ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

ইসলাম মানুষকে সব ধরনের বাড়াবাড়ি থেকে দূরে থাকতে বলে

মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ৫, ২০১৬
ইসলাম মানুষকে সব ধরনের বাড়াবাড়ি থেকে দূরে থাকতে বলে

পবিত্র কোরআনের সূরা নিসার ১৩৫ নম্বর আয়াতটিকে মানব ইতিহাসে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মহত্ত্বম ও উচ্চতম সনদ বলে মনে করা হয়। এই আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা সব সময় ন্যায়বিচারে অটল থাকো এবং আল্লাহর জন্য সাক্ষী হও, যদিও তা স্বয়ং তোমাদের বা তোমাদের নিজেদের বাবা-মা বা আত্মীয়-স্বজনের বিরুদ্ধে হয়।

(যার জন্য বা যার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে হবে) সে ধনী বা নিঃস্ব যাই হোক না কেন (তা যেন তোমাদের সাক্ষ্যে প্রভাব না ফেলে)। কারণ, (পৃষ্ঠপোষক হিসেবে) আল্লাহ উভয়ের জন্য তোমার চেয়ে বেশি অধিকারপ্রাপ্ত। তাই (সাবধান) নিজেদের স্বার্থপরতার কাছে রিপুর কামনা-বাসনার অনুবর্তী হয়ো না। আর যদি তোমরা পেঁচালো কথা বলো, অথবা সত্যকে বিকৃত করো অথবা উপেক্ষা করো, (তাহলে জেনে রাখো,) তোমরা যা কিছু করছো আল্লাহ সে বিষয়ে পুরোপুরি খবর রাখেন।

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইসলামি স্কলাররা বলেন, বর্ণিত আয়াতে মুমিনদের সম্বোধন করে বলা হচ্ছে, সর্বাবস্থায় সব মানুষের ব্যাপারে ন্যায়নিষ্ঠ হতে; ন্যায়ের মাপকাঠি রক্ষা করতে গিয়ে যদি আপনজনেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবুও। ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে কিংবা সাক্ষ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র আল্লাহর মানদণ্ডকেই সামনে রাখতে হবে, স্বজনপ্রীতি কিংবা ধনিক প্রীতি নয়। এই আদেশ থেকে প্রমাণিত হয়, ইসলাম মানবিক বিষয়গুলোর বেশি নজর রাখে এবং সব ক্ষেত্রে সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্যে মুমিনদেরকে সতর্ক থাকার শিক্ষা দেয়।

বর্ণিত এ আয়াতের শিক্ষা হলো-
১. ন্যায় প্রতিষ্ঠা ঈমানের অপরিহার্য শর্ত। আর ন্যায়ের মানদণ্ড হলো- আল্লাহর হুকুম।
২. জীবনের সবক্ষেত্রেই ন্যায়ের বাস্তবায়ন ঘটানো। সবল মানুষের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য এমনকি অমুসলিমের জন্যও।
৩. ধনী-গরীব নির্বিশেষে সব মানুষ আইনের সামনে সমান। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে, চাই পক্ষে যাক কিংবা বিপক্ষে।

বস্তুত পবিত্র ধর্ম ইসলাম মানুষকে জীবনের সব ক্ষেত্রে সব ধরনের বাড়াবাড়ি থেকে দূরে থাকতে বলে। এই ধর্ম ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে ন্যায়বিচার সমুন্নত রাখতে বলে। ইসলামের দৃষ্টিতে যে ব্যবস্থা ন্যায় বিচারভিত্তিক হবে কেবল তা-ই টিকে থাকবে। তাই এ ধর্ম সাক্ষ্য দানের সময় ন্যায় ও সততা বজায় রাখতে বলে। সাক্ষ্য দেওয়ার সময় পক্ষপাতিত্ব প্রকাশ কিংবা সত্য গোপন করাকে নিষিদ্ধ করেছে ইসলাম। এমনকি সত্য ও ন্যায়ভিত্তিক সাক্ষ্য দেওয়ার ফলে তা যদি নিজের এবং বাবা-মায়ের মতো ঘনিষ্ঠজনের জন্যও ক্ষতিকর হয়- সে ক্ষেত্রে সত্যকেই তুলে ধরতে হবে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ধনী-গরিবের মধ্যেও কোনো ভেদাভেদ করা যাবে না। অর্থাৎ ধনীর ধন-সম্পদ বা দরিদ্রের নিঃস্বতাও যেন সাক্ষ্য দানে প্রভাব না ফেলে। কারণ, তাদের অবস্থার বিষয়ে আল্লাহই সবার চেয়ে ভালো জ্ঞান রাখেন।

অনেকেই ধর্মকে ব্যক্তিগত এবং ব্যক্তি ও স্রষ্টার মধ্যে সীমিত বিষয় বলে মনে করেন। কিন্তু ইসলাম ধর্মকে সমাজ ও ব্যক্তি- এই উভয় জগতের জন্যই সৌভাগ্যের মাধ্যম বলে উল্লেখ করে। ইসলামের দৃষ্টিতে ধার্মিক হওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতি পালন, আমানত রক্ষা করা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা জরুরি। আর সুস্থ সমাজ গঠনের জন্য আমানতদারী ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা জরুরি। এ দুই ভিত্তি ছাড়া সুস্থ সমাজ গঠন সম্ভব নয় বলে ইসলাম মনে করে।

ইসলাম ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়। ইসলামের ইতিহাসে এমন অনেক ঘটনা রয়েছে। মুসলমান হিসেবে আমাদের উচিৎ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আপন আপন জায়গা থেকে প্রচেষ্টা করা। আল্লাহ আমাদের তওফিক দান করুন। আমিন।

বাংলাদেশ সময়: ০১৫১ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।