ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

মহিমান্বিত শবে কদর ‍আজ

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৫
মহিমান্বিত শবে কদর ‍আজ

ঢাকা: হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ পবিত্র লাইলাতুল কদর আজ (মঙ্গলবার ১৪ জুলাই)। লাইলাতুল কদর শবে কদর নামে সমধিক পরিচিত।

বস্তুত শবে কদর আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে বান্দাদের জন্য এক মহান নিয়ামত। শবে কদর প্রাপ্তি মুমিন জীবনের অন্যতম সেরা প্রাপ্তি। এই রাতের রয়েছে অপরিসীম গুরুত্ব, অমূল্য মর্যাদা ও বহুবিধ বৈশিষ্ট্য।

মহান আল্লাহ তায়ালা মহিমান্বিত এই রজনীতেই পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ করেন; হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানমগ্ন মুহাম্মদ (সা.) এর কাছে প্রথম পৌঁছান মুক্তির বাণী ‘ইকরা বিসমি রাব্বিকাল্লাজি খালাক’।

এই রাতের মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে গিয়ে পবিত্র কোরআন শরিফের সূরা কদরে আল্লাহ পাক বলেন, ‘লাইলাতুল কাদরি খাইরুম মিন আলফি শাহ্র’। অর্থাৎ হাজার মাসের চেয়ে সর্বোত্তম এই রাত। এ রাতে শেষ আসমানে এসে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার বান্দাদের উদ্দেশে বলতে থাকেন, ‘তোমাদের মাঝে এমন কে আছো, যে আমার কাছে নাজাত চাও? কল্যাণ চাও? তোমাদের মধ্যে কে আছো, যে মুক্তি চাও?’

মহান রবের এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে রহমত, বরকত ও মাগফিরাত লাভের আশায় শবে কদরে মুসলমানরা আজ সারা রাত ইবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে কাটাবেন।

এ মহিমান্বিত রাত উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং মুসলিম উম্মাহ ও দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও মঙ্গল কামনা করেছেন।

শবে কদরের তাৎপর্য
মহিমান্বিত রাত
লাইলাতুল কদর অর্থই মহিমান্বিত বা মর্যাদাবান রাত। এ রাতের নিজস্ব মাহাত্ম্যের দরুণ এরূপ নামকরণ করা হয়েছে। ইমাম যুহরি (রহ.)-এর কথাটি এক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। লাইতুল কদর সম্পর্কে তিনি বলেছেন, এটি অতীব উচ্চমান, মর্যাদা ও মাহাত্ম্যের রাত। সূরা কদর ও সূরা আদ দোখানে এ রাতের ব্যাপারে বিশেষভাবে আলোকপাত করা হয়েছে যদ্বারা আমরা সম্যক উপলব্ধি করতে পারি যে, এ রাতটি কতো মূল্যবান ও মর্যাদাবান।

তাকদির নির্ধারণের রাত
কদর শব্দটির অন্য অর্থ তাকদির। এ রাতে তাকদিরের ফয়সালা করা হয়। আল্লামা বদরুদ্দিন আইনি (রহ.) কদর রাত সম্পর্কে এভাবে উল্লেখ করেছেন যে, লাইলাতুল কদর অর্থ এমন রাত যাতে সব বিষয়ের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়, যাবতীয় ব্যাপারে চূড়ান্ত রূপ দান করা হয় এবং এক বছরের জন্য আল্লাহতায়ালা সব বিধান ও মর্যাদা ফয়সালা করেন।

কোরআন নাজিলের রাত
সূরা কদরের প্রথমেই বলা হয়েছে যে, নিশ্চয়ই আমি ইহাকে (অর্থাৎ কোরআনকে) কদরের রাতে নাজিল করেছি। প্রকৃতপক্ষে কোরআন নাজিলের কারণেই কদরের রাত মর্যাদাপূর্ণ হয়েছে। কোরআন নাজিলের দরুণ মাহে রমজান মর্যাদাপ্রাপ্ত হয়েছে। এমনকি কোরআনের জন্য আল্লাহর রাসূল (সা.) ও মর্যাদাপ্রাপ্ত হয়েছেন। অতএব এটি মুসলিম উম্মাহর জন্য গর্ব ও গৌরবের বিষয় যে, এ রাতে বিশ্ব মানবতার মুক্তি সনদ কোরআন নাজিল হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে উল্লেখযোগ্য কথা হল, এ রাতে আমাদের ইবাদতের মৌলিক উদ্দেশ্য হতে হবে কোরআনি জীবন ব্যবস্থা বাস্তবায়নে অগ্রসর হওয়া।

উম্মতে মোহাম্মদির জন্য খাস রাত
যেহেতু উম্মতে মোহাম্মদির বয়স পূর্বের অন্যান্য উম্মতের তুলনায় কম সেহেতু মহান আল্লাহ অনুগ্রহ করে এ উম্মতের জন্য খাস করে এ রাত দান করেছেন। ফলে উম্মতে মোহাম্মদি স্বল্প আয়ু পাওয়া সত্ত্বেও ইবাদত-বন্দেগি দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভে অগ্রসর থাকতে পারবে। পক্ষান্তরে আমরা বলতে পারি যে, লাইলাতুল কদর কেবল উম্মতে মোহাম্মদিরই বৈশিষ্ট্য।

হাজার মাসের চেয়েও উত্তম রাত
সূরা কদরে লাইলাতুল কদরকে হাজার মাসের চেয়েও উত্তম বলা হয়েছে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিসেও অনুরূপ বক্তব্য এসেছে। কোরআন নাজিলের তৎকালীন সময়ে গণনায় ব্যবহৃত সংখ্যার সব চাইতে বড় একক ছিল হাজার। তাই হাজার মাসের চেয়ে উত্তম মানে ৮৩ বছর ৪ মাসের চেয়ে উত্তম- এমনটি নয়। মূলতঃ মহান আল্লাহই জানেন এর মাহাত্ম্য কত বেশি ও বিশাল। তবে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম- এ কথাটির আরেকটি পরোক্ষ অর্থ হল- এ রাতে এত বেশি কল্যাণমূলক কাজ হয়েছে যে, হাজার বছরের ইতিহাসেও তেমনটি হয়নি।

অনির্ধারিত ও অনির্দিষ্ট রাত
অনির্ধারিত ও অনির্দিষ্ট রাত লাইলাতুল কদরের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। সহিহ বোখারিতে উল্লেখ রয়েছে হজরত উবাদা ইবনে সামেত (রা.) বর্ণনা করেছেন, নবী করিম (সা.) আমাদেরকে লাইলাতুল কদর সম্পর্কে অবহিত করার জন্য বেরিয়ে আসলেন। এমন সময় দু’জন মুসলমান বিবাদে লিপ্ত ছিলেন। তখন তিনি বললেন, ‘আমি বের হয়েছিলাম তোমাদেরকে লাইলাতুল কদর (এর সঠিক তারিখ) সম্পর্কে খবর দেয়ার জন্য। কিন্তু অমুক অমুক ব্যক্তি ঝগড়ায় লিপ্ত ছিল। (ফলে আমি তারিখটি ভুলে গেলাম)। সম্ভবতঃ এর মধ্যেই কল্যাণ নিহিত। ’

লাইলাতুল কদর যদি নির্দিষ্ট থাকত তাহলে উম্মতের লোকেরা এই রাতকে কেন্দ্র করে তাদের ইবাদত সীমাবদ্ধ করে নিত। বান্দা যাতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করতে গিয়ে অধিকতর ইবাদত করে সেটাই মহান আল্লাহর কাম্য। পক্ষান্তরে লাইলাতুল কদর যদি নির্ধারিত থাকত আর আমরা এর মর্যাদাহানীকর কোন কাজ করতাম তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে সওয়াবের পরিবর্তে আজাবের অধিকারী হতে হত। তাই রাসূল (সা.) এই অনির্ধারিত অবস্থাকে কল্যাণকর আখ্যা দিয়েছেন।

গোনাহ মাফের রাত
এ প্রেক্ষিতে বোখারি শরিফের হাদিসটি হচ্ছে, ‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমান ও ইহতিসাব সহকারে ইবাদতের জন্য দাঁড়াবে তার অতীতের গোনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হবে। ’ তবে গোনাহ মাফের এ সুযোগ কাজে লাগাতে না পারলে সেই ব্যর্থতার দায়ভার আমাদেরকেই নিতে হবে।

ফেরেশতাদের দোয়া প্রাপ্তির রাত
খ্যাতনামা সাহাবি হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, লাইলাতুল কদরে হজরত জিবরাঈল (আ.) একদল ফেরেশতা নিয়ে দুনিয়ায় অবতরণ করেন। তারা সেই সব লোকদের জন্য দোয়া করতে থাকেন- যারা এ রাতে দাঁড়ানো কিংবা বসা অবস্থায় ইবাদতে মশগুল থাকে। অতএব, ফেরেশতাদের দোয়ার সঙ্গে আমাদের দোয়া যদি শামিলে হাল হয়ে যায় তবে নিশ্চয়ই তা আমাদের জীবনের জন্য হবে সোনায় সোহাগা।

কল্যাণকর ও শান্তিময় রাত
লাইলাতুল কদর সামগ্রিকভাবে আমাদের জন্য এক কল্যাণকর রাত। বিশেষ করে সূরা কদরের শেষ আয়াতে বলা হয়েছে যে, শান্তিই শান্তি- সেই রাতে ফজর তথা উষার উদয় হওয়া পর্যন্ত। অতএব নিঃসন্দেহে এ রাতটি আমাদের জন্য তথা বিশ্ববাসীর জন্য কল্যাণকর ও শান্তিময় রাত হয়ে থাকবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০১ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৫
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।