ঢাকা, সোমবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

আশুরার তত্ত্বকথা

মাওলানা হারুনুর রশীদ মজুমদার, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৫
আশুরার তত্ত্বকথা

হিজরি সনের প্রথম মাস মহররম। এ মাসের গুরুত্ব অন্যান্য মাস থেকে আলাদা।

বিশেষত আশুরা অর্থাৎ ১০ মহররম অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ ও বরকতময় একটি দিন। পবিত্র মাহে রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে এই উম্মতের ওপর এদিনের রোজা ছিল ফরজ। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর এই রোজা নফলে পরিণত হয়।

হাদিস শরিফের বর্ণনামতে, এ দিনে রোজা রাখা নফল হওয়া সত্ত্বেও এর গুরুত্ব কমেনি। যদি কোনো ব্যক্তি এদিন রোজা রাখে, তবে আল্লাহতায়ালা তার আগের ও পরবর্তী পুরো এক বছরের গোনাহ মাফ করে দেন। আর কেউ যদি এদিন নিজ পরিবার-পরিজনের জন্য উত্তম খাদ্যের ব্যবস্থা করে, আল্লাহতায়ালা পুরো বছরের জন্য তার রুজি-রোজগারে বরকত দান করেন।

আশুরার পবিত্র দিনটি হজরত হুসাইন (রা.)-এর কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার কারণেই শুধু তাত্পর্যবহ ও গুরুত্বের আসন পায়নি; বরং মানব ইতিহাসে বহু তাত্পর্যবহ ও পুণ্যময় ঘটনা জড়িয়ে আছে এ দিনটির সঙ্গে।

এ দিনেই আল্লাহতায়ালা হজরত আদম আলাইহিস সালামের তওবা কবুল করেছিলেন। হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর ওপর নমরূদ কর্তৃক প্রজ্বলিত ভয়াবহ অগ্নিকুণ্ডকে ঠাণ্ডা ও আরামদায়ক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এদিনেই আল্লাহতায়ালা হজরত মুসা (আ.) কে স্বজাতি বনী ইসরাঈলসহ ফেরাউনের অত্যাচার থেকে নাজাত দিয়েছিলেন।

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় চলে আসার পর মদিনার ইহুদিদের এ দিনে রোজা রাখতে দেখে প্রশ্ন করলেন, ‘তোমরা এ দিনে কিসের রোজা রাখো?’ তার জবাবে ইহুদিরা জানালো, ‘আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুসা (আ.) এবং তার উম্মত বনী ইসরাঈল এ দিনেই ফেরাউনের অত্যাচার থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন, আর এ দিনেই ফেরাউন স্বদলবলে লোহিত সাগরে ডুবে মরেছিল। নিমজ্জিত হয়ে ইহধামে বাদশাহি করার খায়েশ ফুরিয়েছিল চিরজনমের জন্য। আমরা এর শোকর আদায়ের লক্ষ্যে এ দিনটিতে রোজা রেখে থাকি।

একথা শুনে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, হজরত মুসা (আ.)-এর অনুসরণের হকদার তোমাদের চেয়ে আমি বহুগুণে বেশি। অতঃপর হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজে আশুরার রোজা রাখেন এবং সাহাবায়ে কেরামকেও এ দিনে রোজা রাখার নির্দেশ দেন।

উপরোক্ত বর্ণনার দ্বারা একথা সুস্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয় যে, শুধু কারবালার ঘটনার কারণেই এ দিনটি তাত্পর্যময় এবং গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেনি; বরং আল্লাহপাক হজরত হুসাইন (রা.)-এর শাহাদতের জন্য এমন একটি মোবারক দিন নির্বাচিত করেছেন, যে কারণে তার শাহাদাতের মর্যাদা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, এ দিনে হজরত হুসাইন (রা.)-এর কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা সংঘটিত হওয়ায় সবার কাছে দিনটি চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৫
এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।