ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

দারিদ্র্য বিমোচনে জাকাতের সুষ্ঠু ব্যবহার দরকার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৯ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৬
দারিদ্র্য বিমোচনে জাকাতের সুষ্ঠু ব্যবহার দরকার

মামুন সাহেব বিশাল সম্পত্তির মালিক। দানশীল হিসেবেও তার রায়েছে পরিচিতি।

শহরে থাকলেও গ্রামে রয়েছে তার আলিশান বাড়ি। ঈদ কিংবা সামজিক অনুষ্ঠানে গ্রামের বাড়িতে আসেন। রমজানের শেষদিকে এলাকার গরিবদের মাঝে তিনি ‘জাকাতের কাপড়’ বিতরণ করেন। প্রতিবারের মতো এবারও তর এক শহুরে বন্ধুকে নিয়ে এসেছেন ‘জাকাতের কাপড়’ বিতরণে এসেছেন। শুরু হলো বিতরণ। সারিবদ্ধ হয়ে একেকজন আসছেন আর নিয়ে যাচ্ছেন শাড়ি-লুঙ্গি। এক বৃদ্ধ এসে সালাম দিয়ে একটি লুঙ্গি গ্রহণ করে দোয়া করতে করতে চলে যাচ্ছেন। মামুন সাহেব তার শহুরে বন্ধটিকে বললেন, ‘এই যে বৃদ্ধ লুঙ্গি নিয়ে গেল তার দাদাকে আমার দাদা জাকাত দিতেন, তার বাবাকে দিতেন আমার বাবা সেই ধারাবাহিকতায় আমি তাকে প্রতিবছরই জাকাত দিচ্ছি..। ’ -এই হলো আমাদের সমাজে জাকাতের বাস্তব চিত্র।
 
মামুন সাহেবের মতো সামান্য কাপড়-লুঙ্গি দিয়ে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে দারিদ্রকে জিইয়ে রাখাই কি জাকাতের লক্ষ্য? কখনো না। জাকাত এসেছে দারিদ্র্যকে সমূলে উৎপাটন করার জন্য। মামুন সাহবের মতো জাকাত দিলে কিয়ামত পর্যন্তও দারিদ্র্য বিমোচন হবে না। অথচ আমাদের দেশের বিত্তশালীরা জাকাত দেওয়ার এ পথটিকেই বেছে নেন।

কারণ, এতে দারিদ্র বিমোচন না হলেও তাদের দানশীল হিসেবে পরিচিতিটা তো হচ্ছে বেশ! জাকাত যেন গরিবের জন্য নয়; বরং ধনীদের সুবিধার জন্য। তা হলো ধনীরা ‘জাকাতের লুঙ্গি-শাড়ি’ দিয়ে সুনাম কুড়ানো। জাকাত তো অনুদান নয়। জাকাত ফরজ হতেই ধনীরা যেন গরিবদের কাছে ঋণী হয়ে গেল। ঋণের ক্ষেত্রে তার পাওনাদারকে খুঁজে বের করে অথবা তার বাড়িতে গিয়ে দিয়ে আসা তার কর্তব্য; তা দিয়ে না আসা পর্যন্ত সে দায়মুক্ত হয় না তেমনি তেমনি জাকাত দাতাও এর হকদারের কাছে ঋণী। জাকাতের হকদারকে খুঁজে বের করে তাদের হাতে তা পৌছে না দেয়া পর্যন্ত সে দায়মুক্ত নয়। মাথাব্যথাটা তো জাকাতদাতার।

প্রশ্ন হলো বাংলাদেশে কি জাকাতে দারিদ্র বিমোচন সম্ভব? উত্তর- হ্যাঁ, সম্ভব। সেই সম্ভবকে বাস্তবায়নে জাকাতের অর্থ শাড়ি-লুঙ্গির নামে খুচরাভাবে না দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থানমূলক খাতে ব্যবহার করতে হবে। কারণ, জাকাতের টাকার কোনো সুদ তো দূরের কথা আসল টাকাও ফেরত দিতে হয় না। নেই কোনো কিস্তির চিন্তা। কর্মসংস্থানের পর মনিটরিং করলে সহজেই দারিদ্র্যকে জয় করা যায়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের ২১ শতাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে। আর ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ ৮ হাজার ৮৭৬। এই ১৬ লাখ (প্রায়) পরিবারের দারিদ্র্যের বিপরীতে আদায়যোগ্য জাকাতের পরিমাণ কত?

ইসলামি ব্যাংক কনসালটেটিভ ফোরামের (আইবিসিএফ) এর তথ্যমতে শুধু ব্যাংক ডিপোজিট থেকেই বছরে ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা জাকাত আদায় করা সম্ভব। আর ব্যাংকের বাইরে মানুষের যে সম্পদ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে তা থেকে যদি জাকাত আদায় করা হয় তাহলে এর পরিমাণ কী দাঁড়ায়? এক গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশে জাকাতযোগ্য সম্পদের পরিমাণ ১০ লাখ কোটি টাকা। এর থেকে আড়াই শতাংশ হারে জাকাত আদায় করলে ২৫ হাজার কোটি টাকা জাকাত আদায় করা সম্ভব।

এই ২৫ হাজার কোটি টাকা জাকাত আদায় করলে ২৫ লাখ পরিবারকে দেয়া যেত এক লাখ টাকা করে। এবার যে ২৫ লাখ পরিবারকে দেয়া হলো ১ লাখ টাকা করে তাদেরকে কি আগামী বছর জাকাত দেয়ার প্রয়োজন হবে? না। আগামী বছর অন্য ২৫ লাখ পরিবারকে দেওয়া যাবে ১ লাখ করে। পরবর্তী বছর জাকাতের পরিমাণও বাড়বে। প্রথম বছর যে ২৫ লাখ জনকে দেওয়া হলো তৃতীয় বছরে এসে তাদের সিংহভাগই অল্প হলেও জাকাত দিতে পারবে। তাদের জাকাতও যোগ হবে জাকাত তহবিলে। কিন্তু এই ২৫ হাজার কোটি টাকা যাদের সম্পদ থেকে আদায় করা হবে তাদের ক্ষতি হবে না কিছুতেই। কারণ তা আদায় করা হবে জীবন-জীবিকার প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থেকে। আর বাংলাদেশে আদায়যোগ্য ২৫ হাজার কোটি টাকা প্রথম বছর যদি ভূমিহীন ১৫ লাখ পরিবারকে বণ্টন করা হয় তবুও তো প্রতি পরিবারকে দেওয়া যাবে দেড় লাখ টাকারও বেশি করে।

এভাবে দারিদ্র্য বিমোচনে বিদেশি ঋণের সুদের বোঝা না টেনে দেশের এই অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে সুপরিকল্পিত জাকাত ব্যবস্থাপনায় ৫ বছরেরও কম সময়ে দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব। প্রয়োজন শুধু উদ্যোগের।

লেখক: খতিব, বাইতুশ শফিক মসজিদ, রোর্ড বাজার, গাজীপুর

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৮ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।