ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

নবী করিম সা. উম্মতকে ভালোবাসাও শিখিয়েছেন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫২ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০১৭
নবী করিম সা. উম্মতকে ভালোবাসাও শিখিয়েছেন তোমরা পরস্পরকে উপহার দাও, তোমাদের মাঝে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে

বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের শিখিয়েছেন সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য, ভালোবাসা ও সমীহ। পুরো জীবন নবী করিম (সা.) বিভিন্ন বক্তব্যে মানুষ হিসেবে তো বটেই; মুমিন জীবনেও ভালোবাসার গুরুত্ব, ধরণ ও বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন। তার কয়েকটি এখানে উল্লেখ করা হলো-

ক. তিনি ভালোবাসার গুরুত্ব বর্ণনা করে বলেছেন- কারও মধ্যে ভালোবাসা না থাকলে সে মুমিনই হতে পারবে না। এ প্রসঙ্গে তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য তা সে ভালোবাসবে যা নিজের জন্য ভালোবাসে।

’ –সহিহ বোখারি: হাদিস নং- ১৩

খ. নবী করিম (সা.) আরও শিখিয়েছেন যে, কাউকে ভালোবাসলে (কোনো তারিখের জন্য) বিলম্ব না করে তাৎক্ষণিক তাকে ভালোবাসার কথা জানিয়ে দিতে হবে। এ বিষয়ে ইরশাদ হয়েছে, ‘কেউ যদি তার মুসলিম ভাইকে ভালোবাসে সে যেন তাকে জানিয়ে দেয় যে, সে তাকে ভালোবাসে। ’ –তাবরানি

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, কাউকে ভালোবাসলে তার বাড়িতে গিয়ে ভালোবাসার কথা জানিয়ে দিতে বলেছেন।  

গ. হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ভালোবাসা অর্জনের অব্যর্থ উপায়ও বাতলে দিয়েছেন। বলেছেন, ‘তোমরা মুমিন হতে পারবে না যাবৎ না একে অন্যকে ভালোবাসো। আমি কি তোমাদেরকে বলে দেবো না- কি করলে তোমাদের মাঝে একে অন্যের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হবে? বেশি করে সালামের প্রচলন ঘটাও অর্থাৎ পরস্পরকে সালাম প্রচলন দাও। ’ –সহিহ মুসলিম: ২০৩

ভালোবাসা অর্জনের জন্য নবী করিম (সা.) আরও শিখিয়েছেন- উপহার বিনিময় ভালোবাসার সৃষ্টি করে; তা যে বর্ণেরই হোক বা যে সময়েই হোক। তিনি বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পরকে উপহার দাও, তোমাদের মাঝে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে। ’ বায়াহকি
ওই ব্যক্তি লাঞ্ছিত হবে- যে স্রষ্টার চাইতে স্রষ্টার সৃষ্টিকে বেশি ভালোবাসে
ঘ. রাসূলুল্লাহ (সা.) ভালোবাসার বিনিময়ে সুসংবাদ দিয়েছেন। বলেছেন, কেউ যদি আল্লাহর জন্য কারও প্রতি ভালোবাসা লালন করে তবে স্বয়ং আল্লাহতায়ালা তাকে ভালোবাসবেন। ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহতায়ালা (হাদিসে কুদসিতে) বলেছেন, ‘আমার ভালোবাসা অনিবার্য হয়ে যায় ওই ব্যক্তিদ্বয়ের জন্য যারা একে অন্যকে ভালোবাসে (কোনো বিশেষ ধান্ধা থেকে নয়) আল্লাহর জন্য। -মুসনাদে আহমাদ: ২২০৮৩

নবী করিম (সা.) আরও সুসংবাদ দিয়েছেন, ভালোবাসা যদি যথাযথ হয় তাহলে তার পুরস্কার অনেক বড়! তিনি বলেছেন, ‘মানুষ তার সঙ্গেই কেয়ামতে উঠবে যাকে সে ভালোবাসে। ’ –সহিহ বোখারি: ৬১৬৯

. নবী মুহাম্মদ (সা.) ভালোবাসার ব্যপারে সতর্ক করেছেন। বলেছেন, সব ভালোবাসারই পরিণতি শত্রুতা। তবে একটি ভালোবাসা শুধু ব্যতিক্রম। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘বন্ধুগণ সেদিন (কেয়ামতের দিন) একে অন্যের শত্রু হবে। তবে মুত্তাকি বন্ধুরা ব্যতিক্রম থাকবে। ’ -সূরা যুখরুফ: ৬৭

চ. হজরত রাসূলুল্লাহ ভালোবাসার মাত্রাও শিক্ষা দিয়েছেন। বলেছেন, ‘তুমি তোমার বন্ধুকে পরিমিত ভালোবাসো। কেননা হতে পারে একদিন তোমার শত্রু হয়ে যাবে। আর তোমার শত্রুর প্রতিও পরিমিত পরিমাণে শত্রুতা করো। কেননা সেও একদিন তোমর বন্ধু হয়ে যেতে পারে। -তিরমিজি: হাদিস নং ২১২৮

ছ. নবী করিম (সা.) আরও জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তি লাঞ্ছিত হবে- যে স্রষ্টার চাইতে স্রষ্টার সৃষ্টিকে বেশি ভালোবাসে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর কোনো লোক এমনও রয়েছে যারা অন্যান্যকে আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করে এবং তাদের প্রতি তেমনি ভালোবাসা পোষণ করে, যেমন আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা হয়ে থাকে। কিন্তু যারা আল্লাহর প্রতি ঈমানদার তাদের ভালোবাসা ওদের তুলনায় বহুগুণ বেশি। ’ -সূরা বাকারা: ১৬৫

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও জানিয়েছেন, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাউকে ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্যই বিদ্বেষ পোষণ করা অতি উত্তম কাজ। ’ -মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা

লেখক: ইসলাম প্রচারক, দাম্মাম ইসলামিক সেন্টার, সৌদি আরব

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫২ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।