ঢাকা, সোমবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

প্রাচীন নিদর্শন সৈয়দপুরের চিনি মসজিদ

সাইফুর রহমান রানা, ডিভিশনাল স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, রংপুর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৫
প্রাচীন নিদর্শন সৈয়দপুরের চিনি মসজিদ সংগৃহীত

নীলফামারীর সৈয়দপুর বাংলাদেশের প্রাচীন শহরগুলোর মধ্যে একটি। ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য এই শহরটি অনেক আগে থেকেই প্রসিদ্ধ হলেও অনেকের কাছে সৈয়দপুর ‘রেলের শহর’ বলে বেশি খ্যাত।



এই শহরের প্রাচীন সৌন্দর্যের স্থাপত্য নিদর্শন হচ্ছে সৈয়দপুরের ‘চিনি মসজিদ’। যা অনেকের কাছে ‘চীনা মসজিদ’ নামে বেশি পরিচিত। মসজিদটি নীলফামারী সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে সৈয়দপুরে অবস্থিত।

ঐতিহাসিক এই মসজিদ নির্মাণের প্রেক্ষাপট ও ইতিহাস বেশ সুদীর্ঘ। ১৮৬৩ সালে হাজী বাকের আলী ও হাজী মুকু নামের দু’জন ধর্মপ্রাণ বাসিন্দা সৈয়দপুর শহরের ইসবাগ এলাকায় ছন ও বাঁশ দিয়ে প্রথমে মসজিদটি নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে এলাকাবাসীর সহায়তায় তা টিনের ঘরে রূপান্তরিত হয়।

পরে এলাকার লোকেরা মসজিদটি নির্মাণের লক্ষ্যে একটি ফাণ্ড গঠনে উদ্যোগী হয়। এরই প্রেক্ষিতে স্থানীয়রা তাদের মাসিক আয়ের একটি অংশ দান করে মসজিদ নির্মাণের জন্য একটি ফান্ড গঠন করেন। এরপর শুরু হয় মসজিদের নির্মাণ কাজ।

লোকমুখে শোনা যায়, শঙ্কু নামের জনৈক হিন্দু রাজমিস্ত্রী দৈনিক ১০ আনা মজুরিতে মসজিদের নির্মাণ কাজ নতুনভাবে শুরু করেন। স্থানীয় এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে তাকে সাহায্য করতে থাকে।

মসজিদের সৌন্দর্য বাড়াতে মসজিদের দেয়ালে চিনামাটির থালার ভগ্নাংশ ও কাঁচের ভগ্নাংশ বসানো হয়। এই পদ্ধতিকে বলা হয় ‘চিনি করা’ বা ‘চিনি দানার কাজ করা’। এখান থেকেই মসজিদের নাম হয়- চিনি মসজিদ বা চীনা মসজিদ। সৌন্দর্যের কাজে ব্যবহৃত চিনামাটির উপকরণসমূহ আনা হয়েছিল কলকাতা থেকে। ঐতিহাসিক এই মসজিদের নকশা করেন মো. মোখতুল ও নবী বক্স।

মসজিদের অনন্য কারুকার্যে সত্যিই মুগ্ধ হতে হয়। মসজিদের দেয়ালে অঙ্কিত ফুলদানি, ফুলের ঝাড়, গোলাপ ফুল, একটি বৃত্তে একটি ফুল, চাঁদতারাসহ নানা চিত্র রয়েছে। এ মসজিদ তৈরিতে প্রচুর মার্বেল পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। চিনি মসজিদের সৌন্দর্য দেশ- বিদেশের প্রচুর পর্যটককে আকর্ষণ করে বলেই তারা ছুটে আসেন। নিজ চোখে না দেখলে চিনি মসজিদের সৌন্দর্য উপলব্ধি করা যাবে না। ২৭টি মিনার রয়েছে মসজিদটিতে। এই মসজিদের পিছনে রয়েছে খ্রিস্টানদের প্রাচীন একটি কবরস্থান।

মসজিদে ২৪৩টি শংকর মর্মর পাথর রয়েছে। রয়েছে ছোট ছোট ৩২টি মিনারসহ ৩টি বড় গম্বুজ। মসজিদে একসঙ্গে প্রায় পাঁচ শতাধিক লোক নামাজ আদায় করতে পারেন।

এই মসজিদে রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণে দু’টি ফটক। মসজিদের গোটা অবয়ব রঙিন চকচকে পাথরে মোড়ানো। আর বারান্দা বাঁধানো সাদা মোজাইকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৬ ঘন্টা, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।