ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

মায়ের সেবা-যত্ন করে পরকালে মুক্তির পথ প্রশস্ত করতে হবে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৫ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৭
মায়ের সেবা-যত্ন করে পরকালে মুক্তির পথ প্রশস্ত করতে হবে মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত

মা দিবসটি মূলত মায়েদের প্রতি সম্মান জানানোর একটি প্রতীকী ব্যবস্থা। বস্তুত মায়ের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা, গভীর মায়া, সীমাহীন মমতা, অকৃত্রিম ভালোবাসা ও যথাযথ দায়িত্বশীলতা প্রদর্শন শুধু একটি বিশেষ দিনের জন্য নয়; বরং তা প্রতিদিনকার বিষয়।

মায়ের প্রতি আনুগত্য, মায়ের সেবা-যত্ন, মায়ের অধিকার পূরণ ও বৃদ্ধাবস্থায় সেবা-যত্ন করা এবং পরকালীন মুক্তির জন্য দোয়া ও মাগফিরাত কামনা করা সবার একান্ত কর্তব্য। আমাদের কোনো আচরণে মা যেন দুঃখকষ্ট না পান।

কারণ, মা সন্তানের জন্য অনেক বড় নেয়ামত। এ নেয়ামতের সদ্ব্যবহার করে সন্তান তার জীবন সুন্দর করতে এবং পরকালে মুক্তির পথ প্রশস্ত করতে পারে।  

একজন নারীর বড় পরিচয় তিনি একজন মা। একটি সুন্দর ও সুখী সমাজ বিনির্মাণে আদর্শ মায়ের ভূমিকা প্রশংসনীয়। একজন আদর্শ মায়ের অভাবে ব্যক্তি, সমাজ ও জাতি বিপন্ন হতে বাধ্য।  

মা হিসেবে ইসলামে একজন নারীর অবস্থান অকল্পনীয়। মায়ের খেদমত ও সেবা করে জান্নাত পাওয়া যায়। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত। ’

মা হিসেবে ইসলাম নারীকে দিয়েছে বর্ণনাতীত মর্যাদা ও সম্মান। ইসলামে বাবার চেয়ে মায়ের মর্যাদা তিনগুণ বেশি। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলের (সা.) দরবারে উপস্থিত হয়ে জানতে চাইলেন, হে আল্লাহর রাসূল সা.! মানুষের মাঝে আমার নিকট থেকে সর্বোত্তম সেবা লাভের অধিকার কার? নবী (সা.) বলেন, তোমার মায়ের। লোকটি পুনরায় জানতে চাইলেন, তারপর কার? তিনি বললেন, তোমার মায়ের। লোকটি পুনরায় জানতে চাইলেন, তার পর কার? তিনি বললেন, তোমার মায়ের। লোকটি আবারও জানতে চাইলেন, তারপর কার? তিনি বললেন, তোমার পিতার। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম

পবিত্র কোরআনে কারিমে মায়ের কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করে মাকে বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভধারণ করেছেন এবং দুই বছর দুগ্ধপান করিয়েছেন। ’ -সূরা লোকমান : ১৪

অন্যত্র আরও বলা হয়েছে, ‘তার জননী তাকে কষ্ট সহকারে গর্ভধারণ করেছেন এবং কষ্ট সহকারে প্রসব করেছেন। তাকে গর্ভে ধারণ করতে ও স্তন্য ছাড়তে সময় লেগেছে ত্রিশ মাস। ’ -সূরা আহকাফ : ১৫

বর্ণিত আয়াত দুটিতে মায়ের কষ্টের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। নয় মাস ধরে গর্ভে ধারণ, অপরিসীম কষ্টের সঙ্গে সন্তান প্রসবকরণ ও বুকের দুধ খাওয়ানোতে ত্রিশ মাস কাটানো এ ধরনের কষ্টের বদলা দেওয়া সন্তানের পক্ষে অসম্ভব।  
শুধু একটি বিশেষ দিনে পিতা-মাতাকে স্মরণ করে দায়িত্ব শেষ মনে করলে চলবে না।  মাকে সম্মান জানাতে হবে আজীবন, সারাক্ষণ
কোনো ব্যক্তি মাকে পিঠে বহন করে হজ সম্পাদন করলেও তার বদলা পরিশোধ হবে না। হাদিসে এসেছে, জনৈক ব্যক্তি রাসূলের (সা.) দরবারে হাজির হয়ে অভিযোগ করল যে, তার মা বদমেজাজের। রাসূল (সা.) বললেন, নয় মাস পর্যন্ত অব্যাহতভাবে যখন তিনি পেটে ধারণ করে ঘুরছেন তখন তো তিনি বদমেজাজের ছিলেন না। লোকটি বলল, হুজুর আমি সত্যই বলছি, তিনি খারাপ মেজাজের। হুজুর (সা.) বললেন, তোমার জন্য যখন তিনি রাতের পর রাত জাগ্রত থেকেছেন এবং তোমাকে দুধপান করিয়েছেন, তখন তিনি তো বদমেজাজের ছিলেন না। সেই ব্যক্তি বলল, আমি আমার মায়ের প্রতিদান দিয়ে ফেলেছি। রাসূল (সা.) বললেন, সত্যই কি তার প্রতিদান দিয়ে ফেলেছ? জবাবে লোকটি বলল, আমি আমার মাকে কাঁধে চড়িয়ে হজ করিয়েছি। তখন রাসূল (সা.) এবার সিদ্ধান্তকারী রায় দিয়ে বললেন, তুমি কি তার সে কষ্টের বদলা বা প্রতিদান দিতে পার যা তোমার ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় স্বীকার করেছেন? অর্থাৎ মাকে পিঠে করে হজ সম্পাদন করালেও ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময়ে তার যে কষ্ট হয়েছে সেটার ন্যূনতম বদলা হবে না।

হাদিস থেকে আরও জানা যায়, নামাজ চালিয়ে যাওয়া থেকে মায়ের ডাকে সাড়া দেওয়া উত্তম। ইসলাম মা হিসেবে নারীকে যে সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছে দুনিয়ার অপর কোনো মর্যাদার সঙ্গে তার তুলনা চলে না।

মায়ের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় নবী করিম (সা.) যে ভূমিকা পালন করেছেন, তাও বিশ্বের ইতিহাসে অমর হয়ে আছে। তিনি ছিলেন কোমল হৃদয়ের দয়াপ্রবণ মানুষ। তিনি আপন মায়ের স্নেহ-মমতার সুযোগ না পেলেও দুধ-মা হালিমার স্নেহ-মমতা ভোলেননি।  

নবী করিমের (সা.) অন্তরের মণিকোঠায় ছিল মা হালিমার স্থান। তাই ৪০ বছরের বেশি বয়সেও তাকে মা মা বলে ডাকতে শোনা যেত। নিজের গায়ের চাদরটি খুলে বিছিয়ে তার বসার স্থান করে দিতে দেখা যেত।

ইসলাম মাকে যথাযথ মর্যাদা ও মূল্যায়ন করেছে। তাই শুধু একটি বিশেষ দিনে পিতা-মাতাকে স্মরণ করে দায়িত্ব শেষ মনে করলে চলবে না। মাকে সম্মান জানাতে হবে আজীবন, সারাক্ষণ। এবারের মা দিবসে এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৬ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।