ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

ইসলামে রসিকতার সীমারেখা

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৫ ঘণ্টা, মে ৪, ২০১৫
ইসলামে রসিকতার সীমারেখা

মনকে সুস্থ রাখার জন্য প্রয়োজন আনন্দময় জীবন। আর আনন্দময় জীবনের জন্য প্রয়োজন হাস্য রসিকতা।

জ্ঞানীরা বলেন, আনন্দ ও চিত্ত বিনোদন মানুষকে জীবন যাপনের ক্ষেত্রে সহায়তা করে এবং এর মাধ্যমে পার্থিব বিষয়ে অনেক সাফল্য পাওয়া যায়।

আজকাল মনোবিজ্ঞানীরাও মানুষের সুস্থতার জন্য আনন্দ ও চিত্ত বিনোদনকে খুব গুরুত্ব দিচ্ছেন। বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে আনন্দ ও চিত্ত বিনোদনকে ব্যাপক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। অনেক মনোবিজ্ঞানী বলছেন, চিত্তবিনোদন, হাসি-খুশি ও প্রফুল্লতা বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ করে এবং শরীরে নানা ধরনের ক্যান্সারের দ্রুত ছড়িয়ে পড়াকেও ঠেকিয়ে রাখে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে হাসি ও প্রফুল্লতার বেশ উপকারিতা রয়েছে। যার ফলে মানুষ আরো সজীবতা ও আনন্দ অনুভব করে। মানুষের জীবনে যদি আনন্দ ও প্রফুল্লতা না থাকত তাহলে মানুষ মানসিক চাপের তীব্রতায় প্রাণ ত্যাগ করত। একইভাবে পরিবার ও সমাজের উন্নতির জন্যেও দুঃখ ও হতাশা দূর করা এবং আনন্দ ও চিত্ত বিনোদনের ব্যবস্থা করা জরুরী। আনন্দিত বা দুঃখিত হওয়া কেবল একজন মানুষের নিজের সাথে সম্পর্কিত বিষয় নয়। কারণ, একজন মানুষের হাসি-খুশি মুখ এবং দুঃখ-ভারাক্রান্ত চেহারা অন্যদেরও প্রভাবিত করে।

পবিত্র ইসলাম ধর্ম মানুষের শারীরিক ও মানসিক চাহিদার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। কারণ ইসলাম মনে করে, একটি সফল জীবনের জন্য প্রশান্তি ও প্রফুল্লতা থাকা জরুরী।

আনন্দ কিংবা চিত্তবিনোদনের বেশ কিছু মাধ্যম রয়েছে। নির্দোষ বিভিন্ন খেলাধুলা, কবিতা আবৃত্তি, বিয়ের উৎসব, উপহার দেয়া, উজ্জ্বল রংয়ের জামা কাপড় পরা, সুগন্ধি ব্যবহার, সুন্দর সাজে সজ্জিত হওয়া, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করা- এসব  আনন্দের কিছু মাধ্যম। এছাড়া, শরীর-চর্চাকেও বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম মনে করা হয়।

আনন্দের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো রসিকতা। সব রসিকতাই যে খারাপ- তা কিন্তু নয়। কেননা টেনশন, হতাশা, বিষাদগ্রস্ততা দূর করার জন্যে হাসি-রসিকতা একটি ভালো উপাদান। মানসিক প্রফুল্লতার জন্যেও হাস্যরসের যথেষ্ট উপযোগিতা রয়েছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো রসিকতার সীমা মেনে চলা। সীমা লঙ্ঘন হয়ে গেলে অনেকের মনেই আঘাত লাগতে পারে। তাই সীমারেখাটি আগে জানতে হবে এবং পরে তা মানতে হবে। কোনোভাবেই অপরকে উত্যক্ত করা বা খোঁচা দেয়ার জন্যে কৌতুক করা যাবে না। ওই আনন্দে যেন গুনাহ’র লেশমাত্র না থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখা।

বস্তুত হাস্য রসিকতা বা কৌতুক পরস্পরকে ঘনিষ্ট করে তোলে। এ কারণে পরিপূর্ণ জীবন বিধান ইসলামে কৌতুককে বিশেষ করে মুমিনদের জন্যে জরুরি একটি বিষয় বলে মনে করা হয়। সুফিবাদের চর্চা যারা করেন, তাদের মাঝে পরস্পরে কৌতুক করার প্রবণতা দেখা যায়।

প্রিয়নবী (সা.) ও রসিকতা করতেন। হজরত রাসূলু্ল্লাহ (সা.) ও হজরত আলী (রা.)-এর খুরমা খাওয়া নিয়ে চমৎকার একটি ঘটনা আছে। ঘটনাটি হলো— একদিন উভয়ে একসাথে বসে খুরমা খাচ্ছিলেন। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) খুরমা খেয়ে বিচিগুলো আলী (রা.)-এর সামনে রাখলেন। খাওয়া শেষে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, যার সামনে বিচি বেশি সে অতিভোজী। হজরত আলী (রা.) দেখলেন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে কোনো বিচিই নেই, তাই জবাব দিলেন- যে বীচিশুদ্ধ খুরমা খেয়েছে সে-ই বেশি পেটুক।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘন্টা, মে ০৪, ২০১৫
এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।