ঢাকা, শনিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

ইসলাম

আল্লাহর প্রিয় হবেন যেভাবে

মাওলানা শাহ আবদুস সাত্তার, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৬
আল্লাহর প্রিয় হবেন যেভাবে

দুনিয়ার জীবনের সব কাজকর্ম, চেষ্টা-প্রচেষ্টা, সৎ নিয়ত ও সৎকর্ম এবং নেক আমল সবই আল্লাহতায়ালার ভালোবাসা দৃঢ় করার উপলক্ষ মাত্র। আল্লাহর ভালোবাসা ও সন্তুষ্টি অর্জনই মানুষের সর্বোচ্চ মর্যাদার সম্বল।

আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে- আল্লাহর প্রতি নিজেকে সম্পূর্ণভাবে উৎসর্গিত করে দেওয়া। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, 'আল্লাহপাক তাদের ভালোবাসেন এবং তারাও আল্লাহকে ভালোবাসে। '

হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তার রাসূলকে দুনিয়ার সবকিছু থেকে না ভালোবাসেন, তার ইমান আদৌ পূর্ণতা লাভ করে না। এক সাহাবি একবার হজরত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ইমান কী? আল্লাহর নবী উত্তরে বললেন, আল্লাহ এবং তার রাসূলের সঙ্গে সর্বাপেক্ষা অধিক ভালোবাসার নাম ইমান। সে পর্যন্ত কেউই পূর্ণ মুমিন হতে পারে না, যতক্ষণ না সে তার পরিবার-পরিজন, ধন-দৌলত এবং নশ্বর দুনিয়ার সব মোহ থেকে আল্লাহ ও তার রাসূলকে অধিক ভালো না বাসে।

জনৈক ব্যক্তি হজরত রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মহব্বতের দাবি করল। এ কথা শুনে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দারিদ্র্যের জন্য তৈরি হও। তারপর আবার সে বলল, আল্লাহকে মহব্বত করি। হজরত রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তা হলে বালা-মুসিবত, দুঃখ-কষ্ট সহ্য করার শক্তি সঞ্চয় করো। একবার এক আরবি এসে হজরত রাসূলেপাককে জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! কেয়ামত কবে হবে? আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সেদিনের জন্য তুমি কী সংগ্রহ করেছ? আরবি লোকটি বললেন, নামাজ-রোজা বেশি করতে পারিনি। তবে আল্লাহপাক এবং তার রাসূলকে মহব্বত করি। এ কথা শুনে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নিশ্চিন্ত থাকো, তুমি যাদেরকে মহব্বত করো, ভালোবাসো, রোজ কিয়ামতে তাদের সঙ্গেই তুমি থাকবে। হজরত আবু বকর সিদ্দিক রাযিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, যে একবার আল্লাহর মহব্বতের স্বাদ পায়, সে এই নশ্বর দুনিয়াকে অপছন্দ করে।

আল্লাহর ভালোবাসা দুনিয়ার সবকিছুর ঊর্ধ্বে। সুতরাং এই ভালোবাসা সত্যিকারভাবে প্রমাণিত হবে আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাতদের মধ্যে। যাকে ভালোবাসা যায়, জানপ্রাণ দিয়ে তার সন্তুষ্টি সাধন করাই হচ্ছে ভালোবাসার প্রকৃত পরিচয়। এটাই হবে মূলত ভালোবাসার আদর্শ। এ সম্পর্কে হজরত রাসূলে মকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর ইচ্ছায়, মর্জিতে রাজি-খুশি থাকাই হচ্ছে মহব্বতের বড় দরজা। মহব্বত অতি প্রবল ও খাঁটি হলে অন্য কিছু সেখানে দাঁড়াতে পারে না, মহব্বতই প্রাধান্য লাভ করে। যে আল্লাহর সন্তুষ্টিতে রাজি-খুশি থাকে, সে নিঃসন্দেহে উচ্চ মরতবায় পৌঁছে যায়। কেননা সে তো যে কোনো দুঃখ-কষ্টে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সচেষ্ট থাকে এবং আল্লাহর হুকুম-আহকামগুলো নিখুঁতভাবে পালনের চেষ্টা করে আদায় করে।

একবার হজরত বিখ্যাত বুজুর্গ হজরত জুনায়েদ বাগদাদি রহমাতুল্লাহিকে জিজ্ঞেস করা হলো, আল্লাহপ্রেমিক ব্যক্তি কখনও কি বালা-মুসিবতে পতিত হয়, হলে কি অস্থির হয়? তিনি জবাবে বললেন, না, তা হয় না। আবার জিজ্ঞেস করা হলো, যদি নিদেনপক্ষে তরবারি দ্বারা ৭০টি আঘাত করা হয়? এ কথায় তিনি হাসিমুখে বললেন, এতেও সে বিন্দুমাত্র অস্থির বা হাঁ-হুতাশ করবে না।

অতএব, দুনিয়ার যাবতীয় বালা-মুসিবত, দুঃখ-কষ্ট, ব্যথা-বেদনা সহ্য করতে হবে। কেননা পরকালে আল্লাহর ভালোবাসা ছাড়া অন্য কোনো সম্বল নেই। কাজেই সেই সৌভাগ্যবান, যে দুনিয়ার জীবনে সর্বাবস্থায় আল্লাহর ভালোবাসার রঙে উজ্জ্বল। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, নিজেকে যে পরিশুদ্ধ ও পবিত্র করেছে সেই কল্যাণ ও মঙ্গল লাভ করেছে। আর যে পথভ্রষ্ট হয়েছে সে বিফল মনোরথ হয়েছে।

মোটকথা, মানুষের ভালোবাসার একমাত্র লক্ষ্য হলো কেবল আল্লাহ, এক আল্লাহ। এক আল্লাহ ব্যতীত ভালোবাসার উপযুক্ত এই দুনিয়ার সংসারে আর কিছু নেই। তাই যে দুনিয়াকে ভালোবাসে, সে আল্লাহকে ভুলে যায়। তার মতো কপাল পোড়া জাহেল আর কেউ নেই। অন্যদিকে, যে আল্লাহকে ভালোবাসে এবং সেই সঙ্গে অন্য সবাইকে ভালোবাসে সে যথার্থ পথে রয়েছে। পিতা-মাতা, ভাইবোন, আত্মীয়-স্বজন এবং গরিব-দুঃখীজন ও অন্য সবাইকে মানবতার দৃষ্টিতে ভালোবাসে, সে মূলত আল্লাহকেই ভালোবাসে। অতএব আসুন, আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হুকুম-আহকাম মেনে চলি, ইহকালে-পরকালে সুখ-শান্তি অর্জন করি।

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৬
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।