ঢাকা, সোমবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোরআন

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৫
বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোরআন ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র কোরআন এক বিস্ময়কর গ্রন্থ। পবিত্র কোরআনে কারিমের মহান লক্ষ্য হলো- মানুষকে সঠিক পথ দেখিয়ে দেয়া এবং মিথ্যার প্রতিরোধ করা।

পবিত্র কোরআনের অলংকারিক সৌন্দর্য, বাগ্মীতা ও প্রজ্ঞা কোরআনেরই মোজেজা বিশেষ। আর জ্ঞানীদের জন্য কোরআন এক অলৌকিক সম্পদ ভান্ডার। আইন প্রনেতাদের জন্য এটি সবচেয়ে সামাজিক আইনের আধার। কোরআনে রয়েছে দুনিয়াবাসীর জন্য নজিরবিহীন সব নীতি। তাই সংক্ষেপে বলা যায়, পবিত্র কোরআন সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য এমনসব বাস্তবতা ও রহস্যের আকর- যে বাস্তবতাগুলো মানুষ কোরআন ছাড়া কখনও উদঘাটন করতে পারবে না।

সর্বদা বিশ্ববাসী কোরআনের অসীম সৌন্দর্যে অভিভুত ও বিমুগ্ধ হয়। এরই ধারাবাহিকতায় পবিত্র কোরআন নিয়ে চলে নানাবিধ গবেষণা। হয় কোরআন নিয়ে স্বপ্নময় অনেক কাজ। যেসব কাজের মাধ্যমে পবিত্র কোরআনে কারিমের মহত্ত্ব আরো প্রজ্জ্বোল হয়ে উঠে।

তেমনি একটি কাজ করলেন আফগানিস্তানের হস্তলিপিকার মোহাম্মদ সাব্বির খেদরি। খেদরি ৫০০ কেজি ওজনের একটি কোরআন তৈরি করেছেন- যা বর্তমানে পৃথিবীর বৃহত্তম কোরআন শরীফ। বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ কোরআনে কারিমের কপির কাজ সমাপ্ত করতে খেদরির সময় লেগেছে প্রায় ৫ বছর।

ক্যালিওগ্রাফার খেদরির করা এই অসাধারণ, নজরকাড়া, আনিন্দ্য সুন্দর ও সুসজ্জিত এই কোরআনটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কোরআন বলে স্বীকৃতি পেয়েছে। এ প্রসঙ্গে খেদরি বলেন, ‘আমি যথাসম্ভব চেয়েছি আকর্ষণীয় রঙের লেখায় পবিত্র এই কোরআনের কপিটিকে সাজিয়ে সুন্দর করে তুলতে। ’

সৃষ্টিশীল এই কাজে খেদরিকে সহযোগিতা করেছেন আরো ৯ জন ব্যক্তি। কোরআনটি রাখা হয়েছে বিশেষভাবে তৈরি একটি কক্ষে। যা কাবুলের কালচারাল সেন্টারে অবস্থিত।

খেদরির এই বৃহৎ কোরআন ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত একটি এটলাস কেও ছোট করে দিয়েছে। যার পরিমাপ দৈর্ঘ্যে ১.৭৮ মিটার আর প্রস্থে ১.০৫ মিটার। যদিও এটি বিশ্বের দীর্ঘতম বই হিসেবে নাম করতে পারেনি। বিশ্বের দীর্ঘতম বইটি বার্মায় রয়েছে।

১০০০ পাউন্ড ওজনের এই কোরআন শরিফটির দৈর্ঘ্য ৭ দশমিক ৫ ফুট ও প্রস্থ ৫ দশমিক ১০ ফুট। পৃষ্ঠা সংখ্যা ২১৮টি। আফগান সরকারের হজ ও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে তৈরি হওয়া এই কোরআন শরিফের প্রচ্ছদে ব্যবহার করা হয়েছে ২১টি গবাদিপশুর চামড়া। দামি চামড়ার তৈরি প্রতিটি পৃষ্ঠায় অপরূপ সোনালি ক্যালিওগ্রাফিতে লেখা হয়েছে আয়াতসমূহ।

এই কোরআন শরিফ তৈরি করতে আফগানিস্তানের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে ব্যয় করতে হয়েছে তিন লাখ পাউন্ড। ২০০৯ সালে শুরু করে ২০১২ সালের প্রথমদিকে কাজ শেষ হয়।

আফগানিস্তানের আগে পৃথিবীর বৃহত্তম কোরআন শরিফ তৈরি হয়েছিল রাশিয়ার তাতারস্তানে। ৮০০ কেজি ওজনের ৬৩২ পৃষ্ঠা সংবলিত সেই কোরআন শরিফের দৈর্ঘ্য ছিল সাড়ে ৬ ফুটের একটু বেশি এবং প্রস্থ ছিল সাড়ে ৩ ফুট। প্রচ্ছদ তৈরি হয়েছিল সোনা ও মূল্যবান পাথরের গাঁথুনিতে। তাতারস্তানের সেই কোরআন শরিফটি তৈরি করতে সময় লেগেছিল পুরো একটি বছর। তবে সেটা তৈরি করতে কত খরচ পড়েছিল তা অবশ্য অজানাই রয়ে গেছে।

এত পরিশ্রমের পর যদি অন্য কেউ এর চেয়ে বড় কোরআন শরিফ তৈরি করেন তা নিয়ে খেদ থাকবে না খেদরির। বরং হাসিমাখা মুখ নিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম কোরআন নির্মাতা বলেছেন, ‘অন্য কেউ যদি এর চেয়ে বড় কোরআন প্রস্তুত করে তবে আমি খুশি হবো, আর এর মাধ্যমে প্রকাশিত হবে কোরআনের বিশেষত্বই। ’

দীর্ঘতিন ধরে চলমান যুদ্ধে বিধ্বস্ত আফগানিস্তানের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও প্রথা নষ্ট হয়েছে, কিন্তু ধ্বংস হয়নি- এটা বিশ্বকে দেখিয়ে দিতেই বৃহত্তম এ কোরআন তৈরির পদক্ষেপ নিয়েছিলেন খেদরি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫১ ঘন্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।