ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

চারটি বদঅভ্যাস থেকে বেঁচে থাকা জরুরি

মাহমুদা নওরিন, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৬
চারটি বদঅভ্যাস থেকে বেঁচে থাকা জরুরি ছবি: সংগৃহীত

সহিহ বুখারি ও মুসলিমে হজরত আবদুল্লাহ ইবন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘চারটি অভ্যাস এমন যার সবগুলো কারও মধ্যে থাকলে সে নিশ্চিত মুনাফিক, আর যার মধ্যে তার কোনো একটি থাকবে সে যতক্ষণ না তা পরিত্যাগ করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকির একটি অভ্যাসই থাকবে। (অভ্যাস চারটি হচ্ছে এই) যখন তার কাছে আমানত রাখা হয় সে তাতে খিয়ানত করে, যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন কোনো প্রতিশ্রুতি দেয় তা ভঙ্গ করে এবং যখন কারও সঙ্গে ঝগড়া করে গালাগালি করে।

এ হাদিসে মহানবী (সা.) চারটি অপগুণকে মুনাফিকির আলামত সাব্যস্ত করেছেন। বোঝানো উদ্দেশ্য, যে ব্যক্তি নিজেকে মুসলিম বলে দাবি করে তার মধ্যে এ চারটি গুণ থাকতে পারে না, থাকা উচিত নয়। কাজেই কারও মধ্যে এগুলো পাওয়া গেলে দৃশ্যমান ও আইনের দৃষ্টিতে সে মুসলিম হলেও কাজে-কর্মে মুনাফিক।

উল্লেখিত চার অভ্যাসের প্রথমটি হলো- আমানতের খিয়ানত করা। অর্থ-সম্পদ আত্মসা‍ৎ করা খিয়ানতের সুস্পষ্ট ও নিকৃষ্টতম রূপ। কিন্তু ইসলামি শিক্ষায় খিয়ানত কেবল এটুকুর মাঝে সীমাবদ্ধ নয়। বরং খিয়ানতের আরও বিভিন্ন রূপ আছে। যেমন- কারও গোপন কথা ফাঁস করে দেওয়া। অন্যের গোপন কথাও আমানত। শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া তা প্রকাশ করা জায়েজ নয়। এমনকি কোনো মিটিং বা বৈঠকে যেসব কথা হয়, উপস্থিত লোকদের জন্য তা আমানতস্বরূপ। বিনা অনুমতিতে তা অন্যের কাছে প্রকাশ খিয়ানত বলে গণ্য হবে। সুতরাং কোনো মুসলিমের জন্য এটা জায়েজ নয়।

এভাবে কেউ কোথাও চাকরি করলে ডিউটির সময়টা তার কাছে আমানত। কাজেই ডিউটির সেই সময়টা নিজ দায়িত্ব পালনে না লাগিয়ে ব্যক্তিগত কাজে খরচ করলে সে খিয়ানতকারী বলে গণ্য হবে। এভাবে খিয়ানতের অভ্যাস গড়ে তোলা কোনো মুসলিমের কাজ হতে পারে না। এটা কেবল মুনাফিক ব্যক্তিই করতে পারে।

হাদিসে মুনাফিকের দ্বিতীয় আলামত বলা হয়েছে মিথ্যা বলা। কোরআন ও হাদিসের পাতায়-পাতায় রয়েছে মিথ্যাকথনের নিন্দা। ঈমান ও মিথ্যাকথন চরমভাবে পরস্পরবিরোধী। হাদিসে বলা হয়েছে, ঈমানের সঙ্গে মিথ্যা বলার স্বভাব মিলিত হতে পারে না।

মিথ্যার কুফল অনেক বিস্তৃত। ব্যক্তি, পরিবার, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী ছাপিয়ে গোটা সমাজ ও জাতিকে তা ক্ষতিগ্রস্ত করে। মিথ্যা এমনই গুরুতর জিনিস, ইসলাম যাকে হাসি-তামাশাচ্ছলেও অনুমোদন করে না।

মুনাফিকির তৃতীয় আলামত বলা হয়েছে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা। প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা মুসলিম ও মুমিনের অনন্য বৈশিষ্ট্য। মুমিন একবার কাউকে কোনো প্রতিশ্রুতি দিলে তা রক্ষার জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা করবে। যত বড় ক্ষতিই হোক না কেন, প্রতিশ্রুতি রক্ষার খাতিরে সে তা মেনে নিতে অকুণ্ঠ থাকবে। এটাই ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শ।

মুনাফিকির চতুর্থ আলামত বলা হয়েছে ঝগড়া-বিবাদে গালাগালি করা। মূলত মুনাফিক ব্যক্তিই অন্যের সঙ্গে কলহ-বিবাদে লিপ্ত হলে মুখ খারাপ করে এবং অবলীলায় অশ্রাব্য গালমন্দ শুরু করে দেয়।

যাপিত জীবনে কত রকম মানুষের সঙ্গে মেলামেশা ও লেনদেন ইত্যাদি করতে হয়। তাতে মতের অমিলও দেখা দেয় এবং বহু ক্ষেত্রেই তা কলহ-বিবাদ পর্যন্ত গড়ায়। কিন্তু সত্যিকারের মুমিন কোনো অবস্থাতেই মুখ খারাপ করতে পারে না। খিস্তিখেউড় অন্তত তার মুখে শোভা পায় না। সর্বদা সে নিজ ভদ্রতা, নৈতিকতা ও মূল্যবোধের ব্যাপারে সচেতন থাকবে। এসব তার মহাধন। কোনো অবস্থাতেই সে এ ধন হাতছাড়া করবে না।

দৃষ্টিভঙ্গিগত মতভেদ হোক, চিন্তা-চেতনার অমিল হোক, রাজনৈতিক-ব্যবসায়িক বা খানদানি বিরোধ হোক-কোনো অবস্থাতেই একজন মুসলিম তার মুখ দিয়ে কুবাক্য উচ্চারণ করবে না, করতে পারে না। হাদিসের দৃষ্টিতে এরূপ করাটা মুনাফিকের আলামত। এটা কর্মগত মুনাফিকি। আল্লাহতায়ালা প্রত্যেককে মুনাফিকির অভ্যাসগুলো থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।