ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

পবিত্র কাবা ও মসজিদের ছবি থাকা জায়নামাজ ব্যবহার প্রসঙ্গে

মুফতি মাহফূযুল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৬
পবিত্র কাবা ও মসজিদের ছবি থাকা জায়নামাজ ব্যবহার প্রসঙ্গে

পবিত্র কাবা, মসজিদের নববী ও বায়তুল মোকাদ্দাসসহ বিভিন্ন মসজিদের ছবিযুক্ত জায়নামাজ ব্যবহারের বিধান নিয়ে আলোচনা করতে হলে বেশ কয়েকটি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টিপাত করতে হবে। আর সবার আগে মনে রাখতে হবে হবে, জায়নামাজ ব্যবহার নিয়ে।

জায়নামাজ নামাজের জন্য শর্ত বা আবশ্যকীয় কোনো বস্তু নয়। জায়নামাজে নামাজ পড়লে সওয়াব বেশি হবে- এমনটি নয়। বরং নামাজের জায়গা যদি পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন থাকে তবে জায়নামাজ ছাড়াও সরাসরি মেঝের ওপর নামাজ পড়া যাবে।

ছবির ব্যবহার সম্পর্কে ইসলামের বিধান হলো প্রাণীর ছাপানো ছবি দৃশ্যমান  করে রাখা হারাম। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘যারা ছবি ছাপায় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের অভিশাপ দিয়েছেন। ’ –সহিহ বোখারি: ৫৩৪৭

আরেক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ছবি ছাপায় কিয়ামতে তাদের শাস্তি হবে সবচেয়ে বেশি। ’ –সহিহ মুসলিম: ৫৬৬১

হাদিসে আরও বলা হয়েছে, ‘যে ঘরে ছবি থাকে; সে ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। আর ছবি যদি প্রাণীর না হয়ে অন্য কিছুর হয় তা ঘরে ঝুলিয়ে রাখতে বা দৃশ্যমান করে রাখতে কোনো সমস্যা নেই।

কাবা শরিফ আল্লাহর ঘর। ইসলামের মর্যাদার প্রতীক। মুসলমানদের ইবাদাতের কেবলা। হজ ও উমরার সময় কাবা প্রদক্ষিণ করতে হয়। নামাজ পড়তে হয় কাবার দিকে ফিরে। কাবার দিকে ফিরে বা কাবাকে পিছন দিয়ে মল-মূত্র ত্যাগ করা জায়েজ নেই। কবরে মৃতকে কাবার দিকে ফিরিয়ে শোয়ানো সুন্নত। কাবার চত্বরে বসে কাবার দিকে তাকিয়ে থাকাও সওয়াবের কাজ। কাবাকে সম্মান করা ও ভালোবাসা ঈমানের অংশ বিশেষ।

কিন্তু কোরআন-হাদিসের কোথাও কাবার ছবি ঘরে ঝুলিয়ে রাখতে বলা হয়নি। তাই কাবার ছবি ঘরে রাখাতে বরকতের বা সওয়াবের কিছু নেই। তবে কারো ব্যক্তিগত অভিরুচি ও আগ্রহ থেকে রাখলে রাখতে পারে; নিষেধ নেই। কিন্তু কাবার ছবির সঙ্গে এমন কিছু করা যাবে না- যা সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে কিংবা সভ্যতার দৃষ্টিকোণ থেকে অবমাননার পর্যায়ে পড়ে। আবার কাবার ছবির প্রতি অতিরিক্ত কোনো ভক্তি ও শ্রদ্ধাও প্রদর্শন করা যাবে না। বাড়তি সওয়াবের আশায় কাবার ছবি সামনে রেখে নামাজ পড়লে সওয়াব তো হবেই না, বরং উল্টো গোনাহ হবে।

নামাজের একাগ্রতা ও ধ্যান-মগ্নতার জন্য প্রতিবন্ধক না হলে কাবার ছবিযুক্ত জায়নামাজে নামাজ পড়তে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু কাবার ছবি যদি কারো নামাজের ধ্যান ভেঙে দেয়- তবে তার জন্য উচিৎ হবে না এ ধরণের জায়নামাজে নামাজ পড়া।

হজরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, একদা আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নকশা আঁকা এক চাদরে নামাজ আদায় করেন। নামাজের ভেতরে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দৃষ্টি একবার নকশার দিকে পড়ে যায়। নামাজ শেষে তিনি বললেন, আমার এ চাদর আবু জাহমার কাছে নিয়ে যাও। অার আবু জাহমার আম্বিজানিয়া চাদর নিয়ে আস। কেননা এটা এখনই আমার নামাজ নষ্ট করেছে।

হিশাম ইবনে উরউয়ার বর্ণনায় আছে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি নামাজের দিকে তাকাচ্ছিলাম আর ভয় পেতেছিলাম- এ চাদর আমাকে গোনাহগার বানাবে। -সহিহ বোখারি: ৩৭৩

হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত আয়েশা (রা.)-এর একটি পর্দা ছিল। তিনি তা দ্বারা তার ঘরের এক পাশ ঢেকে রেখেছিলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার এ পর্দা আমার থেকে দূর কর। কেননা এর নকশাগুলো নামাজের ভেতরে বারংবার আমার সামনে পড়ে। -সহিহ বোখারি: ৫৯৫৯

অন্যদিকে কাবার ছবিযুক্ত জায়নামাজ পা দিয়ে পদদলিত করা, বিছিয়ে বসা ইত্যাদি জায়েয হবে না। কেননা, এগুলো কাবার অবমাননার পর্যায়ে পড়ে। সুতরাং পবিত্র কাবাসহ মসজিদের ছবিযুক্ত জায়নামাজ ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।