ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

‘আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস’

শ্রমিকরা আমাদের ভাই ও উন্নয়ন সহযোগী

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৫
শ্রমিকরা আমাদের ভাই ও উন্নয়ন সহযোগী

কাল শুক্রবার পয়লা মে, আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস। এবারের দিবসের স্লোগান হলো, শ্রমিক-মালিক ঐক্য গ‍ড়ি, সোনার বাংলা গড়ে তুলি।



আজ থেকে ১২৭ বছর আগে শ্রমিকদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে পরিচালিত এক বিক্ষোভ আন্দোলনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হে মার্কেটে পুলিশের নৃশংস হামলা ও গুলিবর্ষণে নিহত শ্রমিকদের স্মরণে বিশ্বব্যাপী এই দিবসটি পালিত হয়। অধিকার আদায়ের জন্য এই শ্রমিকরা যে আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন দুনিয়াব্যাপী তা ছড়িয়ে পড়েছিল এবং শেষপর্যন্ত তাদের কর্মক্ষেত্রে কাজের অনুকূল পরিবেশ প্রতিষ্ঠা, শ্রমিক মালিক সম্পর্ক, মজুরি নির্ধারণ এবং দৈনিক সুনির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা নির্ণয়ে সহায়তা করেছিল। আন্তর্জাতিক শ্রমদিবসে হে মার্কেটে জীবনদানকারী সেসব শ্রমিকদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। সেই সঙ্গে সারা বিশ্বের মেহনতি মানুষের জন্য রইলো শুভ কামনা।

শ্রম উৎপাদনের একটি অপরিহার্য উপাদান। ভূমি, মূলধন ও সংগঠন ছাড়া যেমন কোনো উৎপাদন কাজ চলতে পারে না- তেমনি শ্রমিকের শ্রম ছাড়াও উৎপাদন কর্মকাণ্ড কল্পনা করা যায় না। একজন শ্রমিক তার মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে যে পণ্য উৎপাদন করেন, তা ভোগ করেই আমরা বেঁচে থাকি। যে জাতি যতবেশি দক্ষ ও যোগ্য শ্রমিকসমৃদ্ধ সে জাতি তত উন্নত। যেহেতু সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে শ্রমিকদের অবদান অপরিহার্য সেহেতু শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক সন্তোষজনক হওয়া বাঞ্ছনীয়। আবার এই সম্পর্ক নির্ভর করে শ্রমিকের মৌলিক চাহিদা পূরণের ব্যাপারে মালিকের দৃষ্টিভঙ্গি ও ফলপ্রসূ পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর।

একজন শ্রমিক সমাজ বা পরিবার বিচ্ছিন্ন কোনো ব্যক্তি নন। তিনি সমাজের যেমন একজন সদস্য তেমনি পরিবারের হয় কর্তা না হয় রোজগারী ব্যক্তি। তার ওপর পরিবারের ভরণপোষণ, সন্তানের লেখাপড়া, পিতামাতার দেখাশোনা প্রভৃতি নির্ভর করে।

আবার যেহেতু মালিক তার মেধা শ্রম মূলধন ও সাংগঠনিক যোগ্যতা দিয়ে তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও উৎপাদন কারখানা স্থাপন করেন সেহেতু তিনিও স্বাভাবিকভাবে এই কার্যক্রম থেকে পর্যাপ্ত মুনাফা প্রত্যাশা করেন। এ অবস্থার প্রেক্ষাপটে উদ্যোক্তা ও শ্রমিক উভয়ের স্বার্থকে সামনে রেখে শ্রমিকের মজুরিসহ তার দায়-দায়িত্ব নির্ণীত হলে কোনো প্রকার সংকটের সৃষ্টি হতে পারে না। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় অতীতে তা হয়নি এবং এর ফলেই দ্বন্দ্ব-সংঘাত সৃষ্টি হয়েছে এবং বর্তমানেও হচ্ছে।

ইসলাম এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা প্রদান করেছে। এখানে লৌকিক মর্যাদার ক্ষেত্রে শ্রমিক-মালিকের ব্যবধান থাকলেও কার্যতঃ মানুষ হিসেবে তাদের মধ্যে কোনো ব্যবধান নেই। একজন প্রকৃত মুমিন তার অধীনস্ত শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকানোর আগেই তাকে তার ন্যায্য পারিশ্রমিক দিতে নির্দেশিত হয়েছেন। জীবন ধারণের মৌলিক উপাদানের যোগান দেয়ার ব্যাপারেও তাদের উভয়ের মধ্যে ইসলাম বৈষম্য সৃষ্টিকে সমর্থন করেনি। আন্তর্জাতিক শ্রমদিবসে আমরা ইসলামের শ্রমনীতি অনুধাবন ও বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল মহলের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।

আমরা জানি, শ্রমিকদের সঙ্গে গৃহভৃত্যের ন্যায় আচরণ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদেরকে ক্রীতদাসের ন্যায় যথেচ্ছভাবে ব্যবহার ও নির্যাতন এবং ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিতকরণ প্রভৃতি ছিল শ্রমিক আন্দোলনের পেছনে মূল কারণ। আমরা আগেই বলেছি এই আন্দোলনের ফলে শ্রমিকরা তাদের কিছু কিছু পাওনা আদায়ে সমর্থ হয়েছেন। কিন্তু শ্রমিকদের শোষণ প্রক্রিয়া একেবারে শেষ হয়েছে বলে দাবি করা যায় না।

ইটের ভাটা এবং চিংড়ি ঘের ও মৎস্যপ্রক্রিয়াকরণ কারখানাসহ অনেক জায়গায় বর্তমানে শ্রমিকদের সঙ্গে ক্রীতদাসের ন্যায় আচরণের বহু দৃষ্টান্ত পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হতে দেখা যায়। এই কলঙ্ক থেকেও মুক্ত হওয়া প্রয়োজন।

মনে রাখবেন, শ্রমিকরা জাতীয় সম্পদ। বিদেশে শ্রমশক্তি রফতানি করে আমরা বিপুল পরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করি। পোশাক রফতানি খাতে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার পরই এর অবস্থান। এ অবস্থায় শ্রমিকের শ্রমকে খাটো করে দেখার কোনো উপায় নেই। এ ক্ষেত্রে যা করণীয় তা হচ্ছে, সরকারিভাবে সরকারি ও বেসরকারি উভয়খাতের শ্রমিক কর্মচারীদের ন্যায্য মজুরি ও বেতনভাতা নির্ধারণ ও তা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা প্রদান। শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় শিক্ষা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাকরণ, তাদের ও তাদের পরিবারের স্বাস্থ্যসম্মত আবাসন এবং সন্তানদের শিক্ষাদীক্ষা ও মেধাবিকাশের উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং কর্মক্ষেত্রে একটি অনুকূল ও উৎপাদন বান্ধব পরিবেশের নিশ্চয়তা প্রদান প্রয়োজন।

আমাদের দেশে শ্রমিকদের অনেকগুলো ট্রেড ইউনিয়ন রয়েছে। দুর্ভাগ্যবশতঃ এই ট্রেড ইউনিয়নগুলোর বেশিরভাগই শ্রমিক কল্যাণ এবং শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির ব্যাপারে অনেকটা উদাসীন। ফলে শ্রমিকদের আসল সমস্যার কোনো সুরাহা হয় না।

এ অবস্থার অবসান দরকার। শ্রমিক আন্দোলন রাজনৈতিক আন্দোলনের বাহন না হয়ে শ্রমিকদের প্রকৃত কল্যাণে ব্রতী হবে এটাই আমাদের কামনা। এবারের মে দিবস সফল হোক, সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধিতে ভরে উঠুক সব শ্রমিকের জীবন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৩ ঘন্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৫
এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।