন ব্যক্তির সেবার মাধ্যমে প্রভুর নৈকট্য লাভ করা সহজ। রোগী পরিচর্যার ফজিলত সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। নফল ইবাদতগুলোর মধ্যে রোগী দেখতে যাওয়া একটি উত্তম ইবাদত।
এ প্রসঙ্গে হজরত আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, আমি হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘যে কোনো মুসলমান সকালবেলা যদি কোনো রুগ্ন মুসলমানকে দেখতে যায়, তার জন্য ৭০ হাজার ফেরেশতা সন্ধ্যা পর্যন্ত দোয়া করতে থাকে। আর যদি সে তাকে সন্ধ্যা বেলায় দেখতে যায়, তাহলে তার জন্য ৭০ হাজার ফেরেশতা সকাল পর্যন্ত দোয়া করতে থাকে এবং তার জন্য জান্নাতে একটি ফলের বাগান তৈরি করা হয়। -তিরমিজি ও আবু দাউদ
হজরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে উত্তমরূপে অজু করে সওয়াবের উদ্দেশ্যে তার কোনো মুসলমান রুগ্ন ভাইকে দেখতে যাবে, তাকে জাহান্নাম থেকে ৬০ বছরের পথ দূরে রাখা হবে। ’ -আবু দাউদ
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে কোনো মুসলমান কোনো রুগ্ন মুসলমানকে দেখতে যায় এবং ৭ বার বলে, আমি মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছি, যিনি মহান আরশের অধিকারী, তিনি যেন আপনাকে আরোগ্য দান করেন। এতে তাকে নিশ্চয় আরোগ্য দান করা হয়, যদি না তার মৃত্যু উপস্থিত হয়। -আবু দাউদ ও তিরমিজি
রুগ্ন ব্যক্তিকে দেখতে গিয়ে নবী করিম (সা.) তাদের জন্য নিম্নোক্ত দোয়া করতেন—
‘আজহিবিল বাছা রাব্বান-নাসি, ওয়াশফি আনতাশ শাফি, লা শিফায়া ইল্লা শিয়ায়ুকা- শিফায়ুন লা ইউগাদিরু সাকামান। ’
হজরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) স্বীয় পরিবারের কোনো রোগীকে দেখতে গেলে তার গায়ে হাত রেখে বলতেন, ‘হে আল্লাহ! হে মানুষের প্রভু! রোগ দূর কর, রোগ-মুক্তি দান কর। তুমিই রোগ-মুক্তি দানকারী। তোমার রোগ-মুক্তি ছাড়া কোনো রোগ-মুক্তি নেই। এমন রোগ-মুক্তি কোনো রোগ বাকী রাখে না। ’ –বোখারি
হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে রুগ্ন ব্যক্তিকে দেখতে রওয়ানা হলো, সে আল্লাহর রহমতের সাগরে সাঁতার কাটতে থাকলো, যতক্ষণ না সে তথায় গিয়ে বসে। যখন সে গিয়ে বসল, তখন সে রহমতের সাগরে ডুব দিল। -মালেক ও আহমদ
রোগীকে দেখতে গেলে সামাজিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধি পায়। মান-অভিমান থাকলে তাও দূর হয়ে যায়।
রোগী দেখার নিয়ম হলো, রোগীর কাছে এত সময় অপেক্ষা করা যাবে না যাতে রোগী বিরক্তিবোধ করে। রোগীকে আশ্বস্ত করতে হবে; তার মনোবল চাঙ্গা করার চেষ্টা করতে হবে।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) শিখিয়েছেন, রোগীর কাছে গিয়ে বলতে হবে, ইনশাআল্লাহ আপনি শিগগির ভালো হয়ে যাবেন। অসুস্থতার কারণে গোনাহ মাফ হয়। এ জন্য রোগীর কাছে নিজের জন্য দোয়া চাইতে হবে। কোনো রোগ বা রোগীকে ঘৃণা করা যাবে না। রোগী দেখলে অন্তর নরম হয়, স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ জাগে। এ জন্য বেশি বেশি রোগী দেখা এবং রোগীর সেবা করার কথা বলা হয়েছে। মানুষ তার মানবিক বিবেচনা থেকেই অসুস্থ ব্যক্তির পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সময়: ০৭২৫ ঘণ্টা, মে ১, ২০২৪
এসআই