ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

মসজিদে নয়, খোলামাঠে হোক ঈদের জামাত

মুফতি মাহফূযুল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫২ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১৭
মসজিদে নয়, খোলামাঠে হোক ঈদের জামাত মসজিদে নয়, খোলামাঠে হোক ঈদের জামাত

ঈদের নামাজ ইসলামের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান। প্রকাশ্য স্থানে, প্রকাশ্যভাবে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ সম্মিলিত হয়ে সুমহান আল্লাহর ইবাদত করার, সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার তরে সিজদা নিবেদন করার মনোমুগ্ধকর একটি ব্যবস্থা হলো- ঈদের জামাত।

অনেক ইবাদত পালন করা হয় একান্ত গোপনে। যেমন, তাহাজ্জুদের নামাজ।

আবার পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সম্মিলিতভাবে আদায় করা হলেও তা হয়ে থাকে মসজিদের চার দেয়ালের ভেতরে। হজ যদিও খোলা ময়দানে প্রকাশ্যে আদায় করা হয়, কিন্তু তা সারা পৃথিবীতে মাত্র নির্দিষ্ট কয়েকটি সংরক্ষিত স্থানে। পৃথিবীর আনাচে-কানাচে, শহরে-গ্রামে, প্রতিটি জনপদে প্রকাশ্য স্থানে, প্রকাশ্যভাবে সমবেত হয়ে আল্লাহর গুণগান গাওয়ার মতো দ্বিতীয় আর কোনো ইবাদত নেই।

তাই খোলা আকাশের নিচে উন্মুক্ত ময়দানে সিজদায় লুটিয়ে পড়াই হলো- ঈদের জামাতের প্রধান সৌন্দর্য।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরি দ্বিতীয় বর্ষে ঈদের নামাজের সূচনা করেন। ইন্তেকাল পর্যন্ত প্রায় দশ বছর তিনি ঈদের জামাত পরিচালনা করেছেন ও ইমামতি করেছেন।  

হাদিসের গ্রন্থগুলোতে ঈদের জামাতের পরিচ্ছেদে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঈদের জামাত সম্পৃক্ত অনেকগুলো বর্ণনা বেশ কয়েকজন সাহাবির সূত্রে সুস্পষ্টভাবেই বর্ণিত হয়েছে।

ওই সব বর্ণনাতে দেখা যায়, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে সঙ্গে নিয়ে খোলা ময়দানে ঈদের নামাজ পড়েছেন। দশ বছরের মাদানি জীবনে মাত্র একবারের ঘটনা দু’তিনটি হাদিসে পাওয়া যায়, বৃষ্টির কারণে তিনি মসজিদে ঈদের নামাজ পড়েছেন। বৃষ্টি মুক্ত স্বাভাবিক আবহাওয়ায় তিনি মসজিদে ঈদের নামাজ পড়েছেন- এ মর্মে একটি বর্ণনাও কোনো হাদিস গ্রন্থে নেই।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা করেছেন এবং যেভাবে করেছেন সেটাই আমাদের জন্য অনুকরণীয়। সেটাই আমাদের জন্য বিশুদ্ধ কর্মপন্থা। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কৃত কাজটি তার মতো করে করার সর্বাত্মক চেষ্টা করাই ঈমানের দাবি, মুমিন জীবনের বৈশিষ্ট্য। এক্ষেত্রে অজুহাত দাঁড় করানো নয় বরং অজুহাত ভাঙাটাই ঈমানের লক্ষণ।

আমাদের দেশের রাজধানী থেকে মফস্বল পর্যন্ত দেখা যায়, মসজিদে মসজিদে ঈদের জামাতের আয়োজন করাটা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহরের পাড়ায় পাড়ায় মসজিদে ঈদের জামাতের আয়োজন করা হয়। এভাবে ঈদের নামাজ হবে কিনা- সেটা ভিন্ন প্রশ্ন।  
মসজিদে নয়, খোলামাঠে হোক ঈদের জামাত
আমাদের আলোচনা হলো, এভাবে ঈদের জামাতের আয়োজন করাটা কি রাসূল ও সাহাবাদের রেখে যাওয়া সুন্নতসম্মত হচ্ছে কিনা?

পূর্ণ মাস রোজা রাখার কষ্ট মেনে নেওয়ার পর খোলা ময়দানে ঈদের নামাজ পড়ার কষ্ট কি আমার সহ্য করতে পারি না? যেখানে রাসূল (সা.) ঈদের নামাজ পড়ার জন্য নিজের প্রিয় মসজিদ ছেড়ে ময়দানে গেছেন, সেখানে আমরা কিভাবে ঈদের নামাজের জন্য মসজিদে যাই?

প্রশ্ন হতে পারে, আমাদের শহরগুলো ঘনবসিতপূর্ণ হওয়ায় ঈদের জামাতের আয়োজন করার মতো খোলা মাঠের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। এ প্রশ্ন বা অজুহাত একেবারেই অবান্তর। শহর সাজানো হয় শহরের অধিবাসীদের প্রয়োজন বিবেচনা করে। যে শহরে মুসলমানদের বাস, সে শহরে পর্যাপ্ত সংখ্যক ঈদগাহ কেন থাকবে না? ঈদের নামাজ পড়া এটাও তো শহরবাসীদের একটি প্রয়োজন। এ প্রয়োজনের প্রতি এত অবহেলা কেন?

অনেক আগে যখন আজকের ঢাকা শহরের পরিধি ছিল অনেক ছোট, তখন হাইকোর্ট চত্বরে ঈদের জামাতের আয়োজন করা হতো। কিন্তু বিগত চল্লিশ বছরে ঢাকা শহরের পরিধি ও লোকসংখ্যা আগরে তুলনায় কয়েক শত গুণ বাড়ার পরেও ঈদগাহর সংখ্যা ও ভূমির পরিমাণ সে অনুপাতে কেন বাড়েনি? খেলার মাঠ বেড়েছে, স্কুল-কলেজ বেড়েছে, সড়ক বেড়েছে, হাসপাতাল বেড়েছে। নাগরিক জীবনে এগুলোর প্রয়োজন আছে। এগুলো বেড়েছে তা ঠিক আছে, কিন্তু পর্যাপ্ত সংখ্যক ঈদগাহ কেন বাড়েনি? এ ব্যাপারে অবহেলা রয়েছে অতীতের সকল নগরপতিদের, নগর পরিকল্পনাকারীদের। তারা কেউ ঈদগাহের বিষয়টি মনে হয় ভেবে দেখেননি।

জাতীয় ঈদগাহর পরিধি চল্লিশ বছর পূর্বে যা ছিল, এখনও ততটুকু কেন? হাইকোর্ট চত্বরে ভূমি বাড়ানোর সুযোগ না থাকলে জাতীয় ঈদগাহ কি স্থানন্তরিত করা যেত না? অথবা এটাকে হাইকোর্ট ঈদগাহ নাম দিয়ে বড় পরিসরের জাতীয় ঈদগাহ কি অন্য কোথাও বানানো যেত না? অবশ্যই যেত। অভাব শুধু পরিকল্পনার ও সদিচ্ছার।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে জাতীয় ঈদগাহর প্রথম জামাত সকাল সাড়ে আটটায় না হয়ে প্রথম জামাত সকাল ছয়টায় দিয়ে এক ঘণ্টা অন্তর অন্তর জামাতের আয়োজন করে জামাতের সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে। ঈদের দিন সকালে পাবলিক পরিবহন সড়কে তেমন একটা থাকে না বললেই চলে। পাড়া মহল্লার কিশোররা ঈদের দিন সড়কেই খেলাধূলা করে। সেক্ষেত্রে প্রধান সড়ক ছেড়ে মহল্লার ভেতরের সড়কেও ঈদের জামাতের আয়োজন করা যেতে পারে। এতেও উন্মুক্ত ময়দানে ঈদের জামাত আদায়ের সুন্নতটি রক্ষা পাবে। শহরের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজের ভেতরে বড় আকারের মাঠ রয়েছে সেগুলোকেও ঈদের জামাতের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

মোট কথা হলো- ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। মসজিদে ঈদের জামাতের আয়োজন না করে খোলা ময়দানে করতে চাইলে বিকল্প অনেক ব্যবস্থাই করা যাবে। প্রয়োজন শুধু সদিচ্ছার। প্রয়োজন শুধু সুন্নতের প্রতি মমতার। বিষয়টি নগরকর্তা থেকে শুরু করে আলেম-উলামা, মসজিদের ইমাম-খতিবদের ভেবে দেখোর আবেদন রইল।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৩ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।