ঢাকা, সোমবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

আধুনিক বিজ্ঞানকে ইসলাম অস্বীকার করে না

মুহাম্মাদ রাশিদুল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৬
আধুনিক বিজ্ঞানকে ইসলাম অস্বীকার করে না

ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার ফলে কোনো বিষয়ে প্রাপ্ত ব্যাপক ও বিশেষজ্ঞান, অন্য কথায় পরীক্ষা প্রমাণ প্রভৃতি দ্বারা নিরূপিত শৃঙ্খলাবদ্ধ জ্ঞানের অপর নাম বিজ্ঞান। বিজ্ঞান নিঃসন্দেহে মানুষের মস্তিষ্কপ্রসূত জ্ঞান।

মানুষের যেমন বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকে; তেমনি মানুষের মস্তিষ্কপ্রসূত জ্ঞানেরও নানা সীমাবদ্ধতা থাকবে- এটাই স্বাভাবিক। তাই বিজ্ঞান পরিবর্তনশীল। তাই তো দেখা যায়, নতুন নতুন অনেক গবেষণা পুরনো অনেক গবেষণা ও অভিজ্ঞতার ফলাফলকে ভুল ও ক্ষেত্রবিশেষ হাস্যকর প্রমাণিত করে।

বিজ্ঞানের পরিবর্তনশীলতার অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রাচীন ও আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের কিছু গবেষণার ফলাফল এবং দুইয়ের বৈপরীত্য নমুনা হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে।

প্রাচীন জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও গ্রীক দার্শনিকদের মতে পৃথিবী হলো- মহাবিশ্বের কেন্দ্র। পৃথিবীর কোনো গতি নেই, একেবারে স্থির। আংটির মধ্যে মুক্তা এবং দেয়ালের গায়ে পেরেক যেমন প্রোথিত, সমস্ত গ্রহ পৃথিবীর চারিদিকে বেষ্টিত কঠিন পদার্থে সৃষ্ট আকাশের গায়ে ঠিক সেভাবে প্রোথিত। আকাশের নয়টি স্তর রয়েছে। এর প্রতিটি স্বচ্ছ কাচেঁর মতো। প্রত্যেকটির নিজস্ব গ্রহ নক্ষত্র রয়েছে।

প্রথম আসমান পৃথিবীকে চতুর্দিক থেকে বেষ্টন করে রয়েছে। এভাবে সবক’টি আসমানকে বেষ্টন করে রেখেছে নবম আসমান। অনেকটা পেঁয়াজের খোসার স্তরের মতো। আকাশের প্রতিটি স্তর নিজ নিজ গ্রহ নক্ষত্রসহ প্রতি চব্বিশ ঘণ্টায় পূর্ব থেকে পশ্চিমে একবার ঘুরে আসে। আর এ কারণে দিন রাত হয়।

পক্ষাস্তরে আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের গবেষণা বলে, মহাবিশ্বের কোনো কেন্দ্র নেই। তবে সৌরজগতের কেন্দ্র হলো সূর্য। পৃথিবীর একই সঙ্গে দু’টি গতি রয়েছে; আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতি। সকল গ্রহ-নক্ষত্র মহাশূন্যে ভাসমান। আহ্নিক গতির কারণে পৃথিবীর দিন রাত হয়। -আল হাইয়াতুস সুগরা: ৪, মুসা রুহানি, আরবি

পবিত্র কোরআনে কারিমের ভাষ্যমতে প্রতিটি গ্রহ-নক্ষত্রের নিজস্ব গতি আছে। আপন আপন কক্ষপথে সেগুলো সন্তরণ করছে অনবরত। ইরশাদ হচ্ছে, ‘সূর্য নিজ অবস্থানস্থলের (গন্তব্য) দিকে চলতে থাকে। ’ -সূরা ইয়াসিন

আয়াতে সূর্যের গন্তব্য বুঝানোর জন্য আরবি ‘মুস্তাকার’ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। শব্দটির অর্থ হচ্ছে, অবস্থানস্থল এবং অবস্থানকাল । শব্দটি কখনও ভ্রমণের শেষসীমার অর্থেও ব্যবহৃত হয়। বিরতি না দিয়ে পুনরায় ভ্রমণ শুরু করার অর্থও শব্দটি প্রদান করে। -মাআরেফুল কোরআন

‘অবস্থানকাল’ অর্থ হলে আয়াতের মর্ম হবে, সূর্য তার চলার নির্ধারিত সময় পর্যন্ত সন্তরণ করতে থাকবে। আর সেই সময়টি হলো, কেয়ামতের দিন। অর্থাৎ সূর্য একটি সুনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাপনায় নিজ কক্ষপথে পরিভ্রমণ করছে। এক মুহূর্তের জন্যও এতে হেরফের হয় না। তবে সূর্যের এই সন্তরণ অনন্তকালের জন্য নয়। বরং এই চলারও একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে। এক সময়ে এর গতি স্তব্ধ হায়ে যাবে। তখনই কেয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে। এই তাফসির বিখ্যাত তাবেয়ি হজরত কাতাদা রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত।

আর যদি আয়াতে ব্যবহৃত শব্দ ‘মুস্তাকার’ দ্বারা অবস্থানস্থল উদ্দেশ্য হয়, তাহলে অর্থ হবে- সূর্য সৃষ্টিলগ্ন থেকে তার কক্ষপথের যে স্থানটি থেকে আবর্তন শুরু করেছে, বৃত্তাকারে সেদিকেই সেটি চলতে থাকে। ঠিক সেখানে গিয়ে তার একবারের প্রদক্ষিণ শেষ হয়। এভাবে আবার দ্বিতীয় ঘূর্ণনপ্রক্রিয়া শুরু হয়। অপর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, ‘সূর্য ও চন্দ্র নিজ নিজ কক্ষপক্ষে সন্তরণ করে। ’ -সূরা ইয়াসিন: ৪০

‘ফালাক’ শাব্দের অর্থ ‘আকাশ’ নয়, বরং যে কক্ষপথে গ্রহ নক্ষত্র বিচরণ করে তাকেই ‘ফালাক’ বলে। এই আয়াতের আলোকে বলা যায়, চন্দ্র (ইত্যাদি গ্রহ-নক্ষত্র) আকাশের গায়ে প্রোথিত নয়। যেমনটি গ্রীক দার্শনিকদের অভিমত। তবে আধুনিক গবেষণা কোরআনে কারিমের বাণীকে চাক্ষুস প্রমাণে উন্নীত করেছে। -মাআরেফুল কোরআন

প্রায় পনের শত বছর পূর্বে পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও এক্ষেত্রে কোরআনে কারিমের সঙ্গে আধুনিক গবেষণার অপূর্ব মিল রয়েছে। এ জাতীয় অসংখ্য আধুনিক গবেষণার ফলাফল কোরআন মজিদের সঙ্গে মিলে যায়। বিজ্ঞানের এ জাতীয় গবেষণা মেনে নিতে ইসলামি শরিয়তেরও কোনো বাঁধা নেই।



বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৬
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।