ঢাকা, সোমবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

রাজনৈতিক সমঝোতা প্রসঙ্গে ইসলাম

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৫
রাজনৈতিক সমঝোতা প্রসঙ্গে ইসলাম

দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের ক্ষেত্রে সরকার ও বিরোধী জোটের মাঝে রাজনৈতিক সমঝোতার কোনো বিকল্প নেই। এটা গণতন্ত্রের মূল কথা।

কিন্তু গণতান্ত্রিত রীতিনীতিকে উপেক্ষা করে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে দেশে আজ অশান্তির আগুন দাউদাউ করে জ্বলছে।

মানুষকে ভয়ে ভয়ে ঘর থেকে বের হতে হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে দেশের সাধারণ জনগণকে মুক্তি দিতে উভয় জোটকেই সমঝোতায় আসতে হবে। নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা, সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এটা সবার কাছেই প্রত্যাশিত। যেহেতু রাজনীতির মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো জনকল্যাণ ও জনস্বার্থ। তাই জনকল্যাণের কথা বিবেচনা করে হরতাল, জ্বালাও-পোড়াও, ধর্মঘট, অবরোধ, গাড়ী ভাঙচুর ইত্যাদি বন্ধের ব্যাপারে একমত হতে হবে। কেননা এতে কোনো জনকল্যাণ নেই। আছে কেবল সীমাহীন জনদুর্ভোগ ও মানুষের বদদোয়া। এ অবস্থা দীর্ঘায়িত হতে দেওয়া যায় না।

ইতিহাসে আছে, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আরবদের মাঝে পরস্পরের ৬০, ৮০, ১২০ বছর পর্যন্ত রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলেছে। যে যুদ্ধের নৃশংসতায় মারা গেছে হাজার হাজার মানুষ। অবশেষে তা বন্ধ হয়েছে ইসলামের আগমনে। বর্তমানের অবস্থা ততোটা ভয়াবহ নয়, তবুও বলা যায়- আজও সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব একই পথে, একই নিয়মে। কারণ ইসলাম দেখিয়েছে- কীভাবে, কোন্ পদ্ধতিতে বহুমত ও দর্শনকে একত্রে নিয়ে পথ চলতে হয়।

আমাদের নবী হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুমহান জীবনচরিত ছিল উদারতা, শান্তিপূর্ণ সমঝোতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। জন্মভূমি মক্কাবাসীর অসহনীয় ঠাট্টা-বিদ্রুপ, অত্যাচার-নির্যাতন চরমে পৌঁছালেও তিনি কিছুতেই ধৈর্য্য হারাননি। হিজরত করে মদিনায় গিয়ে সেখানে তিনি সমঝোতার মাধ্যমে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন মদিনার সনদের আলোকে। আবার হিজরতের পর হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) মক্কা ও তায়েফ বিজয়ের সময় যে অতুলনীয় ক্ষমার আদর্শ প্রদর্শন করেছেন, বিশ্বের ইতিহাসে এর কোনো দৃষ্টান্ত নেই। তার ক্ষমাসুন্দর উদারতা ও শান্তিপূর্ণ সমঝোতার সুমহান চরিত্র বিশ্ববাসীর পথপ্রদর্শক হিসেবে পৃথিবীর ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। আজ অবধি তার এই রাজনৈতিক দর্শনকে কেউ ভুল বলতে পারেননি। বরং ওই সব পদ্ধতি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে। ইতিহাসের পাতায় তা ঠাঁইও করে নিয়েছে।

ইতিহাসের আলোকে বর্তমান প্রেক্ষাপটে বলতে হয়, উদ্ভুত যে কোনো সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সুরাহা করতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারকে যেমন নমনীয় হতে হবে, তেমনি বিরোধী পক্ষকেও এগিয়ে আসতে হবে। প্রয়োজনে সবদল ও মতের নেতৃবৃন্দের পরামর্শ গ্রহণ করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সমঝোতার বিপরীতে কোনো প্রকার জিদ, একগুয়েপনা ও হঠকারিতার আশ্রয় নেওয়া যাবে না। হিংসা ও প্রতিশোধ নয়, ক্ষমার মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে। এটা ইসলামের শিক্ষা। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর শিক্ষা। সেই শিক্ষার আলোকে রাজনৈতিক বিরোধ মেটাতে সংলাপ, আলাপ-আলোচনা, পারস্পরিক সমঝোতা ও সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে এসে সবাইকে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী যদি সব ক্ষেত্রে ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে ধৈর্য্যের সঙ্গে প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করা যায়, তাহলে সমাজজীবনে শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। যে সমাজে শান্তিপূর্ণ সমঝোতার চর্চা যতো বেশি, সে সমাজে অপরাধ প্রবণতা ততো কম। সমঝোতার ক্ষেত্রে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে সবাইকে আপোষহীন ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। নাগরিক নিরাপত্ত ও সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। দেশ বাঁচলে সবাই বাঁচবে। কোনো অবস্থাতে কারো প্ররোচনা ও ইন্ধনে মারামারি-হানাহানি করে সমাজ ধ্বংস করা চলবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘন্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।