ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

‘বিশ্ব রেড ক্রিসেন্ট দিবস’

আল্লাহর ভালোবাসায় মানুষের সেবা

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২১ ঘণ্টা, মে ৭, ২০১৫
আল্লাহর ভালোবাসায় মানুষের সেবা

৮ মে শুক্রবার বিশ্ব (রেড ক্রস) রেড ক্রিসেন্ট দিবস। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এ দিবসটি পালন করা হয়।



আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলন মানবিক সেবার সর্ববৃহৎ নেটওয়ার্ক, যার আওতায় লাখো স্বেচ্ছাসেবী ও কর্মী বিশ্বব্যাপী একসঙ্গে কাজ করে চলেছেন মানবতার মহান ব্রত নিয়ে।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ, দাঙ্গা, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি। রেড কমিটির সদস্য ও কর্মচারীদের নিষ্ঠা, অধ্যবসায় ও স্বার্থত্যাগ বহু মানুষকে জীবন দিয়েছে, নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছে। পৃথিবীর বহু ধনী ব্যক্তি এই কমিটিতে অর্থ দিয়ে সাহায্য করে থাকেন।

বস্তুত যার মাঝে মানবতাবোধ আছে সে-ই মানবসেবায় এগিয়ে আসে। কেউ যদি কাউকে রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে, শীতে কাপড়ের অভাবে কাঁপতে দেখে, প্রতিবেশী যদি ক্ষুধার্ত অবস্থায় রাতযাপন করে, পথের কোনো শিশুকে ক্ষুধার তাড়নায় কাতরাতে দেখে; আর সে যদি তার পাশে এসে না দাঁড়ায়, তাহলে বুঝতে হবে তার মাঝে মানবতার লেশমাত্রও নেই। মানবতার সেবা প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘যেসব লোক ঈমান এনেছে ও নেক আমল করেছে, তারা নিঃসন্দেহে অতীব উত্তম সৃষ্টি। ’ আর ভালো কাজের মধ্যে দানকে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় নৈতিক উৎকর্ষ হিসেবে ধরা হয়েছে। মোত্তাকিদের গুণের মধ্যে গরিব-দুঃখীদের কল্যাণে ধন-সম্পদ ব্যয়কে আল্লাহ বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছেন। এ কারণেই কোরআনে কারিমের অনেক জায়গায় নামাজের পাশাপাশি দরিদ্রকে অন্নদানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন— ‘যারা প্রতিপালকের সন্তুষ্টির জন্য সবর করে, নামাজ আদায় করে, আমি যা দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে এবং যারা ভালো দিয়ে মন্দ দূর করে, তাদের জন্য রয়েছে পরকালের শুভ পরিণাম। ’

সূরা বাকারায় ইরশাদ হচ্ছে, ‘পুণ্যবান তারা, যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর ওপর, আখেরাত, ফেরেশতা ও সব কিতাবের ওপর, যারা সম্পদের প্রতি ভালোবাসা সত্ত্বেও অর্থদান করে আত্মীয়স্বজন, এতিম, মিসকিন, মুসাফির, সাহায্য প্রার্থী ও দাস মুক্তির জন্য এবং নামাজ কায়েম করে...। ’

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি বিধবা ও মিসকিনদের সমস্যা নিয়ে ছোটাছুটি করে সে যেন আল্লাহর রাহে জিহাদে লিপ্ত। ’ রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘বেহেশতে বালাখানা আছে, যার ভেতর থেকে বাইরে সব কিছু এবং বাইরে থেকে ভেতরে সব কিছু দেখা যায়। এসব বালাখানা আল্লাহ তার জন্য তৈরি করে রেখেছেন যিনি (লোকের সঙ্গে) কথাবার্তায় নম্রতা দেখিয়েছে, ক্ষুধার্তকে খাবার দিয়েছে, রোজা রেখেছে এবং রাতে এমন অংশে নামাজ পড়েছে, যখন (সাধারণভাবে) লোকজন ঘুমিয়ে ছিল। ’

দরিদ্রকে খাদ্যদান জান্নাতে পৌঁছার অন্যতম সহজ উপায়। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর ইবাদত করো, দরিদ্রকে খাদ্য দান করো এবং উচ্চ শব্দে সালাম করো। তাহলে নিরাপত্তা সহকারে জান্নাতে প্রবেশ করবে। ’

ইসলাম যেহেতু একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা, তাই মানবজীবনের প্রতিটি বিষয়ের প্রতি খেয়াল রেখেছে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে। সামাজিক জীবন সুস্থ-সুন্দর হওয়ার জন্য মানবতাবোধের কোনো বিকল্প নেই। তাই মানবতাবোধ যেন কারও থেকে উধাও না হয়ে যায়, সেদিকে ইসলাম রেখেছে পূর্ণ সজাগ দৃষ্টি। আর এ কারণেই মানবসেবাকে ইসলাম শুধু মানবতার বিষয় হিসেবেই রাখেনি বরং একে উল্লেখ করেছে এক মহৎ এবং পুণ্যের কাজ হিসেবে। সঙ্গে সঙ্গে নানাভাবে উৎসাহিত করেছে এ মানবসেবার প্রতি।

এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মহান প্রভু কি আপনাকে এতিম হিসেবে পাননি? তারপর তিনি আপনাকে আশ্রয় দিয়েছেন। ’ -সূরা দোহা : ৬

এ আয়াতে আল্লাহতায়ালা রাসূল (সা.)-এর অসহায়ত্বের কথা এবং তাকে আশ্রয়দানের কথা উল্লেখ করেছেন। অন্য আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তারা তাদের খাবারের প্রতি ভালোবাসা থাকা সত্ত্বেও সে খাবার অসহায়, এতিম এবং বন্দিদের খাওয়ায়। ’ -সূরা দাহার : ৮

এ আয়াতে আল্লাহতায়ালা অসহায়, মিসকিন, বন্দিদের খাবার দান করাকে মোমিনদের বৈশিষ্ট্য বলে উল্লেখ করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২১ ঘন্টা, মে ০৭, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।