ঢাকা, সোমবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

বাংলানিউজকে ড. আবদুল জলীল

নবীর আদর্শের প্রচার প্রতিটি মুসলমানের ঈমানি দায়িত্ব

... | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩, ২০১৬
নবীর আদর্শের প্রচার প্রতিটি মুসলমানের ঈমানি দায়িত্ব ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ড. আবদুল জলীল। একজন হাফেজে কোরআন, আলেম লেখক ও ইসলামি গবেষক।

জন্মগ্রহণ করেছেন ১৯৬২ সালে খুলনা জেলায়। ১৯৭৮ সালে জামিয়া কোরআনিয়া লালবাগ থেকে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করে মাওলানা সনদ অর্জন করেন। ১৯৯১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগ থেকে সম্পন্ন করেন মাস্টার্স। এরপর কিং সাউদ ইউনিভার্সিটি থেকে পোস্ট গ্রাজুয়েট ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

বর্তমানে তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রকাশনা বিভাগের উপ-পরিচালক পদে কর্মরত। তবে নিজেকে একজন সিরাত গবেষক হিসেবে পরিচয় দিতেই বেশি ভালোবাসেন। তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রণীত সিরাত বিশ্বকোষের অন্যতম উদ্যোক্তা ও লেখক। যুক্ত ছিলেন সম্পাদনার সঙ্গেও। সিরাত বিষয়ে তার প্রথম প্রকাশনা অনুবাদ গ্রন্থ ‘নবী ভাস্কর। ’ অনুবাদ করেছেন সিরাতে খাতামুল আম্বিয়াও।
 
এ ছাড়াও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে সিরাত বিষয়ে তার প্রায় ২০টি গবেষণা প্রবন্ধ। লেখকের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ হলো- ফেরাউনের দেশে, নবী ভাস্কর, আরবী কবিতায় ইসলামী ভাবধারা, চিশতিয়া সিলসিলার আউলিয়া কেরামের ইতিহাস, কাব্য ও কবিতা সম্পর্কে রাসূল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের মনোভাব ইত্যাদি। চলতি রবিউল আউয়াল মাস উপলক্ষ্যে ‘বর্তমান প্রেক্ষাপট ও সিরাতচর্চা’ বিষয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। আলাপচারিতায় ছিলেন আতাউর রহমান খসরু

বাংলানিউজ: একজন মুমিনের জন্য সিরাতচর্চা অপরিহার্য কেন?
ড. আবদুল জলীল: সিরাত হলো নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গোটা নবুওয়তি জীবনের চালচিত্র। যা প্রতিটি মুমিন ও মুসলিমের জন্য অনুসরণীয় ও পালনীয়। রাসূলের আনুগত্য করতে হলে, তার নির্দেশ পালন করতে হলে; সর্বোপরি তাকে ভালোবাসতে হলে তার সিরাতচর্চা করতে হবে। সিরাতচর্চা করলে তার প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ ঘটবে এবং তার আনুগত্য সম্ভব হবে। আর রাসূলে কারিমের আনুগত্য ও ভালোবাসার মাধ্যমেই একজন মুমিনের ইহকাল ও পরকালীন সাফল্য নিহিত।

বাংলানিউজ: নবী জীবনের যে আদর্শের মাধ্যমে আমরা শান্তি ও মুক্তি লাভ করতে পারি। তার প্রচার ও প্রসার করা কার দায়িত্ব?
ড. আবদুল জলীল: হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার আদর্শ প্রচার ও প্রসারের দায়িত্ব সব মুসলিমকে দান করেছেন। কাউকে বিশেষভাবে দায়িত্ব দেননি। তিনি বলেন, ‘আমার পক্ষ থেকে একটি আয়াত হলেও প্রচার করো। ’ এমন নয় যে, কেউ বেশি জানে বলে সে প্রচার করবে। বরং যে অল্প জানে সেও তার জ্ঞান ও সামর্থ অনুযায়ী সিরাতের প্রচার ও প্রসার করবে। বিদায় হজের ভাষণে তিনি বলেন, ‘উপস্থিত ব্যক্তিরা অনুপস্থিত ব্যক্তিদের নিকট পৌঁছে দিবে। ’ এখানেও তিনি সাধারণভাবে প্রচারের কথা বলেছেন।

তবে হ্যাঁ, আলেমরা রাসূলের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিশেষ দায়িত্ব পালন করবেন। তার দায়িত্ব সাধারণ মানুষের চেয়ে অবশ্যই বেশি। এর চেয়ে বেশি দায়িত্ব ইসলামি রাষ্ট্রের। ইসলামি রাষ্ট্র তার শিক্ষা-দীক্ষা থেকে শুরু করে সর্বত্র নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শের অনুসারী হবে এবং তা প্রচারে আন্তরিকতার পরিচয় দিবে এটাই ইসলামের দাবী। মুসলমানের প্রত্যাশা।

বাংলানিউজ: বর্তমানে পুরো মুসলিম বিশ্ব এক গভীর সঙ্কট, সংঘাত ও অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পরিবার, সমাজ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিস্তৃত এই সঙ্কট নিরসনে সিরাতের ভূমিকা কী হতে পারে?
ড. আবদুল জলীল: বর্তমানে সারাবিশ্বে ইসলাম ও মুসলমানের নামে যে চরমপন্থা মাথাচারা দিয়ে উঠেছে, তা থেকে নিস্কৃতির উপায় হলো- সিরাতের ব্যাপক ও বিস্তৃত চর্চা। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃথিবীতে আগমনই করেছিলেন শান্তির বার্তা নিয়ে, মানুষকে সভ্য ও সুন্দর করে তুলতে। তার সারাজীবনের শিক্ষাই ছিলো মানুষ তার ইহকালীন জীবনে শান্তি ও কল্যাণময় একটি জীবনযাপন করবে এবং এর মাধ্যমে পরকালে মুক্তি ও ক্ষমা লাভ করবে। কিন্তু রাসূলের আদর্শ সম্পর্কে অবহিত না হওয়ায় কিছু মুসলিম বিভ্রান্তির শিকার হচ্ছে। হজরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দুই ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।

এক. যেখানে ক্ষমার অবকাশ আছে, যা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ নয়- সেসব তিনি ক্ষমা করে দিয়েছেন। তিনি নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলোকে সর্বদা উপেক্ষা করেছেন, ক্ষমা করেছেন। ‍

দুই. আর কিছু অপরাধ ছিলো মানবতার বিরুদ্ধে, যা সমাজে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা ও অরাজক অবস্থার সৃষ্টি হবে, তিনি তা কঠোর হাতে দমন করেছেন। যেমনÑ উরাইনা গোত্রের সাতজন লোক রাসূলের দরবারে এসে ইসলাম গ্রহণ করলো। এর পর তারা বললো, আমরা আপনার কাছে থেকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চাই, শিখতে চাই। রাসূলুল্লাহ তাদেরকে অনুমিত দিলেন এবং রাষ্ট্রীয় আতিথেয়তা প্রদান করলেন। পরে কোনো কারণে তারা অসুস্থ হয়ে পড়ল। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বললেন, যাও তোমরা সদকার উটের রাখালদের সঙ্গে অবস্থান করো। সেখানে গিয়ে সুস্থতার জন্য উটের দুধ ও পেশাব পান করো। তারা তাই করলো এবং সুস্থ হয়ে উঠল।

সুস্থ হয়ে তারা মুসলিম রাখালদের নির্মমতার সঙ্গে হত্যা করলো এবং উটসহ সমুদয় সম্পদ লুট কর নিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই সন্ত্রাসীদের চরম শাস্তির মুখোমুখি করলেন এবং যেভাবে রাখালদের হত্যা করেছিল সেভাবে তাদেরকে হত্যা করা হলো। তাদের প্রতি রাসূল কোনো প্রকার দয়া ও অনুকম্পা দেখালেন না। কারণ, এটা ছিলো সমাজ, রাষ্ট্র ও মানবতার বিরুদ্ধে এক চরম অপরাধ। সেদিন যদি তিনি তার স্বভাবসূলভ দয়া দেখাতেন, তবে সমাজের নিরীহ নিরাপরাধ মানুষের জীবন ও সম্পদ হুমকির মুখে পড়ত। সমাজে অপরাধে মাত্রা বৃদ্ধি পেতো। কিন্তু কঠোর হাতে সন্ত্রাসের মোকাবেলা করায় পরবর্তীতে এমন অপরাধ আর সংঘটিত হয়নি।

অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্ষমা ও আইনের শাসনের মাধ্যমে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূল করেছেন। আজও যদি আমরা ক্ষমা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারি সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে।

বাংলানিউজ: বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতে বাহ্যত মুসলিম জাতিকেই সবচেয়ে অসহনশীল ও অসহিষ্ণু দেখা যাচ্ছে। এর কারণ কী এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও অমুসলিমদের ব্যাপারে নবী করিম (সা.)-এর আদর্শ কী ছিলো?
ড. আবদুল জলীল: আমি মনে করি, এটা ইসলাম বিরোধী প্রচারণার ফসল। মিথ্যাচার ছাড়া এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। কারণ, ইসলাম সর্বোতভাবে একটি পরম সহনশীল ধর্ম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানবিক মূল্যায়নের ক্ষেত্রে মুসলিম ও অমুসলিমের মাঝে কোনো পার্থক্য করতেন না; বরং তিনি বিদায় হজের ভাষণে অমুসলিমের জীবন ও সম্পদ, ইজ্জত ও আবরুকে মুসলমানের মতোই নিরাপদ ঘোষণা করেছেন। যদি না তারা ইসলাম ও মুসলমানের বিরুদ্ধে আগ্রাসী না হয়।

পবিত্র কোরআনেও ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করা হয়েছে। ইসলামের সুদীর্ঘ ইতিহাসে কখনও জোরপূর্বক ধর্মপ্রচারের প্রমাণ পাওয়া যায় না। ইসলাম বিকশিত হয়েছে আপন মহিমায়। তরবারির জোরে নয়। সঠিক পদ্ধতি ইসলামের দাওয়াত দেওয়া হলে আজও মানুষ দলে দলে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করবে।
 
একটি ঘটনা বলি, সিরিয়া অঞ্চলের মুসলিম বাহিনী যখন ফিরে আসছিলো, তখন মুসলিম শাসক তাদের থেকে নেওয়া ‘জিজিয়া’ বা নিরাপত্তা কর ফিরিয়ে দিয়েছিলো। তখন তারা অশ্রুসজল হয়ে বলছিলো, হে মুসলিম ভাইয়েরা! তোমরা আবার ফিরে এসো। এটাই ইসলাম প্রচারের সঠিক চিত্র।

সুমামা ইবনে উসাল এক গোত্রের অধিপতি ছিলেন। তিনি মুসলিম বাহিনীর হাতে বন্দী হয়ে মদিনায় আসলেন। তাকে মসজিদে নববিতে শক্ত করে বাঁধা হয়েছিলো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তার বাঁধন হালকা করে দিতে। এরপর তিনি তাকে তিনদিন ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দিলেন। কিন্তু সুমামা ইসলাম গ্রহণে অস্বীকৃতি জানালেন। এর পর তাকে মুক্ত করে দেওয়া হলো। তিনি মুক্ত হয়ে মদিনার অদূরের একটি কূপে যেয়ে গোসল করে পবিত্র হয়ে রাসূলের কাছে উপস্থিত হলেন এবং ইসলাম গ্রহণ করলেন। পূর্বে ইসলাম গ্রহণ না করার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি গত তিন দিন আপনাদের সার্বিক আচরণ ও কার্যক্রম গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি। তা আমাকে মুগ্ধ করেছে। কিন্তু এজন্য ইসলাম গ্রহণ করিনি যে, লোকে বলবে আমি প্রাণের ভয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছি। এরপর তিনি বললেন, ইসলাম গ্রহণের পূর্বে আপনি ও আপনার ধর্ম ছিলো আমার কছে সবচেয়ে ঘৃণ্য ব্যক্তি ও বিষয়। আজ থেকে আপনি ও আপনার ধর্ম হলো- আমার সবচেয়ে প্রিয় বিষয়।
 
পবিত্র কোরআনে কারিমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নরম হৃদয়ের প্রসংশা করে বলা হয়েছে, যদি আপনি কঠোর হৃদয়ের অধিকারী হতেন, তবে লোকজন আপনার পাশ থেকে সড়ে যেতো। অর্থাৎ আখলাক ও আচরণই আপনাকে মানুষের নিকট প্রিয় করে তুলেছে। এটাই ছিলো, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ ও চারিত্রিক মাধুর্য।

বাংলানিউজ: আপনার আলোচনায় বোঝা গেলো, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন অত্যন্ত সহনশীল ও কোমল হৃদয়ের অধিকারী। অথচ ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে নবীর সমালোচনা কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এর ব্যাখ্যা কী?
ড. আবদুল জলীল: বিষয়টি অত্যন্ত যৌক্তিক। কারণ, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শুধু নবী জীবন নয়; বরং তেষট্টি বছরের গোটা জীবনটাই ছিলো মানবতার কল্যাণে নিবেদিত। নবুওয়তের আগে ও পরে সব সময় তিনি ছিলেন মানুষের আস্থা ও ভালোবাসার পাত্র। শুধু মুসলিম ঐতিহাসিক নয়; অমুসলিম ঐতিহাসিকরাও সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, বর্বর, অশিক্ষিত ও অসভ্য আরব সমাজকে যে জীবন ও শিক্ষা উপহার দিয়েছেন, তা শুধু মানবতার মুক্তিই ছিলো না, তা ছিলো গোটা মানব সভ্যতার অপরিহার্য দাবী। যে দাবী পূরণ না হলে, মানব সভ্যতা হয়তো আজকের এই আলোর মুখ দেখতো না। মানুষের পরকালীন জীবনের ব্যাপার তো আছেই। সুতরাং যে মানুষটি তার সারাজীবন মানবতার কল্যাণে নিবেদন করলেন, যার চরম শত্রুরাও যাকে চরিত্রে কালিমা লেপন করতে পারেনি, তার বিরুদ্ধে সমালোচনা সরাসরি মিথ্যাচার ও মানবতার বিরুদ্ধে জঘণ্য অপরাধ ছাড়া আর কী হতে পারে? এতো শান্তি ও কল্যাণেরই বিরুদ্ধাচারণ।

এ ছাড়াও যখন কেউ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গালি দিবে বা সমালোচনা করবে, তখন মুসলিম সমাজে ক্ষোভ ও ক্রোধের সৃষ্টি হবে, সমাজে বিদ্বেষের বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়বে। অরাজকতা সৃষ্টি হবে। সমাজ ও রাষ্ট্র এই বিশৃঙ্খলার সুযোগই বা কেন দিবে এবং তা সহ্যই বা কেন করবে? তার চেয়ে বরং এটাই ভালো নয় যে, সব অশান্তি ও অরাজকতার পথ পূর্ব থেকেই বন্ধ করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।

ইসলাম শুধু নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমালোচনা করতে নিষেধ করেছে; বিষয়টি এমন নয়। ইসলাম অন্য ধর্মের উপাস্যদের সমালোচনা করতেও নিষেধ করেছে। পবিত্র কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ ব্যতীত তারা যাদের উপাসনা করে তোমরা তাদের গালি দিয়ো না। ফলে তারাও অজ্ঞতাবশত আল্লাহকে গালি দিবে। ’

বাংলানিউজ: রাসূলের ভালোবাসা ঈমানের অপরিহার্য একটি দিক। কিন্তু এই ভালোবাসার প্রতিফলন কেমন হবে মুমিনের জীবনে?
ড. আবদুল জলীল: আনুগত্যের মাধ্যমেই ভালোবাসার প্রতিফলন হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আপনি বলুন! যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো আমার আনুগত্য করো। আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন। ’ অর্থাৎ ভালোবাসা ও আনুগত্যের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

বিখ্যাত এক আরব কবি বলেন, ‘নিশ্চয় প্রেমিক তার প্রেমাষ্পদের অনুগত্য করতে ভালোবাসে। ধরুন! ছেলে বাবাকে বললো, বাবা! আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। এরপর বাবা যখন তাকে বাজারে যেতে বললেন; সে তখন বললো আমি পারবো না। এটা কিন্তু ভালোবাসার প্রতিফলন নয়।

বাংলানিউজ: মুসলিম সাহিত্যের বিকাশে সিরাত সাহিত্যের ভূমিকা কী?
ড. আবদুল জলীল: সাহিত্য হলো মানবজীবনের দর্পণ। মানুষের সুখ, দুঃখ, আবেগ, অনুভূতি ও ভালোবাসা সাহিত্যের মাধ্যমে বিকশিত হয়। মুসলমানের আবেগ ও ভালোবাসার বড় জায়গাজুড়ে আছে নবীপ্রেম। তাই সিরাত সাহিত্য মুসলিম সাহিত্যের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বরং ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, মুসলিম সাহিত্যের প্রথম ও প্রাচীনতম স্মারক হজরত সাহাবায়ে কেরাম রাজিয়াল্লাহু আনহুর কবিতাসমূহের সিংহভাগই ছিলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শানে নিবেদিত। হজরত হাসসান ইবনে সাবেত, হজরত কাব ইবনে মালেক, হজরত আলী, হজরত ফাতেমাসহ অনকে সাহাবা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শানে কবিতা লিখেছেন। পরবর্তী যুগেও সিরাতকেন্দ্রিক সমূহ সাহিত্য কর্ম হয়েছে।

আরবি সাহিত্যের একটি স্বতন্ত্র ধারা হলো, ‘মাদাহ। ’ মুসলিম সাহিত্যে মাদাহের বিরাট অংশজুড়ে আছে রাসূলের শানে নিবেদিত পদ্য ও গদ্য। শুধু আরবি ভাষা নয়; মুসলমান উর্দু, ফার্সি, ইংরেজি ও বাংলা যে কোনো ভাষাতেই সাহিত্য রচনা করেছে, তাতে অবশ্যই সিরাতের একটি অংশ ও অবদান রয়েছে।

বাংলানিউজ: ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এ দেশের ইসলাম বিষয়ে সরকার নিয়ন্ত্রিত সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান। সিরাত বিষয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উল্লেখযোগ্য প্রকাশনাগুলো কী কী?
ড. আবদুল জলীল: সিরাতের ওপর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বহু প্রকাশনা রয়েছে। তন্মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার এবং বাংলা ভাষায় উল্লেখযোগ্য কাজ হলো- সিরাত বিশ্বকোষ। চৌদ্দ খণ্ডের এই বিশাল প্রকাশনার সমতুল্য কোনো গ্রন্থ বাংলা ভাষা এখন পর্যন্ত হয়েছে বলে আমার জানা নেই। এ ছাড়াও মাওলানা আবুল কালাম আযাদের রাসূলে রহমত, সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভীর নবীয়ে রহমত, প্রফেসর আবদুল খালেকের রহমাতুল্লিল আলামীন, কারী তৈয়ব সাহেবের নবী ভাস্কর, সীরাতে ইবনে হিশাম, সীরাতে ইবনে ইসহাক উল্লেখযোগ্য।

বাংলানিউজ: সিরাত বিশ্বকোষের উদ্যোগ, রূপরেখা তৈরি ও তার প্রণয়ন পদ্ধতি সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন?
ড. আবদুল জলীল: সিরাত বিশ্বকোষের ইতিহাসের সঙ্গে আবু সাঈদ ওমর আলী রহমাতুল্লাহি আলাইহির নাম বিশেষভাবে জড়িত। তিনি ছিলেন ইসলামি বিশ্বকোষ প্রজেক্টের পরিচালক। তখন মন্ত্রণালয় থেকে পঞ্চশালা প্রজেক্ট পাশ করা হতো। ইসলামি বিশ্বকোষের কাজ যখন একটি পর্যায়ে যেয়ে শেষ হলো এবং নতুন প্রজেক্ট প্রস্তাবের সময় হলো। মরহুম ওমর আলী সাহেব তখন দেশের বাইরে ছিলেন। আমি তখন নবী-রাসূলদের সিরাতের ওপর গ্রহণযোগ্য কিছু কাজ করার গুরুত্ব অনুভব করলাম এবং একটি খসড়া প্রস্তাবনা তৈরি করলাম। তিনি দেশে ফেরার পর দু’জনে মিলে পরিকল্পনা বিভাগের সহায়তার বিস্তারিত একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠালাম এবং মন্ত্রণালয় তা পাশ করলো। ১৯৯৫ সাল থেকে আমরা সিরাত বিশ্বকোষের কাজ শুরু করি।

প্রণয়ন পদ্ধতিটা ছিলো ইসলামি বিশ্বকোষের মতোই। একদল প্রাজ্ঞ, দক্ষ ও অভিজ্ঞ লেখক নির্বাচন করি। প্রথমে একটি সূচি তৈরি করি, তারপর তাদের অধ্যায় অধ্যায় ভাগ করে দেওয়া হয় এবং তাদের জমা দেওয়া লেখাগুলো বিশেষজ্ঞ সম্পাদনা পরিষদ চূড়ান্ত করে। এভাবেই সম্পন্ন হয় স্মরণীয় এই প্রকাশনার কাজ।

বাংলানিউজ: সিরাত বিষয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বহু প্রকাশনা এখন আর বাজারে নেই। এ ব্যাপারে প্রকাশনা বিভাগের বক্তব্য কী?
ড. আবদুল জলীল: মনিটরিংয়ের মাধ্যমে আমরা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনার পুনর্মুদ্রণ করে থাকি। আমাদের তালিকায় সিরাত বিষয়ক গ্রন্থগুলোকেও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সিরাতে ইবনে হিশামের পুনর্মুদ্রণ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করি, অন্যান্য প্রকাশনাগুলো ধীরে ধীরে বাজারে আনা সম্ভব হবে।



বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১৬
এমএ/

** অনলাইনে রাসূলের মাহাত্ম্য বেশি বেশি প্রচার করতে হবে
** অনলাইন মিডিয়াই পারে ইসলাম-জঙ্গিবাদের পার্থক্য বোঝাতে
** জঙ্গিবাদের সঙ্গে ইসলামকে মিলিয়ে ফেলা হচ্ছে
** আনফিল্টার্ড তথ্য বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে
** মহানবীর অনুসারীদের জঙ্গি হয়ে মানুষকে কষ্ট দেওয়া অসম্ভব
** চাচার হত্যাকারীকেও ক্ষমা করেছিলেন রাসূল
**মহানবীর চোখে কেউ সংখ্যালঘু নয়
** মহানবীর মধুর ভাষা প্রচারের অপার মাধ্যম ডিজিটাল মিডিয়া
** ‘মহানবী বসে পড়েছিলেন’
** আলেম-ওলামাদের ডিজিটাল মিডিয়ায় আসতে হবে
** বাংলানিউজের ইসলামি সেমিনার শুরু
** প্রিয় নবীর কিছু অনন্য গুণ
** ডিজিটাল মিডিয়ায় প্রিয় নবী (সা.)-এর মূল্যবোধ চর্চা
** নবীর ওপর বেশি বেশি দরুদ পড়ুন, মনে শান্তি পাবেন
** সিরাতে ইবনে কাসির: সিরাত শাস্ত্রের বিশুদ্ধতম গ্রন্থ
** সিরাতে ইবনে হিশাম: অনবদ্য এক সিরাত গ্রন্থ
** সর্বশ্রেষ্ঠ নবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মুজেযা নিয়ে কিছু কথা
** ইতিহাসের প্রথম সিরাতগ্রন্থ
** মুসলমানদের স্বমহিমায় জেগে ওঠার দিন
** নবীর অনুসরণই তার প্রতি ভালোবাসার শ্রেষ্ঠতম প্রতিফলন
** শ্রেষ্ঠ নবীর শ্রেষ্ঠ মুজেযা
** পূর্ণাঙ্গ সিরাতের চর্চা না থাকায় তরুণসমাজ সহজে বিভ্রান্ত হচ্ছে

** সিরাত কাকে বলে?
**  নবী মুহাম্মদ (সা.) শৈশব ও যৌবনে কেমন ছিলেন
**  ফেসবুকে মহানবীর মর্যাদা ও পরিচয় বিষয়ক ক্যাম্পেইন
**  নবী মুহাম্মদ (সা.) বিশ্ববাসীর জন্য সর্বোত্তম আদর্শ
** আল্লাহকে পেতে হলে সুন্নত পালন ও রাসূলকে ভালোবাসতে হবে
** পরিবেশ রক্ষায় নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর পদক্ষেপ ও নির্দেশনা
** স্বাগতম রবিউল আউয়াল মাস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।