ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

পরকালে শান্তি নিশ্চিত করুন আত্মসমালোচনায়

মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৬
পরকালে শান্তি নিশ্চিত করুন আত্মসমালোচনায় ছবি: সংগৃহীত

নফস শব্দের অর্থ প্রবৃত্তি, মন, রিপু, কামনা, ভোগ, পাপ, অহঙ্কার ইত্যাদি। মানুষের মাঝে তিন প্রকার নফসের সম্মিলন ঘটেছে।

নফসে আম্মারা, নফসে লাউয়ামা ও নফসে মুতমায়িন্না। এর মাঝে নফসে আম্মারা বা কুপ্রবৃত্তি মানুষকে জৈবিক কামনাবাসনা ও দুনিয়ার লোভ-লালসার দিকে আকৃষ্ট করে তাকে মন্দকাজের দিকে নিয়ে যায়। অধিকহারে মন্দকাজ বান্দার অন্তরকে কঠিন করে তোলে ও ধীরে ধীরে ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। এ প্রসঙ্গে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যখন বান্দা কোনো পাপ করে তখন তার অন্তরে কালো দাগ পড়ে যায়। যখন সে তওবা করে তখন সেটা তুলে নেওয়া হয়। আর তওবা-ইস্তিগফারের মাধ্যমে অন্তরকে পরিষ্কার করা হয়। আর যদি পাপ বাড়তেই থাকে তাহলে দাগও বাড়তে থাকে। আর এটাই হলো মরিচা। ’ –তিরমিজি

কমিবেশি সব মানুষই মন্দকাজ করে। তবে মন্দ কাজ থেকে বাঁচতে দরকার আত্মসমালোচনা। একজন মানুষ যদি প্রতিদিন তার নিজের পাপের হিসাব নেয়, তাহলে তার মাঝে অনুশোচনাবোধ সৃষ্টি হবে। ফলে সে আর ওই পাপে জড়াবে না।

আত্মসমালোচনা খুব কঠিন কোনো কাজ নয়। আত্মসমালোচনা হলো- নিজের সম্পর্কে সমালোচনা করা। একে আরবিতে ‘মুহাসাবা’ বলে। অর্থ- আত্মার হিসাব গ্রহণ করা। পারিভাষায় আত্মসমালোচনা বলতে বোঝায়, সচেতনভাবে কোনো কাজ সম্পন্ন করা বা পরিত্যাগ করা, যাতে কৃতকর্ম সম্পর্কে নিজের সুস্পষ্ট ধারণা থাকে।

ইসলামে আত্মসমালোচনার গুরুত্ব অপরিসীম। আত্মসমালোচনাকে প্রত্যেক মুমিনের জন্য অপরিহার্য ঘোষণা করে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য উচিত আগামীকালের জন্য (অর্থাৎ আখেরাতের জন্য) সে কী পাঠিয়েছে, তা চিন্তা করা। আর তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা আল্লাহকে ভুলে গেছে; ফলে আল্লাহ তাদেরকে আত্মভোলা করে দিয়েছেন। নিশ্চয়ই তারা ফাসিক। ’ -সূরা হাশর: ১৮

ইসলামি স্কলাররা আত্মসমালোচনার উপকারিতা হিসেবে বলেন-

১. নিজের দোষত্রুটি নিজের সামনে প্রকাশ করার মাধ্যমে মানুষ স্বীয় ভুলত্রুটি সম্পর্কে জানতে পারে। ফলে তার হৃদয় ভালো কাজের দিকে আকৃষ্ট হয় এবং মন্দকাজ থেকে দূরে থাকে।

২. আত্মসমালোচনা দ্বীনের ওপর দৃঢ়তা অর্জনের সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম, যা মানুষকে আল্লাহর দরবারে একনিষ্ঠ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করে।

৩. আত্মসমালোচনার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর নেয়ামত ও অধিকার সম্পর্কে অবগত হয়। সে যখন আল্লাহর নেয়ামত ও তার অবস্থান সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করে, তখন আল্লাহর নেয়ামতের শোকরিয়া আদায়ে উদ্বুদ্ধ হয়।

৪. আত্মসমালোচনার মাধ্যমে মানুষের মাঝে পরকালীন জবাবদিহিতার উপলব্ধি সৃষ্টি হয়।

৫. আত্মসমালোচনা জীবনের লক্ষ্যকে সব সময় সজীব করে রাখে। এর মাধ্যমে মানুষ অনুভব করে পারে, এই পৃথিবীকে তাদের অনর্থক সৃষ্টি করা হয়নি। পার্থিব জীবন শুধু খাওয়া-দাওয়া, হাসি-ঠাট্টার নয়, এ জীবনের পরবর্তী যে অনন্ত এক জীবন, তার জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকতে হবে। আর মানুষকে আত্মসমালোচনা এটাই স্মরণ করিয়ে দেয়।

৬. আত্মসমালোচনার ফলে কোনো পাপ দ্বিতীয়বার করতে গেলে, মনে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। ফলে পাপের কাজ থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ হয়ে যায়।

আত্মসমালোচনা দুইভাবে করা যায়- ১. কোনো কাজ শুরু করার আগে করা অর্থাৎ কোনো কাজের সংকল্প করার আগেই সে কাজ সম্পর্কে চিন্তা করা- কাজটি ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবনের জন্য উত্তম, না ক্ষতিকর? কাজটি কি হারাম, না হালাল? কাজটিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি নিহিত রয়েছে, না অসন্তুষ্টি? কাজটি উত্তম হলে আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রেখে কাজ শুরু করা। আর কাজটি খারাপ হলে তা থেকে বিরত থাকা।

২. আমল শেষ করার পর আত্মসমালোচনা করা।

আত্মসমালোচনা মানুষের পার্থিব জীবনে দায়িত্বশীলতা সৃষ্টি করে, পরকালীন জবাবদিহিতার চিন্তা বৃদ্ধি করে এবং বিবেককে শাণিত করে। সর্বোপরি জীবনের উচ্চতম লক্ষ্যকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে একজন প্রকৃত মানুষ হয়ে গড়ে ওঠার কাজে সর্বদা প্রহরীর মতো দায়িত্ব পালন করে।

আত্মসমালোচনা মূলত অন্যের ত্রুটি ধরার আগে নিজের ত্রুটি ধরার শিক্ষা দেয়। অন্যের নিন্দা করার আগে নিজের মধ্যে বিদ্যমান খারাপ দূর করতে উদ্বুদ্ধ করে। যা মানব জীবনে খুব জরুরি বিষয়। এ জন্য আলেমরা বলে থাকেন, পরের দোষ নয়; আগে নিজের দোষ খুঁজুন- পরকালে শান্তি পাবেন। আল্লাহ আমাদের তওফিক দান করুন। আমিন।

বাংলাদেশ সময়: ২৩২৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।