ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

ইসলামের দৃষ্টিতে নাগরিকের দায়-দায়িত্ব

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১১ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০১৫
ইসলামের দৃষ্টিতে নাগরিকের দায়-দায়িত্ব

মানুষ হিসেবে আমরা সমাজে বাস করি। সমাজ ছাড়া মানুষের জীবন অচল।

জীবনের নিরাপত্তা বিধান এবং জীবিকা নির্বাহের তাগিদে প্রাচীন যুগ থেকে সমাজব্যবস্থা চালু হলেও কালক্রমে সমাজের প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বেড়ে চলছে। তাই মানুষ এখন একটি সুন্দর সমাজ ও রাষ্ট্র চায়। মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ নির্বিশেষে সমাজের সব মানুষ একটি সুখী সমৃদ্ধ সমাজ প্রত্যাশী। কিন্তু শান্তিপূর্ণ সমাজ চাইলেই তো আর হবে না, এ জন্য সমাজে বসবাসরত সবাইকেই কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে। এটাই ইসলামে বিধান ও শরিয়তের হুকুম। সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা ও পারস্পরিক দায়-দায়িত্বের অর্ন্তভুক্ত একটি দায়িত্ব ও বিধান হলো, পরস্পরে সম্মান প্রদর্শন।

এ প্রসঙ্গে হজরত নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যারা বড়দের সম্মান ও ছোটদের স্নেহ করে না, তারা আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়। ’ একটি সুন্দর সমাজ গঠনে এ গুণটি সবার মেনে চলা উচিত।

একটি সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে উপরোল্লিখিত হাদিসের আলোকে আমাদের আচরণ পরিশূদ্ধ হওয়া দরকার। হাল সময়ে দেখা দেখা যায়, আমাদের সমাজ নানাভাগে বিভাজিত হয়ে আছে। ফলে হিংসা-বিদ্বেষ, দলাদলি, খুন-খারাবী লেগেই আছে। অবস্থার এমন অবনতি হয়েছে যে, নিজ দলের, নিজ ধর্মের লোক না হলে তাকে সালাম বা শুভেচ্ছা জানাতেও আমরা কুণ্ঠাবোধ করি। কিন্তু নবী করিম (সা.)-এর নির্দেশ অনুযায়ী যদি আমরা জীবন-যাপন করতাম তাহলে বিভাজনের এক ভয়ঙ্কর পরিণতি থেকে আমরা রক্ষা পেতাম।

নবী করিম (সা.)-এর নির্দেশ অনুযায়ী যদি আমরা বড়দের সম্মান ও ছোটদের স্নেহ করতাম, তাহলে রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে হিংসা-বিদ্বেষ, খুন-খারাবী অনেকাংশে কমে যেতো। বয়সে যেই বড় হোক না কেন আমি তাকে সম্মান করবো। তিনি যদি অমুসলিম হন, যদি বিরোধী দলের নেতাকর্মী হন অথবা সমাজের দুর্বল শ্রেণীর কোনো লোক হন। মোট কথা, তিনি যেই হোন না কেন, আমার বয়সের বড় হলেই আমি তাকে সম্মান করবো, সালাম দেবো, তার প্রতি সৌজন্যতা দেখাবো। আর আমার চেয়ে বয়সে ছোট হলে তাকে স্নেহ করবো, ভালো উপদেশ দেবো।

এভাবে যদি আমরা পরস্পরে আমাদের আচার-আচরণ ও ব্যবহারকে সংশোধন করে নেই, তাহলে সমাজের অশান্তিময় পরিবেশ কেটে যাবে, একটি সুন্দর সমাজ গড়ে উঠবে। আমাদের সমাজে শিক্ষার হার পূর্বের তুলনায় বেশ বেড়েছে, অর্থনৈতিকভাবে আমরা আগের চেয়ে অনেক সমৃদ্ধ হয়েছি। কিন্তু আমাদের আচার-আচরণে উন্নতি হয়নি। যার কারণে এক ধরনের ভীতি ও অস্থিরতার মধ্যে জীবন-যাপন করতে হয়। এমতাবস্থায় নিজেদের স্বার্থেই আমাদের আচরণ সংশোধন করতে হবে। সামাজিক মূল্যবোধগুলো আঁকড়ে ধরতে হবে। তবেই একটি সুন্দর সমাজ গড়ে উঠবে।

বাংলাদেশের মানুষ এমনি একটি সুন্দর সমাজের জন্য অপেক্ষা করছে। বস্তুত যারা সুন্দর সমাজ চান, জীবনের নিরাপত্তা চান, শান্তিময় সমাজ কামনা করেন- তিনি মুসলিম অথবা অমুসলিম হন, নারী বা পুরুষ হন, শিক্ষিত বা নিরক্ষর হন, ধনী বা দরিদ্র হন সবাই সামাজিক মূল্যবোধের এই উপলব্ধি হৃদয়ঙ্গম করে নিজ নিজ জীবনে বাস্তবায়িত করতে পারি- তাহলেই একটি সুন্দর, শান্তিময় সমাজ আমরা গড়ে তুলতে পারবো- ইনশাআল্লাহ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৮ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০১৫
এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।