ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

ক্ষমার রাত শবে বরাতেও যারা ক্ষমা পাবে না

মুফতি মাহফূযুল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩১ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৭
ক্ষমার রাত শবে বরাতেও যারা ক্ষমা পাবে না অন্তরকে শিরক ও বিদ্বেষ থেকে নির্মল করুন, এর পর শবে বরাতের ইবাদত শুরু করুন

শবে বরাতের ফজিলত ও ইবাদত সুপ্রমাণিত। ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে এ রাত জাগরণ করা উচিৎ। তবে ইবাদতের বিশেষ কোনো ধরণ ও বিশেষ কোনো পরিমাণ নির্ধারিত নেই।

নফল ইবাদতসমূহের মধ্যে প্রধান ইবাদত হলো- নামাজ। তাই এ রাতে ইচ্ছেমতো যে কোনো সূরা দিয়ে নামাজ আদায়া করা যায়।

বিশেষ কোনো সূরা দিয়ে নামাজ পড়ার বিশেষ কোনো নিয়ম নেই। রাকাতের সংখ্যাও নির্দিষ্ট নেই। ইচ্ছে হলে, শরীর সায় দিলে অনেক দীর্ঘ কিয়াম, রুকু ও সিজদা দ্বারা মাত্র দু’রাকাত নামাজে সারা রাত কাটাতে পারেন। আবার ইচ্ছে হলে, ছোট ছোট কিয়াম, রুকু ও সিজদা দিয়ে অনেক রাকাত নামাজ পড়তে পারেন। তবে এক নিয়তে এবং এক সালামে দুই রাকাতের বেশি না পড়াই শ্রেয়।

শবে বরাতের নামাজের আলাদা কোনো নিয়ত নেই। ‘আমি নামাজ পড়ছি’- তাকবিরে তাহরিমার পূর্বে এতটুকু খেয়াল মনে থাকলেই হলো।  

এ ছাড়া ইচ্ছে হলে আপনি কোরআন তেলাওয়াতও করতে পারেন। ইচ্ছে হলে যে কোনো জিকির করতে পারেন।
দোয়া ও তওবাতে যতো বেশি সময় সম্ভব ব্যয় করবেন।

বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে মনে রাখতে হবে, এ রাত ইবাদতের রাত। এ রাত উৎসবের রাত নয়। তাই উৎসবের আবহ ও আমেজ সৃষ্টি করা চরম বোকামি ও নির্বুদ্ধিতা। ইসলাম এটা সমর্থন করে না।  

শবে বরাত সহিহ হাদিস দ্বারা সুপ্রমাণিত হলেও শবে বরাত পালনের নামে কোনো বেদআতি কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়া যাবে না। আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে শবে বরাতে বেশ কিছু বেদআত প্রচলিত আছে, সেগুলো বর্জন করা উত্তম। তন্মধ্যে কিছু হলো-

১. হালুয়া-রুটি তৈরি করাকে জরুরি মনে করা, পাড়াপড়শির মাঝে তা বিলি করা, নিজেরা খাওয়া ও অন্যদের দাওয়াত করে খাওয়ানো।
২. মসজিদ, মাজার, বাজার, বাসভবন ইত্যাদিতে আলোকসজ্জা করা।  
৩. মসজিদে তবারকের আয়োজন করা, বিরানি পাকানো, জিলাপি-বাতাসা ইত্যাদি বিতরণ করা।
৪. শবে বরাতের নামাজের জন্য মসজিদকে জরুরি মনে করা। অথচ ঘরেও নফল ইবাদত করা যায়।  
৫. এ রাতের নামাজের জন্য সবাই একত্রিত হওয়াকে আবশ্যক মনে করা।
৬. দলবদ্ধভাবে কবর জিয়ারত করা।  
৭. এ রাতে আতশবাজি করা ও পটকা ফুটানো।

উল্লিখিত কাজগুলো শবে বরাতের নামে করা সম্পূর্ণ বেদআত। তাই এগুলো বর্জন করতে হবে।

যদিও এ রাত সাধারণ ক্ষমার রাত। এ রাতের ক্ষমা ও মুক্তি অনেক ব্যাপক এবং বিস্তৃত। এর পরও বিশেষ দু’শ্রেণির মানুষ এ রাতেও সাধারণ ক্ষমা ও মুক্তি পাবেন না- বলে ইরশাদ হয়েছে।  

তাই শবে বরাতের ফজিলত লাভের পূর্বশর্ত হলো- এ রাত আসার আগেই নিজেকে বিশেষ দু’টি গুনাহ থেকে নিজেকে পবিত্র করা। একটি হলো- শিরক। অপরটি হলো- বিদ্বেষ।

আজকের সূর্যাস্তের আগেই নিজেকে প্রশ্ন করে দেখুন, আপনি কোনো ধরণের শিরকে লিপ্ত আছেন কিনা? কোনো মুসলমানের প্রতি আপনার অন্তরে বিদ্বেষ আছে কিনা? যদি উত্তর হ্যাঁ হয়ে থাকে, তবে নিজের অন্তরকে শিরক ও বিদ্বেষ থেকে নির্মল করুন, এর পর শবে বরাতের ইবাদত শুরু করুন। আল্লাহ আমাদের তওফিক দান করুন। আমিন।

আরও পড়ুন:
** শবে বরাতে নবী করিম সা. যেসব আমল করেছেন
** শাবান মাসের রোজাকে ভালোবাসা ফজিলতের কাজ
** পবিত্র শবে বরাত: মুক্তির রাত মুক্তির নিশ্চয়তা

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩১ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।