ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

উদ্যমহীনতার কারণ ও এর প্রতিকার

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৫
উদ্যমহীনতার কারণ ও এর প্রতিকার

উদ্যম শব্দের অর্থ প্রকাশ করে এমন কিছু শব্দ হলো, উ‍ৎসাহ, উদ্যোগ, চেষ্টা, অধ্যবসায় ইত্যাদি। এ শব্দগুলোই প্রমাণ করে যে, মানুষের সাফল্য লাভের জন্যে সবচেয়ে বড় পুঁজি উদ্যম।

সে হিসেবে বলা যায়, যে মানুষ বেশি উদ্যমী তিনি জীবনে বেশি সফল। উদ্যমী মানুষের সফলতার কাছে অর্থ, ক্ষমতা ও প্রভাবও ম্লান হয়ে যায়। দুনিয়ার জীবনে সফলতার জন্য যেমন উদ্যম প্রয়োজন- তেমনি ইবাদত-বন্দেগির ক্ষেত্রেও প্রয়োজন উদ্যমের।

সমাজের অনেক মানুষ আছেন যারা বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে উদ্যমের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেন না। ফলে সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়ে। অনেক সময় দেখা যায়, মানুষ ইবাদত-বন্দেগিসহ কোরআন তেলাওয়াত ও দ্বীনদারির ক্ষেত্রেও উদ্যমহীনতায় ভুগেন। অর্থাৎ তিনি আর আগের মতো ইবাদত-বন্দেগিতে মনোযোগী নন। সব বিষয়ে তিনি নিরুদ্যম হয়ে পড়েছেন।

উদ্যমহীনতার কারণ প্রসঙ্গে আলেমরা বলেন, মানুষের মাঝে উদ্যমহীনতা সৃষ্টির অনেকগুলো কারণ রয়েছে। যেমন—

আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কের দুর্বলতা, আনুগত্য ও ইবাদত পালনে অলসতা, দুর্বল আকাঙ্ক্ষার ব্যক্তিদের সঙ্গে চলাফেরা, দুনিয়া ও দুনিয়ার ভোগবিলাসে মেতে থাকা, দুনিয়ার শেষ পরিণতি নিয়ে না ভাবা এবং যার ফলে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের প্রস্তুতির মধ্যেও দুর্বলতা এসে পড়ে।

কেউ উদ্যমহীনতার রোগে দ্বারা আক্রান্ত হলে সেটা প্রতিরোধ করার বেশ কিছু পন্থা রয়েছে। যেমন—

আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করা : সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহতায়ালার সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করা। আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত হয় বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে। কোরআন বুঝে, চিন্তাভাবনার সঙ্গে অধ্যয়ন করার মাধ্যমে। আল্লাহর কিতাবের মাহাত্ম্য দিয়ে আল্লাহর মাহাত্ম্য অনুধাবন করার মাধ্যমে। আল্লাহর মহান নাম ও গুণাবলী নিয়ে চিন্তাভাবনা করার মাধ্যমে। সর্বোপরি আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ বিশ্বাস সৃষ্টির মাধ্যমে।

আমলের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা : পরিমাণে কম হলেও নিয়মিত ও বিরতিহীনভাবে নফল আমল আদায় করা। মানুষের উদ্যমহীনতায় আক্রান্ত হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হলো- খুব আবেগপ্রবণ হয়ে প্রথম ধাপে অতি বেশি নেক আমল করা। মনে রাখবেন এটা নবী করিম (সা.)-এর আদর্শ নয় এবং উম্মতের প্রতি তার শিক্ষাও নয়। সুতরাং আমল যাই করবেন, তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন।

হজরত আয়েশা (রা.) নবী করিম (সা.)-এর আমলকে বিশেষিত করতে গিয়ে বলেন, ‘তার আমল ছিল নিয়মিত। ’ এ প্রসঙ্গে নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় আমল হলো- নিয়মিত আমল; যদিও সেটা পরিমাণে কম হোক না কেন। ’

অতএব, কোনো মানুষ যদি উদ্যমহীনতা থেকে নিষ্কৃতি পেতে চায় তাহলে সে যেন নিয়মিতভাবে অল্প অল্প আমল করার চেষ্টা করে। অনিয়মিত বেশি আমলের চেয়ে নিয়মিত কম আমল ভালো।

ভালো ও উদ্যমী মানুষের সাহচর্যে থাকা : নেককার ও উদ্যমীদের সাহচর্যে থাকার চেষ্টা করা। সৃষ্টিশীল, জ্ঞানবান ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী ব্যক্তি আপনার মাঝেও উদ্যম সৃষ্টি করবে। অলস ব্যক্তি উচ্চাকাঙ্ক্ষী ব্যক্তির সাহচর্যে থাকতে রাজি হয় না। অতএব, আপনি উচ্চাকাঙ্ক্ষী বন্ধু-বান্ধবের সাহচর্যে থাকার চেষ্টা করুন। যাদের মধ্যে মুখস্থ করা, ইলম অর্জন করা, দাওয়াতি কাজ করা ইত্যাদি করার মতো উচ্চাকাঙ্ক্ষা আছে। এ ধরনের লোক আপনাকে ইবাদতের প্রতি, ভালো কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করবে।

সফল উচ্চাকাঙ্ক্ষীদের জীবন সম্পর্কে জানা : ইসলামি শরিয়তের বিধান মেনে মার্জিত ও বৈধভাবে জীবনে যারা উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছিলেন এমন ব্যক্তিবর্গের জীবনী অধ্যয়ন করা। যাতে আল্লাহর রাস্তায় চলার ক্ষেত্রে আপনার সামনে কিছু উত্তম আদর্শ থাকে।

আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা : উদ্যম ধরে রাখতে, জীবনে সফল হতে আমরা আপনাকে মহান আল্লাহতায়ালার কাছে বেশি বেশি দোয়া করার পরামর্শ দিচ্ছি। এই দোয়া হতে পারে শেষ রাতে। বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি সঠিকভাবে নেক আমল করার জন্য আল্লাহতায়ালার আশ্রয় ও সাহায্য প্রার্থনা করে সে কখনও বিফল হয় না।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৩ ঘন্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৫
এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।