ঢাকা, সোমবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

নবী মুহাম্মদ (সা.) শৈশব ও যৌবনে কেমন ছিলেন

মাওলানা শওকত হোসাইন, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৫
নবী মুহাম্মদ (সা.) শৈশব ও যৌবনে কেমন ছিলেন

মানুষের কল্যাণকামী ব্যক্তিদের বিভিন্ন শ্রেণি রয়েছে। তন্মধ্যে সর্বোত্তম ও সর্বাধিক উন্নতমানের কল্যাণকামী লোক হচ্ছেন আল্লাহর প্রেরিত নবী ও রাসূলরা।

মানবতার মুক্তির দূত, নবীকুল শিরোমণি, রাহমাতুল্লিল আলামিন হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ আসনে সমাসীন।

শেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনাদর্শ কালোত্তীর্ণ শাশ্বত এবং সর্বোত্তম। সমাজ, বাস্তবতা, পারিবারিক জীবনযাপন পদ্ধতি, সামাজিক সম্পর্ক, অর্থনৈতিক লেনদেন, রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ড সব ক্ষেত্রেই নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পদচারণা ছিল অনুকরণীয়। তাই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হচ্ছেন বিশ্বমানবতার মুক্তির দিশারী। তার জীবনের প্রতিটি পর্যায় মানবতার জন্য আলোকবর্তিকা। জন্ম থেকে শিশুকাল, বালক থেকে যুবক জীবনের যে কোনো মঞ্জিলে তিনি হলেন সর্বোত্তম আদর্শের ধারক। শুধু নবুওয়তি জীবনই নয়, নবুওয়তপূর্ব জীবনেও হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহান আদর্শের যে দৃষ্টান্ত ও নমুনা স্থাপন করেছেন; তা পৃথিবীর অনাদিকালের মানুষের জন্য, সত্যাশ্রয়ী হৃদয়ের জন্য অদ্বিতীয় আলোর উৎস হয়ে আছে চিরকালের জন্য।

হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মের আগে এমন কিছু ঘটনা প্রকাশ পেয়েছিল; যা দ্বারা বিশ্ববাসী বুঝতে পারে যে, পৃথিবীতে এমন এক মহামানব আবির্ভাব হতে যাচ্ছেন, যিনি হবেন অনুপম চরিত্র মাধুর্যের অধিকারী ও আলোর দিশারী। যেমন মা আমিনা বলেছেন, যখন তিনি জন্মগ্রহণ করেন তখন দেহ থেকে একটি নূর বের হলো। সেই নূর দ্বারা শাম দেশের মহল উজ্জ্বল হয়ে গেল। অনেক কিতাবে আরও লেখা হয়েছে, কেসরার রাজপ্রাসাদের চৌদ্দটি পিলার ধসে পড়েছিল। অগ্নি উপাসকদের অগ্নিকুণ্ড নিভে গিয়েছিল। বহিরার গির্জা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।

মা হালিমা বলেন, আমি শিশু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমার ঘরে আনার পর সব অভাব মোচন হয়ে যায়। তাকে আনার পর আমার উভয় স্তন দুধে পূর্ণ হয়ে গেল। উটনির স্তনগুলো দুধে ভরে গেল। আমাদের গাধা (বাহন)টি দ্রুতগতিসম্পন্ন হয়ে গেল। বকরিগুলো চারণভূমি থেকে ভরা পেটে ও ভরা স্তনে ফিরে আসত। এভাবেই শিশু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহিমা এক এক করে প্রকাশ হতে থাকে।

শিশু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হালিমার স্তন্য পান করতেন, তখন মাত্র একটি স্তন্যই পান করতেন। অপর স্তনটি তার দুধভাই হালিমার আপন শিশুপুত্রের জন্য রেখে দিতেন। অবুঝ শিশুর অধিকার প্রদানের এমন কাহিনী পৃথিবীতে বিরল।

শিশু মুহাম্মদ প্রথম কথা শুরু করেছিল এ বাক্যটি দিয়ে, ‘আল্লাহু আকবার কাবিরা- ওয়া সুবহানাল্লাহু কাসিরা। ’ অর্থাৎ আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ বড়, আর সর্বাধিক পবিত্রতা আল্লাহর জন্য।

হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শৈশব থেকেই অত্যন্ত লাজুক প্রকৃতির ছিলেন। তার লজ্জাশীলতা সম্পর্কে একটি ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে, হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রাজিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে, কাবাঘর নির্মাণের সময় হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং হজরত আব্বাস রাজিয়াল্লাহু আনহু পাথর ভাঙছিলেন। কাজের এক পর্যায়ে হজরত আব্বাস রাজিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহকে বললেন, তহবন্দ খুলে কাঁধে বাঁধো, ধুলোবালি থেকে রক্ষা পাবে। তহবন্দ খোলার সঙ্গে সঙ্গে তিনি মাটিতে পড়ে গেলেন এবং আকাশের দিকে তাকালেন ও হুঁশ হারিয়ে ফেললেন। খানিক পরেই হুঁশ ফিরে এলে বললেন, আমার তহবন্দ। এরপর তাকে তহবন্দ পরিয়ে দেওয়া হয়।

সাদ বংশের লোকেরা সে যুগে বিশুদ্ধ প্রাঞ্জল আরবি ভাষায় কথাবার্তা বলার জন্য বিখ্যাত ছিল। সদৃশ্য-অদৃশ্য শক্তির ইঙ্গিতে শিশু মুহাম্মদের লালন-পালনের ভার গিয়ে পড়ল এ মার্জিত রুচি ও উন্নতমনা সাদ বংশের ওপরে। যার কারণে হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশুকাল থেকেই কথাবার্তায় মিষ্ট ও লালিত্যপূর্ণ ভাষা ব্যবহার করতেন।

শিশুকালেই আরবের লোকেরা তার মাধ্যমে কল্যাণ লাভ করা শুরু করে। আরবে দুর্ভিক্ষ চলছিল অনাবৃষ্টির কারণে। কোরায়েশরা বৃষ্টির জন্য দোয়া করতে আবু তালেবের কাছে আবেদন জানাল। আবু তালেব একটি বালক সঙ্গে নিয়ে বের হলেন এবং কাবার ঘরের সামনে গিয়ে দোয়া দিলেন। বালক তার হাতে আঙ্গুল রাখলে সঙ্গে সঙ্গে আকাশে মেঘ এলো ও মুষলধারে বৃষ্টি হলো। সজীব উর্বর হয়ে গেল জমিন। আর সেই শিশুই ছিল শিশু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

শৈশব থেকেই হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন পরম সত্যবাদী।   তিনি কখনো সত্য থেকে বিচ্যুত হননি। তিনি ছিলেন সবার চেয়ে অধিক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন উন্নত চরিত্রের অধিকারী। দয়াপ্রবণ প্রতিবেশি, অধিক সত্যবাদী, সর্বাধিক পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন মনের অধিকারী ব্যক্তিত্ব। তার জীবনে রয়েছে আমাদের জন্য আদর্শ আর অনুসরণ-অনুকরণে মুক্তি।



বাংলাদেশ সময়: ১৮০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।