ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

শবেকদরের বর্জনীয় ও করণীয় বিষয়সমূহ

তাযকিরা খাতুন, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৫
শবেকদরের বর্জনীয় ও করণীয় বিষয়সমূহ

ইসলামের দৃষ্টিকোণে শবেকদরের গুরুত্ব অপরিসীম, কারণ এ রাতে মানবতার মুক্তির মানুষের জীবন-বিধান মহাগ্রন্থ পবিত্র কোরআনে কারিম নাজিল হয়। পবিত্র কোরআনে কারিমে এই রাতকে ঘিরে পূর্ণাঙ্গ একটি সূরা নাজিল হয়েছে।

যাকে আমরা আল-ক্বদর হিসেবে জানি। আবার কোরআনের সূরা দোখানেও এই রাতের গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে,     ‘শপথ সুস্পষ্ট কিতাব আল-কোরআনের, আমি তো তা অবতীর্ণ করেছি মোবারক রজনীতে বা পবিত্র রাতে। আমি তো সতর্ককারী, এর রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরকৃত হয় আমার আদেশক্রমে। ’ –সূরা আদ দোখান: ২-৫

সুতরাং এই রাত যে অতীব গুরুত্বপূর্ণ তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। এই তাৎপর্যপূর্ণ রাতের বর্জনীয় ও করণীয় দিকগুলো হলো-

শবেকদরে বর্জনীয়
অধিক বিশ্রাম ত্যাগ করা : অতি মহান, গুরুত্বপূর্ণ ও সওয়াব হাসিলের সবচেয়ে উত্তম ও তাৎপর্যময় রাত লাইলাতুল কদর, তাই এ রাতে ঘুম ও অন্যান্য বিশ্রাম সাধ্য পরিমাণ ত্যাগ করে ইবাদতে কাটিয়ে দেয়াই হচ্ছে বুদ্ধিমান ও মুমিনের কাজ। এ বিষয়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমান এবং সওয়াবের আশায় ইবাদতের জন্য আল্লাহর দরবারে দাঁড়াবে, তার অতীতের সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করা হবে। ’

অতিরিক্ত ভোজ-আয়োজন ত্যাগ করা : মূলত ইবাদতের প্রস্তুতি হল শরীর-মনকে হালকা রাখা, আর তা না করে অনেকেই এই কদরকে ঘিরে বিশাল-ভোজের আয়োজন করে, তাহলে এ রাতের মূল উদ্দেশ্য হাসিল করা কি সম্ভব? তাই করণীয় হলো- কদরকে সঠিকভাবে পালনের জন্য খাবার আয়োজন পরিবেশনে এবং ভক্ষণে সময় ও শ্রম ব্যয় না করে সেটিকে যথাযথ কাজে লাগানো, কারণ এই মহিমান্বিত রাত জীবনে আরেকবার পাবো, ইবাদত করতে পারবো, ক্ষমা চাইতে পারবো, দাঁড়াতে পারবো, চোখের পানি ফেলতে পারবো, যাবতীয় আঞ্জাম দিতে পারবো তার কোনো ইয়ত্তা নেই।

বিদআত বর্জন করা : ইসলাম কোনো কল্পনাপ্রসূত ধর্ম নয়, এটি একটি বিজ্ঞানভিত্তিক জীবন বিধান। এটি বাড়াবাড়ির পক্ষে নয়, কোরআন-সুন্নাহ বহির্ভূত কাজকে বিদআত বলা হয়। আর শবেকদরের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ রাতে বিদআতমুক্ত থেকে যথাযথভাবে ইবাদত-বন্দেগি করা ঈমানদারের কাজ। সেই সঙ্গে মানুষের ভুল দিক-নির্দেশনা বর্জন করা। সঠিকভাবে ইসলাম সম্পর্কে জেনে সে অনুযায়ী কাজ করা। এমন যেন না হয় যে, সওয়াব কামাতে গিয়ে আজাবের ভাগিদার হতে হয়।

শবেকদরে করণীয়
কোরআন-সুন্নাহর অনুসরণ করা : “নিশ্চয়ই আমি এ কোরআনকে নাজিল করছি কদরের রাত্রিতে, আর এ রাত হচ্ছে হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ রাত। হাদিস থেকে পাওয়া যায় রাসূল (সা.) রমজানের শেষ দশকে নিজে অনেক বেশি ইবাদত করতেন এবং পরিবার-পরিজনদের ইবাদতের জন্য সজাগ করতেন। তাই আমাদেরও উচিত-এই কদরের রাতের হক আদায় করা এবং কোরআন-সুন্নাহ মোতাবেক সমাজ তৈরির অঙ্গীকার করা, কারণ এই কোরআনের জন্যই তো এ রাতের এত মর্যাদা ও সম্মান।

বেজোড়-রাত্রিতে কদর তালাশ করা : লাইলাতুল কদরের বিশেষ রহস্য যে এর কোনো সুনির্দিষ্ট রাত উল্লেখ করা হয়নি, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, শবেকদর কোন রাতে তা তোমাদের জানাবার জন্য আমি বের হচ্ছিলাম, কিন্তু অমুক অমুক ব্যক্তি ঝগড়ায় লিপ্ত থাকার কারণে আমার থেকে তা উঠিয়ে নেয়া হয়েছে, আর সম্ভবত এটাই তোমাদের জন্য মঙ্গলজনক। -সহিহ বোখারি।

মূলত এ রাত যদি নির্ধারিত করে দেয়া হতো তখন যারা এ রাতের যথাযোগ্য মর্যাদা দানে ব্যর্থ হতো, তাদের জন্য আল্লাহর আজাব অবধারিত হয়ে পড়তো। এ কারণে এ রাতটি অনির্ধারিত রাখাকেও রাসূল (সা.) উম্মতের জন্য মঙ্গলজনক বলে উল্লেখ করেছেন। বান্দা যাতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করতে গিয়ে অধিকতর ইবাদত করে সেটাই মহান রাব্বুল-আলামিনের কাম্য।

তওবার মাধ্যমে গুনাহ মাফ চাওয়া : হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি যদি কোনোক্রমে অনুধাবন করতে পারি যে, আজই শবেকদর তাহলে সে রাতে আমি কি দোয়া করবো? রাসূল (সা.) বলেন, তুমি এই দোয়া পাঠ কর। ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুব্বুন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি- হে আল্লাহ তুমি পরম ক্ষমাশীল, তুমি ক্ষমা করতে ভালোবাস, কাজেই আমাকে ক্ষমা করে দাও। ’ তাই গুনাহ মাফের এই সুযোগ আমাদের অবশ্যই কাজে লাগাতে হবে।

আগামীর জন্য দরখাস্ত পেশ : শবেকদর হলো ইবাদতের রাত, মর্যাদা হাসিলের রাত, আল্লাহর নৈকট্য লাভের রাত, দুঃখ কষ্ট থেকে পরিত্রাণের রাত। তাই এ রাতে আমরা গুনাহ মাফ চেয়ে নেয়ার পাশাপাশি আমাদের ভবিষ্যৎ জীবনের আবেদন-নিবেদন, দরখাস্ত আমরা মহান রবের কাছে পেশ করবো। কারণ এ রাত ভাগ্য নির্ধারণের রাতও বলা হয়। আমাদের ব্যক্তিগত পারিবারিক-রাষ্ট্রীয় অনেক চাওয়া আছে, যেটি শুধুমাত্র আল্লাহর কাছেই পেশ করা যায় এবং আল্লাহই সর্বোত্তম সাহায্যকারী, এ জন্য আমরা মনের আবদার-কথা, প্রার্থনা প্রাণ খুলে তার দরবারে তুলে ধরবো। ইনশাল্লাহ আল্লাহ আমাদের নিরাশ করবেন না।

ইলম চর্চায় কিছু সময় ব্যয় করা : ‘হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন রাতের এক ঘণ্টা ইলম চর্চা বা জ্ঞান অর্জন করা সারা রাত নফল ইবাদতের চেয়ে উত্তম। ’ মূলত আমরা কি করবো? কেন করবো? কিভাবে করবো? না করলে কি হবে? এই সমস্ত জ্ঞান অর্জন না করলে আমাদের ইবাদতগুলো খাঁটি ও নির্ভেজাল হবে না। তাই আমরা এ কদরের রাতগুলোতে কোরআন-হাদিসের কিছু জ্ঞান অর্জনের তথা গবেষণার চেষ্টা করবো, যা আমাদের দুনিয়া-আখেরাতের জন্য কল্যাণকর হবে। প্রয়োজনে আমরা এই রাতগুলোকে ইবাদতের জন্য ভাগ করে নিতে পারি। যেমন-কিছু সময় নামাজ, কিছু সময় ইস্তেগফার, তাসবিহ-তাহলিল, দরুদ পাঠ, ইলম চর্চা করা, কোরআন তেলাওয়াত করা, তাহাজ্জুদ নামাজ ইত্যাদির জন্য ব্যয় করতে পারি।

রাসূল (সা.)-এর হাদিস থেকে পাওয়া যায়, এ রাতে হালকা বৃষ্টি হবে, এ রাত নাতিশীতোষ্ণ থাকবে। পরবর্তী দিবসে সূর্য এমনভাবে উদিত হবে যে, তার রশ্নিতে প্রখরতা ও তেজ থাকবে না, আসমানের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়, দোয়া কবুল হয়, ইবাদতে মশগুল বান্দাকে ফেরেশতারা সালাম দেয়, বান্দার দোয়ার সঙ্গে ফেরেশতারা আমিন আমিন বলতে থাকে। তাই আমাদের এ রাতের কাজগুলো বর্জনীয় দিক লক্ষ্য রেখে হক আদায় করা এবং করণীয়গুলোর দিকে বিশেষ নজর দেয়া।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘন্টা, জুলাই ১৪, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।