ঢাকা, সোমবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

নিউজিল্যান্ডে মুসলিমরা সংখ্যায় কম হলেও ধর্ম চর্চায় এগিয়ে

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৬
নিউজিল্যান্ডে মুসলিমরা সংখ্যায় কম হলেও ধর্ম চর্চায় এগিয়ে ক্যান্টারবেরি মসজিদ, ক্রাইস্টচার্চ, নিউজিল্যান্ড

নিউজিল্যান্ডে বিভিন্ন জাতির বসবাস। ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার পর ইউরোপ, এশিয়া, মিডলইস্ট ও আফ্রিকাসহ নানা দেশের বহু মানুষ এখানে এসে বসতি স্থাপন করে। দেশটিতে ইসলাম ধর্মের বিকাশ শুরু হয় ১৮৭০ সালে। 

নিউজিল্যান্ডে বিভিন্ন জাতির বসবাস। ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার পর ইউরোপ, এশিয়া, মিডলইস্ট ও আফ্রিকাসহ নানা দেশের বহু মানুষ এখানে এসে বসতি স্থাপন করে।

দেশটিতে ইসলাম ধর্মের বিকাশ শুরু হয় ১৮৭০ সালে।  

নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের দেশটিতে ইসলামের প্রচার ও প্রসার হয় মূলত অভিবাসীদের মাধ্যমে। সে সময় স্বর্ণ অনুসন্ধানকারী পেশার ১৫ জন চীনা মুসলমান জীবিকার অন্বেষণে পাড়ি জমিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডে। ওটাগোর ডানস্টানের স্বর্ণক্ষেত্রে তারা কাজ করতেন।  

পরে ১৯০০ সালের শুরুর দিকে গুজরাটের তিনটি মুসলিম পরিবার সেখানে বসতি স্থাপন করে। তারপর ১৯৬০ সাল পর্যন্ত সময়ে পূর্ব ইউরোপ এবং ভারত থেকে আসা আরও কিছু অভিবাসী মুসলমান সেখানে বসবাস শুরু করে স্থায়ীভাবে।

নিউজিল্যান্ড সরকারের হিসাবমতে, ১৯৫০ সালে নিউজিল্যান্ডে মুসলমান অধিবাসী ছিল মাত্র ১৫০ জন। ১৯৬০ সালে এ সংখ্যা উন্নীত হয় ২৬০-এ। অভিবাসী মুসলমানদের বড় আকারে বসতি স্থাপন শুরু হয় ১৯৭০ সালে। সে সময় ফিজি থেকে আসা ভারতীয় বংশোদ্ভূত মুসলমানরা নিউজিল্যান্ডে বসতি স্থাপন শুরু করে। তাদের অনুসরণ করে ১৯৯০ সালের মধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত অনেক দেশের উদ্বাস্তু মুসলমানরা পাড়ি জমায় নিউজিল্যান্ডে। এরপর থেকেই নিউজিল্যান্ডে মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকে।  

বর্তমানে নিউজিল্যান্ডে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় লাখের কাছাকাছি। যাদের মাঝে অনেক যোগ্য ও অভিজ্ঞ আলেমও রয়েছেন। যাদের অনেকেই ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করে এ দেশে এসেছেন। তারা নিউজিল্যান্ডে ইসলাম প্রচার ও সেখানকার মুসলিমদের ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করার পেছনে দিন রাত শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন।
মসজিদ আল জামে, নিউজিল্যান্ড
নিউজিল্যান্ডের বিভিন্ন অঞ্চলে মুসলিম বসতি ঘেঁষে গড়ে উঠেছে মসজিদ। ব্যবস্থা করা হয়েছে শিশুদের ধর্মীয় প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা, হেফজখানা ইত্যাদি। কোনো কোনো মসজিদের উদ্যোগে সেখানে প্রতিষ্ঠা করেছে সানডে স্কুল। যেখানে ছুটির দিন বাচ্চাদের দিনব্যাপী ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া হয়। এ শিক্ষাকে আরও উন্নত করার লক্ষ্যে সেখানে দিন দিন গড়ে উঠছে আরো অনেক আধুনিক মাদ্রাসা।  

‘ফেডারেশন অব ইসলামিক অ্যাসোসিয়েশন অব নিউজিল্যান্ড’ (FIANZ) নামে মুসলমানদের একটি সংগঠন রয়েছে। এটি নিউজিল্যান্ড সরকারের নিবন্ধিত একটি সমাজসেবামূলক সংগঠন। ১৯৭৯ সালে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই তারা ইসলাম চর্চা, ইসলামী শিক্ষা, সামাজিক সম্পর্ক উন্নয়ন ছাড়াও নানা ধরনের সমাজসেবামূলক কাজ করে আসছে।  

নিউজিল্যান্ডের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে ইসলামের বাণী পৌঁছানো সংগঠনটির অন্যতম লক্ষ্য। এছাড়া সংগঠনটি স্থানীয় একটি ইনস্ট্রুমেন্ট কোম্পানির সঙ্গে এক হয়ে মুসলিমদের সুদমুক্ত উপায়ে বাড়ি করার পন্থা উদ্ঘাটনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।  

নিউজিল্যান্ডের মুসলিম জনগোষ্ঠী নিউজিল্যান্ডবাসীর মধ্যে ইসলামের বিশ্বাস, মূল্যবোধ, রীতিনীতি প্রভৃতি সম্পর্কে মাঝে-মধ্যেই ইতিবাচক প্রচারণা চালান। ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেওয়ার জন্য অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হয়। এ জন্য আন্তঃধর্মীয় আলোচনা, ইসলামি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মেলা, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিশেষ ডিনার এবং ইসলামি শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।  

ফেডারেশন অব ইসলামিক অ্যাসোসিয়েশন অব নিউজিল্যান্ডের উদ্যোগে নিউজিল্যান্ডে ইসলাম সম্পর্কিত ভুল ধারণা নিরসনে উন্মুক্ত মসজিদ নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এ নীতির ফলে হ্যামিলটনে ইসলামের ব্যাপারে ভুল ধারণা চিরদিনের জন্য পাল্টে গেছে। মুসলিমরা সংখ্যায় কম হলেও নিউজিল্যান্ডে বেশ আন্তরিকতা ও ধর্মভীরুতার সঙ্গে ইসলাম প্রচার-প্রসারের কাজ করে যাচ্ছে। এই ইতিবাচক পরিবর্তনটা অনুসরণীয় একটি দিক।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।