ঢাকা, সোমবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

স্বাধীনতা মানুষের ধর্মীয় অধিকার

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৫
স্বাধীনতা মানুষের ধর্মীয় অধিকার

মানবতার ধর্ম ইসলামে দেশকে ভালোবাসার প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। ইসলামের কথা হলো, দেশের স্বাধীনতা সুরক্ষিত করতে স্বদেশপ্রেম অত্যাবশ্যক।

হজরত রাসূলুল্লাহর (সা.) জীবনাদর্শ ও স্বভাব-চরিত্রে দেশপ্রেমের অনন্য দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। তিনি মাতৃভূমি মক্কাকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। তাই স্বজাতি কর্তৃক নির্যাতিত হয়ে জন্মভূমি মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতকালে বারবার মক্কার দিকে ফিরে তাকিয়ে কাতর কণ্ঠে আফসোস করে বলেছিলেন, 'হে আমার স্বদেশ! আমি তোমাকে ছেড়ে যেতাম না। যদি না আমাকে বাধ্য করা হতো। '

দীর্ঘ নয় মাস মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয় আমাদের বিজয় ও স্বাধীনতা। পাকিস্তানি শাসন, শোষণ, নির্যাতন ও নিপীড়নের নাগপাশ থেকে মুক্ত হয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য স্বাধীনতার সংগ্রামে এ দেশের জনগণ জীবনবাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ইসলাম যে দেশপ্রেম তথা মাতৃভূমির জন্য যুদ্ধের কথা বলেছে এই যুদ্ধ ছিলো সেই চেতনারই শামিল।

সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে বাধা প্রদান, সত্যের দ্ব্যর্থহীন প্রকাশ ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ বিধান, যা ইসলামকে বিশেষ বৈশিষ্ট্যে ভূষিত করেছে। ইসলাম স্বাধীনভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও চর্চা, নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা লাভসহ শাসকগোষ্ঠী ও আমলাদের ওপর জনসাধারণের নজরদারি এবং ভদ্রোচিত পদ্ধতিতে তাদের সমালোচনার শিক্ষা দিয়েছে। যেন এসব থেকে তারা শিক্ষা নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। উদ্দেশ্য একটাই, দেশকে তার গন্তব্য ও সঠিক লক্ষ্যে পরিচালিত করা। এ বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয় খোলাফায়ে রাশেদিনের জীবনাচার ও রাষ্ট্র পরিচালনার বিষয়টি সামনে আনলে।

ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) খলিফা নিযুক্ত হয়ে বলেছিলেন, 'হে লোক সকল! আমি তোমাদের শাসক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছি, আমি তোমাদের সর্বোত্তম ব্যক্তি নই; আমি যদি ভালো করি, তবে তোমরা আমায় সহযোগিতা করো। যদি ভুল করি, তবে আমাকে শুধরে দিও। আমি তোমাদের ব্যাপারে যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর আনুগত্য করব, তোমরাও আমার আনুগত্য করবে। আর যদি অবাধ্য হই, তবে তোমাদের দায়িত্ব নয় আমার আনুগত্য করা। '

স্বাধীনতা সংগ্রাম ও স্বাধীনতা অর্জন বর্তমান বিশ্বের রাজনৈতিক অঙ্গনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্বাধীনতা সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি অন্যদের মতো একপেশে নয়। এ ক্ষেত্রে ইসলামের মূলনীতি হলো, 'আল্লাহতায়ালা তোমাদের স্বাধীন করে সৃষ্টি করেছেন, তাই কারও গোলাম হয়ো না। '

স্বাধীনতা এমনিতে অর্জিত হওয়ার মতো কোনো বিষয় নয়। এর জন্য দরকার সংগ্রামের, যা মানুষের প্রকৃতির সঙ্গে মিশে রয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাধীনতা মানুষের ধর্মীয় ও প্রকৃতিগত অধিকার। ইসলামে স্বাধীনতা বেঁচে থাকার অধিকার ও জীবনযাপনের অধিকারের মতোই গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত।

ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ চিন্তা, বিশ্বাস ও আদর্শ বেছে নেওয়ার ব্যাপারে স্বাধীন। এমনকি ভিন্নমতের অধিকারী ব্যক্তি অধিকারকেও স্বীকার করে ইসলাম। তবে ইসলাম স্বাধীনতার কিছু সীমারেখা টেনে দিয়েছে, যাতে তা মানুষের বিভ্রান্তি ও অধঃপতন কিংবা অন্যদের ক্ষতির মাধ্যম না হয় বা অন্যদের স্বাধীনতা ও অধিকার হরণ না করে।

স্বাধীনতা এক খোদায়ী আমানত, যা আল্লাহতায়ালা আমাদের দান করেছেন। অমূল্য এ আমানত রক্ষার ব্যাপারে কোনো ধরনের অবহেলা ও বিশ্বাসঘাতকতা মোটেই কাম্য নয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, মানুষের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হলে তারা বিভ্রান্ত হয় এবং অধঃপতনের শিকার হয়। উন্নত সমাজ ও জাতি গঠনে স্বাধীনতার কোনো বিকল্প নেই। তাই স্বাধীনতা রক্ষায় আমাদের সদা সজাগ থাকতে হবে। এবারের বিজয় দিবসে এটাই হোক আমাদের শপথ।



বাংলাদেশ সময়: ০০০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।