ঢাকা, সোমবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

এক মিনিটের কিছু ভালো কাজ

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৫
এক মিনিটের কিছু ভালো কাজ

সময়কে কোনো অবস্থাতেই নষ্ট করা ঠিক নয়। প্রজ্ঞাবান ও বুদ্ধিমান লোকেরা সর্বদা সময়ের সদ্ব্যবহার করে থাকেন।

সময়ের হিসেবে এক মিনিট খুব মূল্যবান নয়। কিন্তু এই এক মিনিটে এমন অনেক কাজ করা যায়, যা মানুষের মর্যাদাকে অনেক উচুঁতে নিয়ে যেতে সক্ষম। এক মিনিটের কিছু ভালো কাজের বিনিময়ে প্রচুর সওয়াব অর্জিত হয়। আপনি জীবনে মাত্র এক মিনিট ব্যয় করে আপনার দানের পরিধি বাড়াতে পারেন, নতুন কিছু উপলব্ধি করতে পারেন, কোনো কিছু মুখস্থ করতে পারেন। শুধু এক মিনিটের কাজে আপনার আমলনামায় ভালো কিছু কাজ লেখা হবে— যদি আপনি জানেন কিভাবে এক মিনিটকে কাজে লাগাতে হয় এবং বাস্তবে কাজে লাগান।

আল্লাহর রহমতে একটু চেষ্টার মাধ্যমে আপনি মাত্র এক মিনিটে বেশ কিছু উত্তম আমল করতে পারেন। নিম্নে এমনই কিছু আমলের প্রস্তাবনা পেশ করা হলো—

১. মাত্র এক মিনিটে আপনি সূরা ফাতেহা পড়ে নিতে পারেন। একবার সূরা ফাতেহা পড়লে ৬০০টিরও বেশি নেকি পাওয়া যায়।

২. এক মিনিটে আপনি সূরা ইখলাস (কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ) অন্তত কয়েকবার পড়তে পারেন। এই সূরা একবার পাঠ করলে কোরআন শরীফের এক তৃতীয়াংশ পড়ার সমান সওয়াব পাওয়া যায়।
 
৩. এক মিনিটে আপনি কোরআন শরীফের এক পৃষ্ঠা পাঠ করতে পারেন, ইচ্ছা করলে এক মিনিটে আপনি ছোট্ট একটি আয়াতও মুখস্থ করতে পারেন।

৪. এক মিনিটে আপনি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া-লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির’ দোয়াটি কয়েক বার পড়ে নিতে পারেন। এই দোয়ার অনেক ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে।

৫. এক মিনিটে আপনি অনেক বার ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী’ ১০০ বার পড়তে পারেন। কিতাবে আছে, যে ব্যক্তি একদিনে এই দোয়াটি ১০০ বার পড়ে তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়; যদিও তা সমুদ্রের ফেনার সমান হয় না কেন।

৬. এক মিনিটে আপনি ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি ওয়া সুবহানাল্লাহিল আজীম’ অন্তত ৫০ বার পড়তে পারেন। এ দু’টি এমন বাক্য যা পড়তে খুব সহজ; আমলের পাল্লায় অনেক ভারী ও আল্লাহর নিকট অতি প্রিয়। যেমনটি বর্ণনা করেছেন ইমাম বোখারি ও ইমাম মুসলিম।

৭. নবী (সা.) বলেছেন, ‘সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার’ পাঠ করা যা কিছুর ওপর সূর্য উদিত হয়েছে সেসব কিছু থেকে আমার নিকট অধিক প্রিয়। আপনি এক মিনিটে এ বাক্যগুলো অনেক বার পড়তে পারেন। এ বাক্যগুলো আল্লাহর নিকট অতি প্রিয়। এগুলো সর্বোত্তম কথা এবং আমলের পাল্লাতে এগুলোর ওজন অনেক বেশি। এসব হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে।

৮. এক মিনিটে আপনি ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লাবিল্লাহ’ (অর্থ: কোনো উপায় সামর্থ্য নেই, কোনো শক্তি নেই আল্লাহ ছাড়া) ৫০ বারের বেশি পড়তে পারেন। এ বাক্যটির সওয়াব জান্নাতের জন্য সঞ্চিত অমূল্য রত্ন। হাদিসে এসব স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। একইভাবে এই দোয়া মানুষের কষ্টসাধ্য দায়িত্ব বহন ও কঠিন কাজসমূহ সঠিকভাবে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে এক মহৌষধ।

৯. এক মিনিটে আপনি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (অর্থ: আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই) প্রায় ৫০ বার পড়তে পারেন। এটি সর্বশ্রেষ্ঠ বাক্য ও তাওহিদের বাণী। যে ব্যক্তির শেষ কথা হবে এই বাক্য, তিনি জান্নাতে প্রবেশ করবেন। এছাড়াও এর ফজিলত ও মর্যাদার ব্যাপারে আরও অনেক বর্ণনা রয়েছে।

১০. এক মিনিটে আপনি আল্লাহর কাছে ১০০ বারের বেশি ইসতিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারেন। অনেকবার ‘আসতাগফিরুল্লাহ’ পড়তে পারেন। এই তাসবিহ ক্ষমা প্রাপ্তি ও জান্নাতে প্রবেশের উপায়। এটি সুখময় জীবন, শক্তি বৃদ্ধি, বিপদ-আপদ রোধ, সকল কাজ সহজীকরণ ও বৃষ্টি বর্ষণ ইত্যাদির মাধ্যম।

১১. এক মিনিটে আপনি নবী (সা.)-এর ওপর অন্তত ৫০ বার দরূদ পাঠ করতে পারেন। সংক্ষেপে পঠিত দরুদ হলো— ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। ’ এর প্রতিদানে আল্লাহ আপনার ওপর ৫০০ বার রহমত পাঠাবেন। কারণ একবার দরুদ পাঠ করলে আল্লাহ ১০ বার এর প্রতিদান দেন।

১২. এক মিনিটে আপনি সহজবোধ্য উপকারী কোনো বইয়ের দুই পৃষ্ঠার বেশি পড়তে পারেন, এক মিনিটের টেলিফোন যোগাযোগের মাধ্যমে আপনি আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করতে পারেন। হাদিসে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে।

১৩. এক মিনিটে আপনি দুই হাত তুলে ব্যাপক অর্থবোধক দোয়াগুলো হতে পছন্দমতো যে কোনো দোয়া করতে পারেন। এক মিনিটে আপনি কয়েকজনকে সালাম দিতে পারেন ও তাদের সাথে মুসাফাহা করতে পারেন। হাদিসে সালাম বিনিময়ের অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে।

১৪. এক মিনিটে আপনি কাউকে কোনো একটি মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকতে নিষেধ করতে পারেন, পক্ষান্তরে এই এক মিনিটে আপনি একটি ভালো কাজের উৎসাহ-অনুপ্রেরণা দিতে পারেন, পারেন কাউকে একটি ভালো নসিহত করতে।

১৫. এক মিনিটে আপনি একজন দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত মানুষকে সান্ত্বনা দিতে পারেন, এক মিনিটে আপনি পথ থেকে ক্ষতিকর কোনো বস্তু অপসারণ করতে পারেন, কোনো পথহারা ব্যক্তিকে পথ দেখিয়ে দিতে পারেন।
   
বস্তুত এক মিনিটের সদ্ব্যবহার আর অবহেলায় কাটানো বাকি সময়গুলো হিসাব করে আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন আপনার করণীয়। মানুষ হিসেবে কোনো অর্জন ছাড়া যেন আমাদের কোনো সময় ব্যয় না হয়, সেদিকে সচেষ্ট থাকা আবশ্যক। বস্তুত একটু সচেতনতাই পারে আমাদেরকে সময়ের অপব্যয় করা থেকে বেঁচে থাকতে।

উল্লেখিত এই এক মিনিটের আমলের ক্ষেত্রে আপনাকে তেমন কিছু করতে হবে না। এগুলোর জন্য আপনার পবিত্রতার প্রয়োজন নেই, ক্লান্তি নেই, নেই কায়িক কোনো শ্রম। বরং আপনি এ আমলগুলো করতে পারেন—যখন আপনি পায়ে হেঁটে চলছেন অথবা গাড়িতে চড়ে কোথাও যাচ্ছেন অথবা শুয়ে আছেন অথবা দাঁড়িয়ে আছেন অথবা বসে আছেন অথবা কারও জন্য অপেক্ষা করছেন। প্রয়োজন শুধু একটু সদিচ্ছার।

চিন্তাশীল আলেমরা বলেছেন, এ আমলগুলো সুখী হওয়ার উপকরণ, আত্মপ্রশান্তি লাভের মাধ্যম, চিন্তা ও দুঃশ্চিন্তা দূর করার উপায়।

বাংলাদেশ সময় : ১৬২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।