ঢাকা, সোমবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

ইসলামে হিজড়ার বিধান ও অধিকার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৬, ২০১৬
ইসলামে হিজড়ার বিধান ও অধিকার ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম-ফাইল ফটো

হিজড়া সম্প্রদায়ও আল্লাহতায়ালার সৃষ্টি। তারাও আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেরা জীব।

প্রতিবন্ধী মানুষের যেমন শারীরিক ত্রুটি থাকে, এটি তেমন একটি ত্রুটি। তবে এ ত্রুটির কারণে তাদের মনুষ্য সমাজ থেকে বের করে দেওয়া যাবে না। বরং অন্যান্য প্রতিবন্ধীদের মতোই তারা আরও বেশি স্নেহ, মমতা ও ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার রাখেন।  

তাদের প্রতি ঘৃণা নয়- ভালোবাসা ও স্নেহ দরকার। তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা, খারাপ মন্তব্য করা মারাত্মক গোনাহের কাজ। এমনিতেই যেকোনো মুসলমানকে গালি দেওয়া পাপ- তেমনি তাদেরও গালি দেওয়া পাপ। কোনো মুসলমানকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা যেমন পাপ- তাদেরকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা এর চেয়ে কম পাপ নয় বরং আরও বেশি পাপ। কারণ তাদের এ দুর্বলতার কারণে তাদের ঠাট্টা করার মানে হলো- আল্লাহতায়ালার সৃষ্টিকে ঠাট্টা করা। আল্লাহর সৃষ্টিকে হাসি-তামাশার বিষয় বানানো। এটা খুব গর্হিত কাজ।

মৌলিকভাবে ইসলাম মানুষকে পুরুষ ও নারীকে হিসেবে গণ্য করে থাকে। যারা উভলিঙ্গ হয়ে থাকেন তারাও মূলতঃ হয় নারী কিংবা পুরুষ। তাই তাদের ব্যাপারে আলাদা কোনো বিধান আরোপ করা হয়নি। যে উভলিঙ্গের অধিকারী ব্যক্তির মাঝে যেটি বেশি থাকবে, তিনি সেই প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত হবেন।

পৃথিবীতে মোট চার ধরনের হিজড়া দেখা যায়। ক. পুরুষ (তবে নারীর বেশে চলে) তাদের আকুয়া বলা হয়। এরা মেয়েদের বিয়ে করতে পারে। খ. নারী (বেশেও তাই, তবে দাড়ি-মোঁচ আছে)। তাদের জেনানা বলা হয়। তারা ইচ্ছা করলে পুরুষের কাছে বিয়ে বসতে পারে। গ. লিঙ্গহীন (বেশে যাই হোক)। আরবিতে তাদের ‘খুনসায়ে মুশকিলা’ বলা হয়। এই শ্রেণির হিজড়া আসলে কারা, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন বিজ্ঞ আদালত ও অভিজ্ঞ চিকিৎসক। ঘ. কৃত্তিমভাবে যৌন ক্ষমতা নষ্ট করে বানানো হিজড়া। তাদের খোঁজা বলা হয়। যৌন অক্ষমতার দরুণ তারা বিয়ে করতে পারে না বা বসতেও পারে না।  

উল্লেখিত চার ধরনের হিজড়ার মাঝে আকুয়া এবং জেনানাদের লিঙ্গ নির্ধারণ দৃশ্যতঃ সম্ভব হলেও এদের অনেকের লিঙ্গ কাজের বেলায় অক্ষম কিংবা প্রজননে ব্যর্থ। সেক্ষেত্রে তাদের জন্য বিয়ে হারাম।  

হিজড়া কারা কিংবা কীভাবে নিধারিত হবে তাদের শ্রেণি এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আলী (রা.) হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে প্রসূত বাচ্চা পুরুষ-নারী নির্ধারণ করতে না পারলে তার বিধান কি- জিজ্ঞাসা করলেন। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) জবাব দিলেন, সে মিরাস পাবে যেভাবে প্রস্রাব করে। -সুনানে বায়হাকি কুবরা, হাদিস: ১২৯৪, কানজুল উম্মাল, হাদিস: ৩০৪০৩, মুসান্নাফ আবদুর রাজ্জাক, হাদিস: ১৯২০৪

হিজড়াদের নারী-পুরুষের যে কোনো একটি শ্রেণিতে ফেলতে হবে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এ ব্যাপারে একটি মূলনীতি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সেটা হলো- দেখতে হবে হিজড়ার প্রস্রাব করার অঙ্গটি কেমন? সে কি পুরুষদের গোপনাঙ্গ দিয়ে প্রস্রাব করে? না নারীদের মত গোপনাঙ্গ দিয়ে প্রস্রাব করে? গোপনাঙ্গ যাদের মতো হবে হুকুম তাদের মতোই হবে। অর্থাৎ গোপনাঙ্গ যদি পুরুষালী হয়, তাহলে পুরুষ। আর যদি নারীর মতো হয়, তাহলে সে নারী। আর যদি কোনোটিই বুঝা না যায়। তাহলে তাকে নারী হিসেবে গণ্য করা হবে। সে হিসেবেই তার ওপর শরিয়তের বিধান আরোপ করা হবে। এ হাদিসে স্পষ্ট বলা হয়েছে, যার যৌনাঙ্গ যেমন সে তেমন মিরাস পাবে।  

উভয় লিঙ্গবিশিষ্ট হিজড়াদের লিঙ্গ নির্ধারণে কিছু পদ্ধতি

১. মূত্র যে লিঙ্গ দিয়ে বের হবে সে সেই লিঙ্গের। যদি মূত্র উভয় লিঙ্গ দিয়েই বের হয় তবে নিয়ম ভিন্ন। যদি মূত্র একসঙ্গে উভয় লিঙ্গ হতে বের হওয়া বন্ধ হয়- তবে যেটা দিয়ে প্রথম বের হয়েছে সে ওই লিঙ্গভুক্ত হবে। যদি উভয় লিঙ্গ হতে একসঙ্গে বের হওয়া শুরু হয় তবে যেটাতে অধিক সময় ধরে মূত্র বের হবে সে ওই লিঙ্গভুক্ত। যদি না বুঝা যায় তবে সে উভলিঙ্গই থাকবে।

২. বয়ঃসন্ধির সময় যদি তার বীর্যপাত নিয়মিত হয় তবে সে পুরুষ। আর ঋতুঃস্রাব নিয়মিত হলে সে মেয়ে।  

৩. যদি পুরুষের দিকে আকৃষ্ট হয় তবে তাকে নারী ধরা হবে। যদি নারীর দিকে আকৃষ্ট হয় তবে পুরুষ ধরা হবে। কিন্তু উভয়ের দিকে আকর্ষণ বা কোনো আকর্ষণ না থাকলে সে উভলিঙ্গই থাকবে।

৪. শারীরিক বৈশিষ্ট্য যেমন- দাড়ি হওয়া, স্তন হওয়া ইত্যাদি লিঙ্গ নির্ধারণে সহায়ক হবে।

হিজড়াদের অধিকার প্রদানে ইসলাম

১. অন্য সন্তানের মতোই সে সম্পত্তিতে প্রাপ্য অধিকার পাবে।
২. তারও জানাযা এবং দাফন হবে।
৩. নামাজ, রোজা ও পর্দা করবে লিঙ্গ অনুযায়ী।
৪. তাদের ঘৃণা করা যাবে না।  

চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের অভিসত হলো, শিশুকালে সচেতন থাকলে অনেক ক্ষেত্রে হিজড়া সমস্যার আরোগ্য সম্ভব। তবে আমাদের দেশে এ বিষয়ে সচেতনতা না থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না। উল্টো হিজড়া সন্তানবে অভিশাপ মনে করা হয়। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।  

হিজড়াদের ঘৃণা না করে তাদের সামাজিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। ইসলাম হিজড়াদের সম্মান দিয়েছে। ইসলাম তাদের আলাদা চোখে দেখেনি। তারা নারী-পুরুষের মতো সকল সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় সুবিধা ভোগ করবে। তাদের ইবাদতও হবে সাধারণ ইবাদতের মতো। এটাই ইসলামের নির্দেশ।

লেখক: ইন্টার্ন চিকিৎসক, গণসাস্থ্য মেডিকেল কলেজ, সাভার, ঢাকা

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।